ড্রাগন ফ্রুট চাষ
এই ফলের জন্মভূমি হল মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাসের মতো কয়েকটি দেশ। ধীরে ধীরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি বহু জায়গায় এই ফলের চাষ শুরু হয়। ক্যাকটাস জাতীয় গাছের ফল ড্রাগন ফ্রুট। একাধারে এর উপকারিতা বহুবিধ এবং ব্যবসায়িক দিক থেকেও চাষ খুব লাভজনক। তাই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ড্রাগন ফ্রুটের চাষ হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় জোগান এখনও যথেষ্ট কম।
চাষ সম্পর্কে
ব্যবসায়িক ভাবে এই গাছের চাষ করা যায়, যা অত্যন্ত লাভজনক। আবার বাড়ির ছাদবাগানেও এর চাষ করা যেতে পারে। শীত শেষের পরে পরেই গাছ লাগাতে হবে। এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে প্রথম ফল আসতে। আড়াই তিন বছর পর থেকে ভাল ভাবে ফল ধরতে থাকে। ছাদের বাগানে এই গাছ লাগাতে চাইলে অল্প সংখ্যক চারা রোপণ করতে হবে। খুব বড় টবে এই গাছ লাগাতে হবে, যাতে অন্তত ৫০ কেজি মাটি ধরবে। তাই সিমেন্টের টবও বানিয়ে নিতে পারেন। ছাদে গাছ লাগালে একটা অবলম্বন লাগবে, যা বেয়ে গাছটি উঠতে পারে। এই গাছের গা থেকে শিকড়ের মতো বেরোয়, যা সেই অবলম্বনকে জড়িয়ে ধরে বাড়তে থাকে। তিন সাড়ে তিন ফুট ওঠার পরে গাছটি আবার ঘুরে নীচের দিকে নেমে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ গাছটিকে আর লম্বা হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য চার ফুটের একটি সিমেন্টের খুঁটি বানানো প্রয়োজন। সেটির মাথায় একটি টায়ার তার দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। গাছটি খুঁটি ধরে উঠে গিয়ে টায়ার থেকে ঝুলবে। সেই ঝুলে থাকা অংশে ফুল ও ফল ধরবে। খুঁটির মাথা অবধি গিয়ে গাছটির ঘুরে নেমে আসতে (চার থেকে সাড়ে চার ফুট লম্বা হতে) প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়।
যত্নআত্তি
ক্যাকটাস জাতীয় এই গাছে জল একটু কম দিতে হয়। মাটি তৈরি করার সময়ে জৈব সার দিয়ে তৈরি করতে হবে। তিন ভাগ মাটি এক ভাগ সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে, তাতে
চারা বসাতে হবে। দু’ থেকে তিন মাস পরে কিছু রাসায়নিক সার মাঝেমধ্যে দিতে হবে (এক মাস দেড় মাস অন্তর)। এনপিকে ১০-২৬-২৬ অনুপাতে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম করে দিতে হবে।
বিক্রি বিষয়ে
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব পঞ্চায়েত অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্টের অন্তর্গত তমলুক প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট অফিসার ড. উত্তম লাহা বললেন, ‘‘নিউমার্কেট তো বটেই, বিভিন্ন শপিং মলেও এখন ড্রাগন ফ্রুট বিক্রি হয়। নদিয়াতে এই ফলের ভাল চাষ হচ্ছে। অন্যান্য জেলাতেও টুকটাক শুরু হয়েছে। তবে সে ভাবে লার্জ স্কেলে এখনও পশ্চিমবঙ্গে চাষ শুরু হয়নি। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় ড্রাগন ফ্রুট চাষের খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। এ সব জেলায় প্রচুর ফাঁকা জায়গা রয়েছে এবং বৃষ্টি কম হয়। সেখানে যদি বাগান করে চাষ করা যায়, তা হলে সম্ভাবনা খুবই জোরালো। অল্প জলে ও সামান্য যত্নে এই ট্রপিকাল ফ্রুট হতে পারে।’’ চাহিদার তুলনায় জোগান এখনও খুবই কম। তাই ফলের দাম বেশি। ড্রাগন ফ্রুটের উপকারিতা সম্পর্কে এখনও বহু মানুষ জানেন না। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ এই ফল আনাজ হিসেবেও খাওয়া হয় এবং তার উপকারিতা বহুবিধ।
পুষ্টিগত দিক
বেশির ভাগ ফল থেকেই পাওয়া যায় নানা ভিটামিন ও মিনারেল, ড্রাগন ফ্রুটে তা আরও বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলে ক্যালরি কম, কিন্তু ডায়েটারি ফাইবার থাকে বেশি। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘মহিলাদের যেখানে ২৫ গ্রাম ফাইবারের প্রয়োজন হয় এবং পুরুষদের আরও একটু বেশি, সেখানে ১০০ গ্রামের একটি ড্রাগন ফ্রুট থেকে প্রায় ৭ গ্রাম মতো ফাইবার পাওয়া যায়। হার্ট ডিজ়িজ়, ডায়াবিটিস এবং যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের ডায়েটে খুব জরুরি একটি উপাদান ফাইবার। পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েডস সমৃদ্ধ এই ফলে ভিটামিন সি-ও বেশি পরিমাণে থাকে। ইমিউনিটি বুস্টিং এই উপাদানটির কারণে ড্রাগন ফ্রুট রোগ প্রতিরোধক। এতে বিটালেনসও আছে, যা ক্যানসার সেলকে সাপ্রেস করে। ক্যারোটিনয়েডস ক্যানসার ও হার্টের রোগের জন্য খুব উপকারী। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এই ফলে, যা ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে উপকারী। এর পাশাপাশি ড্রাগন ফ্রুট গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাকের জন্যও উপকারী। কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখে বলে ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক ভাল থাকে।’’ এ ছাড়াও এই ফলে আয়রন রয়েছে, যা ম্যাগনেশিয়ামের ভাল উৎস। ম্যাগনেশিয়াম নার্ভাস সিস্টেমকে
ভাল রাখে। আর ড্রাগন ফ্রুট যে সব সময়ে আলাদা ফল হিসেবে খেতে হবে তা কিন্তু নয়, কাস্টার্ড, দই বা ফ্রুট স্যালাডের মধ্যে দিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এত রকম উপকারিতার জন্য দেশে-বিদেশে ড্রাগন ফ্রুটের এত কদর। তাই সম্ভব হলে বাড়ির ছাদেও লাগিয়ে ফেলতে পারেন এই ফলের গাছ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy