Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Abortion

Abortion Rights: গর্ভপাতের হক কেন জরুরি? নারী শরীরের উপর কেন চাপানো যায় না কোনও আইন

গর্ভপাত আর সাংবিধানিক অধিকার নয় আমেরিকায়। এ পদক্ষেপ ভাবাচ্ছে ভারতকেও। কেন গর্ভপাত জরুরি, তা মনে করাচ্ছেন এ কালের নারীরা।

কোনও ক্ষমতাবান দেশে বড় বদল এলে, প্রভাব পড়ে আশপাশেও। আমেরিকার গর্ভপাত আইন আরও কোনও দেশের আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণ হয়ে উঠবে না তো, চিন্তা এ দেশের নাগরিকদের।

কোনও ক্ষমতাবান দেশে বড় বদল এলে, প্রভাব পড়ে আশপাশেও। আমেরিকার গর্ভপাত আইন আরও কোনও দেশের আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণ হয়ে উঠবে না তো, চিন্তা এ দেশের নাগরিকদের।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ১৩:৫২
Share: Save:

আমেরিকা বহু ক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছে। এ বারও আবার না দেখিয়ে বসে! এখন এমনই চিন্তা নানা দেশের নারীদের।

গর্ভপাতের আইন নিয়ে সেখানে বেশ কিছু বছর ধরেই চলছে নানা কথা। এ বার সে দেশের শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে, গর্ভপাত আর সাংবিধানিক অধিকার নয়। দেশের যে কোনও স্টেট এ নিয়ে নিজের মতো আইন তৈরি করতেই পারে। ঠিক যেমন আফগানিস্তান, ভ্যাটিকান সিটি, পোল্যান্ড, কঙ্গো, মিশরের মতো দেশে গর্ভপাত বিরোধী আইন রয়েছে, এ বার সেখানেও তেমন ঘটতে পারে বলে আতঙ্কিত অনেকেই। শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে আন্দোলন। নাগরিকদের একাংশের ভয়, গর্ভপাত নিষিদ্ধ হতে পারে একাধিক স্টেটে। তা অপরাধ হিসাবেও বিবেচিত হতে পারে কোথাও কোথাও। আর সে কথাই কপালে ভাঁজ ফেলছে এ দেশেও। কারণ গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়া মানে মেয়েদের নিজের শরীরের উপর অধিকার কমে যাওয়াও বটে। নিজের ইচ্ছায় সে সন্তান রাখবে কি না, তা আর তার সিদ্ধান্ত থাকে না। পরিবারেরও থাকে না। চলে যায় সোজা রাষ্ট্রের হাতে। যে ব্যবস্থার চোখে এক নাগরিক (তিনি নারী হোন বা পুরুষ) শুধুই একটি পরিচয়পত্রের নম্বরের দ্বারা চিহ্নিত, তার পক্ষে শরীরের ভালমন্দ কী করে বোঝা সম্ভব, এ প্রশ্নই উঠছে দিকে দিকে।

কোনও ক্ষমতাবান দেশে বড় বদল এলে, তার প্রভাব পড়ে আশপাশেও। আমেরিকার গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন আগামী দিনে আরও কোনও দেশের আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণ হয়ে উঠবে না তো, এটিই মূল চিন্তা এ দেশের নাগরিকদের। মূলত বিষয়টি যখন গর্ভপাত, তখন তা চিন্তা বাড়ায়। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মেয়েদের শারীরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সুরক্ষার প্রসঙ্গ।

বিষয়টি যখন গর্ভপাত, তখন তা চিন্তা বাড়ায়। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মেয়েদের শারীরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সুরক্ষার প্রসঙ্গ।

বিষয়টি যখন গর্ভপাত, তখন তা চিন্তা বাড়ায়। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মেয়েদের শারীরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সুরক্ষার প্রসঙ্গ।

এমনিতেই সমাজের নানা স্তরে নারীর ইচ্ছায় গর্ভপাত নিয়ে ছুঁৎমার্গ রয়েছে। এমনকি, সঙ্গমের সময়ে নিরোধ ব্যবহার সম্পর্কেও আছে নানা ধরনের মতামত। তার মধ্যে একটি আইন এক ধাক্কায় বছর পঞ্চাশ পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তথাকথিত প্রগতিশীল একটি দেশকে। তার প্রভাব যদি পড়ে অন্য দেশের জনতার চিন্তাধারায়, তবে তা আতঙ্কের বিষয় হবে বলেই মনে করছেন মানবাধিকার কর্মী থেকে মনোবিদ, নানা জনেই।

মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন মনে করেন, নারী শরীরের উপর নারীর অধিকার শেষ কথা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘‘কী কারণে তিনি গর্ভপাত করাবেন, সে একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার। এই সিদ্ধান্তকে যখন আমরা রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিচ্ছি, তখন তাতে নানা রকম চোখরাঙানির এবং নৈতিক নিষেদ্ধজ্ঞার প্রবণতা চলে আসে। সেখানে আবারও নারীর অধিকার খর্ব হয়।’’ মনোবিদ মনে করান, এখনও দেখা যায় কন্যাসন্তানের ভ্রূণ হত্যা হচ্ছে যখন-তখন। তাতে কোনও সমস্যা থাকে না। এ দিকে, যদি কোনও নারী নিজে মনে করেন যে, তিনি একটি সন্তানকে আনতে চাইছেন না, সেখানে তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকবে না! এমন কি হওয়া কাম্য, প্রশ্ন অনুত্তমার। এই দ্বিচারিতাই কিন্তু ভাবার বিষয় বলে মত মনোবিদের।

অনুত্তমার বক্তব্য, গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত এক জন নারীর নিজস্ব। একমাত্র তাঁর চিকিৎসক এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় যেতে পারেন। যদি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে, সেই নিয়ে আলোচনা সম্ভব। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্রের মতামতের কোনও জায়গাই নেই।

নারী আন্দোলনকর্মী দোলন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমেরিকায় যা হল, তাকে সম্পূর্ণ রাষ্টের দ্বারা নারী শরীরের উপর জুলুম বলা চলে। এটি প্রগতিশীল চিন্তার বিপরীত একটি রায়। কোনও নারী মা হবেন, না কি হবেন না, তা একেবারেই তাঁর সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। এ নিয়ে অন্য কোনও মত চলতে পারে না।’’

সমাজের নানা স্তরে নারীর ইচ্ছায় গর্ভপাত নিয়ে ছুঁৎমার্গ রয়েছে।

সমাজের নানা স্তরে নারীর ইচ্ছায় গর্ভপাত নিয়ে ছুঁৎমার্গ রয়েছে।

বিভিন্ন কারণে গর্ভপাত করানোর প্রয়োজনও পড়ে মেয়েদের। কিশোর বয়সে গর্ভধারণ বাড়ছে দুনিয়া জুড়ে। ধর্ষণের জেরে গর্ভধারণও কম হয় না। এ ছাড়াও রয়েছে অসুস্থতা, অর্থনৈতিক সঙ্কট। এ সব সমস্যা উপেক্ষা করে যদি রাষ্ট্র আইন চাপায় গর্ভপাত না করানোর, তবে তা অতি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও মত দোলনের। বহু ক্ষেত্রে গর্ভপাত করাতে না পারার কারণে মেয়েদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে এর আগে। সে কথা মনে রাখা জরুরি বলেই মনে করেন তিনি। দোলনের মত, ‘‘এ তো যেন শরীরের উপর রাষ্ট্রের বুলডোজার চালানোর সিদ্ধান্ত হচ্ছে!’’

নারীর শরীরের উপর তাঁর অধিকার কায়েম করতে না দেওয়ার আসলে কোনও ভৌগলিক সীমা থাকে না বলে মনে করেন অনুত্তমা। কোথাও তা আইনি ভাবে কায়েম হয়, কোথাও বা তা পরোক্ষ ভাবে সমাজের কোণে চুপচাপ বাড়তে থাকে। এমনই মত তাঁর। অনুত্তমা বলেন, ‘‘আমেরিকার মতো একটি দেশ যদি এমন পিতৃতান্ত্রিক এবং পশ্চাৎমুখী আইন আনে, তবে উদ্বেগও তৈরি হয়। আরও কোনও দেশ আবার সে পথে হাঁটবে না তো!’’

দোলন এবং অনুত্তমা দু’জনেই একটি জিনিস নিয়ে বেশ চিন্তিত। যদি দিকে দিকে গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন বদলাতে থাকে, তবে বেআইনি পথে তা করানোর ব্যবস্থাও হবে। এবং এর মাধ্যমে বাড়বে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতের আশঙ্কা। তাতেই আসলে মেয়েদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।

মেয়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে কি কোনও রাষ্ট্রেরই চিন্তা থাকে না তবে? এ প্রশ্ন উঠেই যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy