করোনার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে চিন-সহ গোটা বিশ্বেই। ছবি: রয়টার্স।
ভাইরাস মানছে না কাঁটাতার। রোগের সূত্রপাত চিনে হলেও বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তার আতঙ্ক। করোনাভাইরাস। চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছাপিয়েছে ১৩০। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০০। শুধু চিনেই নয়, অপ্রতিরোধ্য উপায়ে এই ভাইরাস পৌঁছে গিয়েছে তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়ায়। সংক্রমণের আতঙ্কে কাঁপছে ভারতও।
হঠাৎ আমদানি হওয়া এই ভাইরাস নিয়ে যারপরনাই চিন্তায় চিকিৎসক মহলও। ভায়রোলজিস্ট সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘জিনগত মিউটেশনের কারণে কোনও কোনও ভাইরাস তার আকার-আকৃতি বদলে ফেলে। পরিবর্তন করে বৈশিষ্ট্যও। ফলে নতুন ধরনের এই ভাইরাসগুলির সঙ্গে লড়াই করার মতো হাতিয়ার মজুত করার আগেই এরা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। করোনাও এই ধরনের একটি ভাইরাস।’’
শুধু চিনই নয়, এই মারণ ভাইরাস মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিনের প্রতিবেশীদেরও। ভাইরাসকে শেষ করার কোনও প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই বলে ‘দ্বার বন্ধ’ করে তাকে রুখে দিতে চাইছে ভারত সরকার। কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে বিমান ও সমুদ্রবন্দরগুলিতে। দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি করোনা-আতঙ্ক রুখতে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র। চিনের বিভিন্ন প্রদেশে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফেরাতেও ইতিমধ্যেই চিনকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। চিনে ভারতীয় দূতাবাস বিষয়টি নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে।
আরও পড়ুন: ওয়েট ট্রেনিংয়ের সময় এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই ওজন ঝরবে দ্রুত
সংক্রমণের উৎস
করোনাভাইরাসের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানী ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত ভাবে কোনও বিষয়কে চিহ্নিত না করলেও কয়েকটি ‘দাবি’ উঠে এসেছে।
এই ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ‘ফ্রুট ব্যাট’-দের শরীরে। চিনে এই ধরনের বাদুড়দের স্যুপ রান্নার অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং তা বেশ জনপ্রিয় একটি খাদ্য। বাদুড় খায় এমন সাপের শরীরেও এই ভাইরাস ঢুকে পড়ে। সেই সাপ চিনে মাছের বাজারে বিক্রি হয়। সাপও সেখানকার অতি জনপ্রিয় একটি খাদ্য। তেমন সাপ খেলেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে করোনাভাইরাস। এই ধরনের সাপ বা বাদুড় ধরা, জবাই করা বা খাওয়ার সময় শ্বাসের মাধ্যমে এই ধরনের ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। তাদের রক্তের সংস্পর্শে এলে বা শ্বাসের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য মানুষদের মধ্যে। এমনকি, সাপ ও বাদুড়ের রক্ত অন্য কোনও জায়গায় লাগলে, সেখানে হাত দিয়ে সেই হাত নাকে বা মুখে দিলে বা অন্য কাউকে ছুঁলেও অসুখের জীবাণু হাতের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে শুধু সংক্রমণ হলেই তো হল না! শরীরের অভ্যন্তরে এই ধরনের ভাইরাস কী ভাবে ছড়িয়ে পড়বে তা না জানলে এর উপযুক্ত চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করাও অসম্ভব। প্রতিষেধক তৈরি না হলেও অসুস্থ মানুষদের আয়ুষ্কাল কিছুটা বাড়িয়ে দিতে বা ভাইরাসের থাবাকে গুটিয়ে আনতে গিয়ে চিকিৎসকরা এর সংক্রমণের পদ্ধতি সম্পর্কেও অবগত হয়েছেন। শরীরে বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে আর পাঁচটা ভাইরাসের মতোই এর আচরণটি কিন্তু সরল।
আরও পড়ুন: সন্তানের উচ্চতা কিছুতেই বাড়ছে না? ডায়েটে রাখুন এই সব্জিগুলি
বিমানবন্দরে চলছে নজরদারি।
কেমন করে?
নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করার পর শ্বসনতন্ত্রের (রেসপিরেটরি সিস্টেম) যে কোনও একটি কোষকে টার্গেট করে এই ভাইরাস। সেই কোষটি তখন হয়ে ওঠে ‘হোস্ট সেল’। অতিথি এলে যেমন তাকে যত্নআত্তি করতে হয়, শ্বসনতন্ত্রে এই কোষটিও ভাইরাসের যত্নআত্তি শুরু করে। অধিক যত্ন পাওয়া ভাইরাসের কারণে ফুলেফেঁপে ওঠে হোস্ট সেল। শেষে এক সময় হোস্ট সেল ফেটে ভাইরাসকে উগড়ে দেয় বাইরে। হোস্ট সেলের কাছাকাছি থাকা সবক’টি সেলে তা ছড়িয়ে পড়ে।
করোনার উপসর্গ
ভায়রোলজিস্ট ও চিকিৎসকদের মতে, এই ভাইরাসের প্রধান ও অন্যতম উপসর্গ একটানা সর্দি-কাশি ও বুকে কফ জমে থাকা। সাধারণত কোনও প্রকার ওষুধেই শ্লেষ্মাজনিত সমস্যা না সারলে ‘পিসিআর’ বা পলিমারেস চেন রিঅ্যাকশন পরীক্ষা করে এই ধরনের ভাইরাসের অস্তিত্ব খোঁজা হয়।
সর্দি-কাশির উপসর্গ দিয়ে শুরু হলেও এই ধরনের ভাইরাসের কারণে তা দ্রুত বাড়ে ও প্রবল জ্বর ডেকে আনে। সঙ্গে শ্বাসকষ্টও থাকে। নাক থেকে জল পড়া, বুকে কফ জমে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, গলাব্যথা এগুলিও এর লক্ষণ। শ্লেষ্মাজনিত অসুখ বেড়ে নিউমোনিয়ার দিকে বাঁক নেয় ও সিভিয়ার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত করে।
করোনাভাইরাসের হানা থেকে রুখতে বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপের কথা চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
বাদুড়, সাপ ইত্যাদির স্যুপ থেকে চিনে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে এমন দাবি থেকে এ সব খাবার ইতিমধ্যেই চিনাদের খেতে নিষেধ করেছেন সে দেশের চিকিৎসকেরা। ভারতে এ সব খাবারের চল না থাকলেও যে কোনও বন্য জন্তু বা মাংস খাওয়া হয় যাদের, এমন পশু-পাখিদের ছোঁয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গ্লাভস পরে সুরক্ষিত উপায়ে ধরুন তাদের। মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে এখনই কোনও বাধানিষেধ না এলেও রান্নার বেলায় তাদের সুসিদ্ধ করা অবশ্যই দরকার। প্যাকেটজাত ইমপোর্টেড মাংস আপাতত না কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যখন-তখন মুখে হাত দেওয়া, প্রতি দিন বাড়ি ফিরে ভাল করে হাত-মুখ ধোয়াও যে কোনও রকম ভাইরাসকে আটকে দেওয়ার পদক্ষেপ। শ্বাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরে ঢোকে। তাই ভাইরাস আটকাবে এমন মাস্ক ব্যবহার করুন। সর্দি-কাশি হয়েছে এমন রোগীর থেকে দূরে থাকুন। কোনও ভাবে সংস্পর্শে এলেও ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নিন।
(গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy