Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
soybean

হার্ট ভাল রাখার অব্যর্থ দাওয়াই, কেন রোজ খেতেই হবে ‘নিরামিষ মাংস’

হার্টের অসুখ থেকে ব্রেন স্ট্রোক, পায়ের ব্যথা অথবা অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা সবের মূলেই আছে লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন নামক শত্রু।

বেশি তেল-মশলা দিয়ে রান্না একেবারেই খাবেন না, পরামর্শ পুষ্টিবিদের। ছবি:শাটারস্টক

বেশি তেল-মশলা দিয়ে রান্না একেবারেই খাবেন না, পরামর্শ পুষ্টিবিদের। ছবি:শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৫৭
Share: Save:

বিশ্বজুড়ে অতিমারির প্রভাবে আমাদের জীবনযাপন আমূল বদলে গিয়েছে। খাওয়া-দাওয়া থেকে বাইরে যাওয়া সবই এখন অন্য রকম। লক ডাউনের কারণে শরীর চর্চায় বাধা পড়েছে অনেকেরই। এর ফলে শত্রু কোলেস্টেরল লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল এবং ভিএলডিএল বা ভেরি লো-ডেনসিটি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে। হার্টের অসুখ থেকে ব্রেন স্ট্রোক, পায়ের ব্যথা অথবা অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা সবের মূলেই আছে লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন নামক শত্রু।

এই শত্রুকে দমিয়ে রাখতে রোজকার ডায়েটে থাকুক সয়াবিন, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা এমনই জানাচ্ছেন। তবে প্রসেস করা নয় খেতে হবে সবুজ বিনস বললেন পুষ্টিবিদ রেশমি রায়চৌধুরী। যে কোনও খাবার প্রসেস করা হললে তার পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়। তবে সয়াবিনের দানা রান্না করে খেলে একই পুষ্টিগুণ মিলবে বলে রেশমির অভিমত।

সয়াবিনে আছে আইসোফ্ল্যাভেন ও লেসিথিন নামক দুটি অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান থাকে যা আমাদের হার্ট ভাল রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। আর আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। ১০০ গ্রাম সয়াবিনে প্রায় ৩০ মিলিগ্রাম আইসোফ্ল্যাভেন নামক ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। এই দুটি উপাদান হার্টের কার্যক্ষমতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্যে করে। এর মধ্যে আবার আইসোফ্ল্যাভেন অত্যন্ত জোরালো ফাইটো-ইস্ট্রোজেন।

আরও পড়ুন:ঘন ঘন কফি পান ভাল না খারাপ?​

ত্বক চুল-সহ সামগ্রিক ভাবে সৌন্দর্য বজায় রাখতেও এই উদ্ভিজ্জ ইস্ট্রোজেনের উৎস অত্যন্ত উপযোগী। ঋতুনিবৃত্তির পর মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের অভাবজনিত সমস্যার মোকাবিলা করতে নিয়ম করে সয়াবিন খাওয়া উচিত, পারমর্শ রেশমির। আবার লেসিথিন সরাসরি হার্টের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

আরও পড়ুন:কারও র‍্যাশ, কারও হারপিস, সদ্যোজাতর ত্বকের সমস্যায় কী করতেই হবে এখন​

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের গবেষণায় প্রকাশ, সয়াবিনের দানা বা বিনস প্রত্যক্ষ ভাবে মোটে ৩ শতাংশ এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে। কিন্তু পরোক্ষভাবে সয়াবিন এইচডিএল ও এলডিএলের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

রোজকার খাবারে সয়াবিনের প্রোটিন থাকলে কোলেস্টেরল জব্দ হয়। ফাইল ছবি।

বিশেষ করে যাঁরা ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাঁদের হার্টের রক্তবাহী ধমনির মধ্যে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের (অর্থাৎ ধমনির মধ্যে কোলেস্টেরলের পলি জমে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া) মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। তাই পুষ্টি বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে লেসিথিনকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টের তকমা দিয়েছেন। তবে রেশমি জানালেন, সাপ্লিমেন্টের বদলে সরাসরি সয়াবিন থেকে এই নিউট্রিয়েন্টস শরীরে গেলে বেশি কার্যকর হয়। এই বিশেষ উপাদানটি ফ্যাট মেটাবলিজমেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

রেশমি রায়চৌধুরী জানান, প্রোটিনের দিক থেকে বিচার করলে সয়াবিনকে মাংসের সঙ্গে তুলনা করা হয়। 'নিরামিষ মাংস'ও বলা হয় তাঁকে। মাংস খাবার পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে তার সঙ্গে সয়াবিন খেলে এর ফাইবার ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড একদিকে বিপাকের হার দ্রুত করার পাশাপাশি শরীরে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়।

আরও পড়ুন:ডিম খেলে কি মোটা? ক'টা খাবেন, কী ভাবে খেলে মিলবে পুষ্টি​

আজকের ব্যস্ত সময়ে মস্তিষ্ক যথেষ্ট সচল থাকলেও কায়িক পরিশ্রম হয় না বললেই চলে। পা বাড়ালেই লিফট, গেট পেরোলেই অটো অথবা অ্যাপ ক্যাব। দোসর ফাস্ট-ফুড প্রীতি। সব মিলিয়ে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রক্তবাহী শিরা ধমনিতে পলি জমে। ফলে রক্ত চলাচলের গতি যায় কমে।

আরও পড়ুন:মেদ ঝরানো, ব্যথা কমানো, কো-মর্বিডিটি ঠেকানো, এই সব ব্যায়ামেই কেল্লাফতে​

হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক-সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গএ কম রক্ত চলাচল করায় অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকতে শুরু করে। পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষিকা সুস্মিতা মুখোপাধ্যায় ঠাকুর বলেন, রোজকার খাবারে সয়াবিনের প্রোটিন থাকলে কোলেস্টেরল জব্দ হয়। কোলেস্টেরল মানেই গেল গেল রব তোলার কিছু নেই। আমাদের শরীরে এইচডিএল অর্থাৎ হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন নামের এক কোলেস্টেরল থাকে যা আমাদের হৃদযন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক-সহ সামগ্রিক ভাবে ভাল থাকতে সাহায্যে করে। এইচডিএল আমাদের বন্ধু কোলেস্টেরল।

প্রসেস করা নয় খেতে হবে সবুজ বিনস। ফাইল ছবি।

অন্যদিকে এলডিএল অর্থাত লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন হল আসল শত্রু। এই এলডিএলকে কমিয়ে রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় নেয় সয়াবিনজাত খাবারদাবার।

ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণাপত্র বলছে, খাবার পরিপাকের সময় সয়া প্রোটিনের একটি বাইল অ্যাসিড বাইন্ডিং পেপটাইডের অংশ মুক্ত করে। এটিই শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্যে করে।

আরও পড়ুন:করোনা আবহে টিকায় গাফিলতি, মাম্পসের সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে​

সয়া ফাইবার রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। সুস্মিতা জানালেন, গবেষণায় প্রমাণিত যে প্রতিদিন দশ গ্রাম করে সয়া ফাইবার শরীরে গেলে রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এ ছাড়া সয়াবিনে আছে ফাইটিক অ্যাসিড, স্যাপোনিন, আইসোফ্ল্যাভেন ও আরও অনেক কিছু। ফাইটিক অ্যাসিড অন্ত্রে তামার শোষণ বাড়ায় ও জিঙ্কের শোষণ কমায়। এর ফলে রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। সুতরাং বাজারে পর্যাপ্ত সয়াবিন মিললে কিনতে দ্বিধা করবেন না। শুধু চাউমিনের সঙ্গেই নয় অল্প ভাপিয়ে নেওয়া সয়াবিন, টোম্যাটো আর গাজর দিয়ে গোলমরিচ ছড়িয়ে স্যালাড বানিয়ে নিতে পারেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy