পাখি দেখলে ভাল থাকে মন! ছবি: পিক্স্যাবে
পেয়ারা গাছে টিয়ার ওড়াউড়ি, চড়ুইয়ের খুঁটে খাওয়া, কার্নিশে বসে থাকা শালিখের ঝগড়া। এ সব এখন স্মৃতির পাতায়। তবে শহর থেকে শহরতলি, জানলা দিয়ে কখনও পাখির আনাগোনা দেখতে পেলে, কার না মন ভাল হয়!
পাখির রঙের বাহার, নানা সুরের ডাক, ওড়ার কৌশল পর্যবেক্ষণে ঘরের চৌহদ্দি ছেড়ে প্রকৃতির আঙিনায় বেরিয়ে পড়েন একদল মানুষ। চেনা থেকে অচেনা, পাখি দেখলেই যেন এক অনাবিল আনন্দ। তার ডানা ঝাপটানো, হাঁটার স্টাইল, দীর্ঘক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণেই যেন এক পরম সুখ। এঁদেরই বলা হয় পক্ষী পর্যবেক্ষক।
তরুণ প্রজন্ম থেকে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, সকলের কাছেই ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পক্ষী পর্যবেক্ষণের শখ। কারও কাছে কার্যত তা নেশাও। পাখি দেখার এই শখের ফলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসতে পারা, দিনভর কাজের চাপ ও মানসিক ক্লান্তি কমিয়ে দেয় বলছেন মনোরোগ চিকিৎসকরা।
পক্ষী পর্যবেক্ষণ কী?
পাখি দেখা। শুধু দেখা বললে ভুল, খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ। চোখ থেকে ডানার রং, ওড়ার কৌশল, ডাক চেনা। ছবি তোলা। তাদের খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বাসস্থান সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা।
তবে, কেউ পাখি দেখেন শখে, আবার কেউ পেশাগত ভাবেও। তাঁদের পর্যবেক্ষণেই জানা যায়, কোন পাখি কমছে, আবার কোন অঞ্চলে নতুন কোন প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলেছে।
এই পাখি দেখার সঙ্গেই জুড়ে যায় আনন্দ, নতুন কিছু চেনা ও শেখা। শুধু পাখি দেখা নয়, একসঙ্গেই প্রকৃতির সান্নিধ্য, গাছের পাতা থেকে ফুল চিনে নেওয়া আসলে মনের মধ্যে থাকা চোরাগোপ্তা মুক্তির আনন্দ, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এনে দেয়। হয়তো বইয়ের পাতায় দেখা কোনও একটা পাখি চাক্ষুষ করার ইচ্ছা ছিল। সেই পাখির দেখা মিললে প্রাপ্তির আনন্দে নেচে ওঠে মন। মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, ‘‘একঘেয়ে জীবন থেকে বেরিয়ে জঙ্গলে, প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়ানোয় মন ভাল হয়ে যায়। তার উপর নতুন পাখি দেখার উদ্দীপনা যোগ হয়। পাখি দেখা শুধু নয়, কোনও নতুন প্রজাতির পাখির ছবি ক্যামেরাবন্দি করে অনেকেই তা সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেন। সেখান থেকেও আসে প্রশংসা। যা আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।’’
মনোজগতে পাখি দেখার প্রভাব কী ভাবে পড়ে?
প্রকৃতির সংস্পর্শ
পাখি দেখতে যাওয়া মানেই প্রকৃতির আরও কাছে আসা। কংক্রিটের শহরাঞ্চলের বাইরে খুঁজে নেওয়া কোনও বড় জলাশয়, গাছপালা। প্রকৃতির এই সংস্পর্শে মনের দুশ্চিন্তা, খারাপ লাগা দূর হতে পারে এক নিমেষে। গাছপালা, বন্যপ্রাণ, পাখির প্রতি তৈরি হয় ভালবাসা। যা প্রকৃতিকে বাঁচাতেও উদ্যোগী করে তোলে।
মনোসংযোগ ও ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধি পায়
পক্ষী পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন মনোসংযোগ, ধৈর্যশক্তি। পাখি দেখা সাধনার চেয়ে কম নয়। কাঙ্খিত প্রজাতির পাখি দেখতে, তার ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে হয়। কখনও পাখির ছবি তুলতে তার দিকে নজর রেখে এ দিক থেকে ও দিক ছুটে বেড়াতে হয়। তাই পাখি দেখার আগ্রহ তৈরি হলে, মনকে কেন্দ্রীভূত করার অভ্যাসও ধীরে ধীরে তৈরি হবে।
শিক্ষামূলক
পাখি চিনতে শেখা, পাখির প্রজাতি আর আনাগোনা সম্পর্কে শিক্ষা একটা বড় লাভ এ ক্ষেত্রে। শুধু পাখি নয়, পাখি দেখতে গিয়ে চিনে নেওয়া যায় গাছ, প্রজাপতি, পতঙ্গও। প্রকৃতির কাছে যেতে যেতে বাড়তে থাকে শিক্ষার পরিধিও। কোথায় কোন পাখি কত ছিল, এখন কত আছে, কোন পরিযায়ী পাখি কোন ঝিলে আসছে, এই সংক্রান্ত সব তথ্যও লিপিবদ্ধ হয় এই শিক্ষা থেকেই।
মন ভাল হয়
খোলা হাওয়ায় হাঁটহাটি করলে মন এমনিতেই ভাল লাগে। পাখি দেখেতে গেলে মন থাকে সে দিকেই। ফলে ক্ষণিকের জন্য হলেও রোজের কাজের চাপ, মানসিক ক্লান্তি থেকে মুক্তির পথ খুলে যায়। পছন্দের কোনও কিছু সব সময়ই খুশি দেয়। পাখি দেখার ক্ষেত্রেও সেই ভাললাগাই কাজ করে। যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, পাখি দেখার জন্য প্রচুর হাঁটহাটিতে শরীরও ভাল থাকে।
তবে মনোরোগ চিকিৎসক কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শুধু পাখি দেখা কেন, প্রকৃতিকে চেনার মধ্যে আনন্দ আছে। ঝরা পাতায় পা পড়লে, প্রকৃতির কাছে গেলে মন ভাল হয়ে যায়। পাখির উজ্বল রং থেকে ডাক মনোজগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।’’ তবে তিনি মনে করেন, শুধু পাখি দেখা নয়, প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ক্যাম্পিংও বিশেষ কার্যকর হতে পারে। ক্যাম্পিঙের মাধ্যমে প্রকৃতিকে চেনার প্রথম ধাপ শুরু হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy