Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Heart

বুক ধড়ফড়? পা, গোড়ালি ফুলে যাচ্ছে? হার্টের ছন্দে গোলমাল নয় তো?

কখনও কখনও বিভিন্ন কারণে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ বেড়ে কিংবা কমে যেতে পারে। হৃদযন্ত্র ঠিক ভাবে পাম্প করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পায় না।

হৃদযন্ত্র ঠিক ভাবে পাম্প করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পায় না। ফাইল ছবি।

হৃদযন্ত্র ঠিক ভাবে পাম্প করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পায় না। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ১২:১৭
Share: Save:

প্রবীণ নেতা থেকে অল্প বয়সি পুলিশ অফিসার, কিংবা মধ্য তিরিশের তরুণ চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সবই ঠিক ছিল, আচমকাই হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেলেন। করোনা অতিমারির সময় আচমকা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনার কথা প্রায়শই শোনা যাচ্ছে। কোনও কোনও সময় অন্যান্য কারণ থাকলেও হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত ছন্দ অনেক সময় আচমকা হার্ট অ্যাটাক ডেকে আনতে পারে বলে জানালেন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল।

সুস্থ মানুষের হৃদযন্ত্র এক মিনিটে ৭২ বার পাম্প করে অক্সিজেন যুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। কিন্তু কখনও কখনও বিভিন্ন কারণে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ বেড়ে কিংবা কমে যেতে পারে। হৃদযন্ত্র ঠিক ভাবে পাম্প করতে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পায় না। ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিপদের ঝুঁকি বাড়ে প্রতি পদে। ডাক্তারি পরিভাষায় হৃদযন্ত্রের রিদিমের গোলযোগের নাম ‘অ্যারিদমিয়া’।

সব থেকে মুশকিল হল, হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ বাড়লে বা কমলে উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গ না থাকায়এই ব্যাপারটা চট করে বোঝা যায় না। আর শরীরে সে রকম কোনও কষ্ট না থাকায় বেশির ভাগ মানুষ ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। এর ফলে আচমকা বিপদে পড়তে হয়, বললেন প্রকাশবাবু।

আরও পড়ুন: শরীর অচল থেকে পক্ষাঘাত, করোনার দোসর কি এ বার গুলেনবারি সিনড্রোম? কী বলছেন চিকিৎসকেরা​

কোভিড-১৯ নিয়ে দেশ বিদেশের সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানী—প্রত্যেকেই অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষ হৃদযন্ত্রের অসুখে মারা যান। এঁদের সিংহভাগেরই অ্যারিদমিয়া অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের ছন্দের সমস্যা থাকে। সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের এক অন্যতম কারণ অ্যারিদমিয়া, বললেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন শর্মা।

অতিরিক্ত পরিশ্রমে ৭২ বারের থেকে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন সামান্য কম-বেশি হতেই পারে। ছবি: শাটারস্টক

প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে প্রায় ৫ জনের হৃদযন্ত্রের ছন্দের গোলমাল আছে। বয়স ৬০ বছর পেরলেই এই সমস্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৬০ উত্তীর্ণদের মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষের হৃদযন্ত্র অস্বাভাবিক ছন্দে চলে। আর ৭০ বছর অথবা তারও বেশি বয়সে অ্যারিদমিয়া বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। হার্ট অ্যাটাকের পর হৃদযন্ত্রের পেশি কিছুটা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় অ্যারিদমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে, বললেন রঞ্জনবাবু। ব্যাপারটাকে অবহেলা করলেই যখন তখন রোগীর হৃদযন্ত্র থেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। হৃদযন্ত্র প্রতি মিনিটে কমবেশি ৭২ বার পাম্প করে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত সবরাহ করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। অতিরিক্ত পরিশ্রম বা শরীরচর্চা করলে ৭২ বারের থেকে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন সামান্য কম-বেশি হতেই পারে। কিন্তু লাগাতার -চলতে থাকলে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: শেষ পর্যায়ের ক্যানসারে কষ্ট কমায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার​

হৃদস্পন্দন মিনিটে ৭২ বারের পরিবর্তে ১০০ বার বা তাঁর কাছাকাছি হলে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ট্র্যাকিঅ্যারিদমিয়া আর ৬০ বার অথবা তারও কম হলে তাকে বলে ব্রাডিঅ্যারিদমিয়া। হৃদস্পন্দনের হার যদি ৪০-এর নিচে নেমে যায় অথবা ১৫০ হয়ে যায়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে রোগীর জীবন সংশয় হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অবশ্য অনেক সময় থাইরয়েড গ্রন্থির অতি সক্রিয়তার কারণেও হৃদযন্ত্রের ছন্দ বেড়ে যেতে পারে বলে রঞ্জন শর্মার অভিমত।

হার্ট অ্যাটাকের পর প্রায় ২৫ শতাংশ রোগীর হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি, ভালভের অসুখ এবং করোনারি হৃদযন্ত্র ডিজিজের অত্যন্ত ভাল চিকিৎসা হলেও এদের হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি অনেক বেশি।

আরও পড়ুন: হাসপাতালে অমিল শয্যা, বাড়িতে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা করবেন কী ভাবে

রঞ্জনবাবু ও প্রকাশবাবুর মতে, ইসকিমিয়ার রোগীদের২০ শতাংশ ক্ষেত্রে রিদম ডিজঅর্ডার আছে। এঁদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি । আবার যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন ও অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান করেন, তাঁদের হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি বাড়ে। ধূমপানও এই সমস্যার এক অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর। রক্তে শর্করার বাড়তি মাত্রা এবং উচ্চ রক্তচাপ হৃদযন্ত্রের ছন্দ ওলটপালট করে দিতে পারে। তাই এসব অসুখ থাকলে ডাক্তার দেখাতে ভুলবেন না। কিছু কিছু উপসর্গ দেখলে হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডারের আশঙ্কা করা যেতে পারে।

হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডার হলে পায়ের পাতা, গোড়ালি ও পা ফুলে যায়। ফাইল ছবি

যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন—

বুক ধড়ফড় করা এই অসুখের অন্যতম লক্ষণ। তার সঙ্গে অল্প পরিশ্রমে করলে হাঁপিয়ে পড়ার দিকেও নজর রাখতে হবে।

হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডার হলে পায়ের পাতা, গোড়ালি ও পা ফুলে যায়, এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে জল জমে ফুলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

• সারা দিনই ক্লান্ত লাগে, ঘুম পায়, কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না, একাগ্রতা কমে যায়।

• কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। জোরে হাঁটা-চলায় অসুবিধে হয় এবং শরীরচর্চা করার ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করে।

• কাশি ও বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হয়।

• শরীরে জল জমে দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে।

• খিদে কমে যায় ও গা বমি ভাব থাকে দিনভর।

এসব উপসর্গ দেখলে অবশ্যই একজন কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা উচিত, বললেন প্রকাশবাবু। অত্যাধুনিক কিছু ওষুধ, কার্ডিয়াক রিসিনকোনাইজিং ডিভাইস এবং এমআরআই কন্ডিশনড ইমপ্ল্যান্টেবল ডিফিব্রিলেটরের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। এদেশে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডারে ভুগছেন। এঁদের সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি খুব বেশি। করোনা-মুক্ত থাকার সঙ্গে হৃদযন্ত্রকেও ভাল রাখুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE