Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sanitary Napkin

Sanitary pad: বিশ্বসুন্দরীর হাত ধরে ঋতু-শিক্ষার পথে ‘প্যাডম্যান’

অরুণাচলম জানাচ্ছেন, ন্যাপকিনের উপযোগিতা এবং তার ব্যবহার এ দেশের বহু মেয়ের কাছে আজও অজানা।

মুম্বইয়ে বিশ্বসুন্দরী হরনাজ় কৌর সাঁধু।

মুম্বইয়ে বিশ্বসুন্দরী হরনাজ় কৌর সাঁধু। পিটিআই

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ০৭:০১
Share: Save:

অতিমারি-আবহে লকডাউন বেশ কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে ‘প্যাডম্যানের’ লড়াই। লকডাউনের জেরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের দিকটি অবহেলিত হয়েছে বার বার। দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েরা সেই সময়ে ন্যাপকিন না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন চিরাচরিত নোংরা, ছেঁড়া কাপড় ব্যবহারে। ফলে পদে পদে বিপন্ন হয়েছে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা। বলিউডি সিনেমা ‘প্যাডম্যান’ যে ঋতু-সমস্যা নিয়ে মানুষকে ভাবতে বাধ্য করেছিল, কোভিড-পর্ব সেই ভাবনায় অনেকটাই জল ঢেলেছে। তাই ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এ দেশের মেয়েদের সচেতন করতে এবং ন্যাপকিনের ব্যবহারে উৎসাহ দিতে ফের কোমর বেঁধে লড়াইয়ের ময়দানে নামছেন এ দেশের ‘প্যাডম্যান’, কোয়ম্বত্তূরের অরুণাচলম মুরুগনন্থম। আর সেই কাজে দেশি-বিদেশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে সঙ্গে এ বার তিনি পাশে পেয়েছেন ২০২১ সালের ভারতীয় বিশ্বসুন্দরী হরনাজ় কৌর সাঁধুকে।

অরুণাচলম জানাচ্ছেন, ন্যাপকিনের উপযোগিতা এবং তার ব্যবহার এ দেশের বহু মেয়ের কাছে আজও অজানা। ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়টি নিয়ে কথা বলা এখনও লোকলজ্জার ব্যাপার বলে মনে করা হয়। আজও দেশের মেয়েদের বড় অংশের নাগালের বাইরেই রয়ে গিয়েছে ন্যাপকিনের মতো অত্যাবশ্যক সামগ্রী। এ নিয়ে অরুণাচলমের লড়াইকে আরও কঠিন করেছে কোভিড, বিশেষত আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত
এলাকায়। ‘‘লকডাউনের সময়ে ন্যাপকিন কিনতে বেরিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয় ছিল পরিবারের ছেলেদের। সেই সঙ্গে ছিল জোগানের অভাব, কর্মহীনতা। ফলে মহিলারাও ন্যাপকিনের আশা ছেড়ে ফিরেছেন পুরনো পন্থায়।’— বলছেন ‘প্যাডম্যান’ অরুণাচলম।

এ ছাড়াও রয়েছে সচেতনতার অভাব। তামিলনাড়ুর দু’টি গ্রামে করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ বিষয়ে আগাম জ্ঞান না থাকায় প্রথম পিরিয়ডের সময়ে ভয়, আতঙ্ক গ্রাস করেছে ৮৪ শতাংশ কিশোরীকে। আরও এক সমীক্ষায় প্রকাশ, প্রথম ঋতু-অভিজ্ঞতার আগে এ বিষয়ে ধারণাই ছিল না দেশের ৭১ শতাংশ কিশোরীর। তাই ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৫০ লক্ষ মেয়ে ও মহিলাকে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতন করতে হরনাজ়কে সামনে রেখে লড়াইয়ে নামছেন অরুণাচলম। ভবিষ্যতে ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া এমনকি আফ্রিকাতেও এই প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

এ কাজে মিস ইউনিভার্সকে সঙ্গে নিলেন কেন? ‘পদ্মশ্রী’ অরুণাচলম বলছেন, ‘‘আমি-আপনি এ নিয়ে কথা বললে কেউ শুনবে না। কিন্তু বিশ্বসুন্দরী বললে, এ নিয়ে ছবি দিলে তা বহু মানুষের কাছে পৌঁছবে। ন্যাপকিন নিয়ে শুধু প্রচারে ততটা কাজ হবে না, যতটা বিশ্বসুন্দরী বললে হবে।’’

মঙ্গলবার এ নিয়ে মুম্বইয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে হরনাজ় বলেন, ‘‘আমার মা স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক।
তাই দেশের মেয়েদের ঋতুকালীন চিত্রটা কেমন, তা আমি জানি। সেই কারণেই এ নিয়ে মহিলাদের সচেতন করার পাশাপাশি, ন্যাপকিনের মতো সামগ্রী তাঁদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কাজে শামিল হয়ে মায়ের কাজকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে মনে করছি।’’ আর ফোনে প্যাডম্যান মজার ছলে বলছেন, ‘‘হরনাজ়কে বলেছি, তুমি খেতাব জেতার পরে হলিউড বা বলিউডে যেতে পারতে। কিন্তু তার আগে প্রথমেই তুমি প্যাডম্যানের কাছে এলে!’’

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ দেশের মহিলাদের মাত্র ১২ শতাংশ ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন। ২০১৬ সালে তা পৌঁছয় ৩৪ শতাংশে। আগামী কয়েক বছরে দেশের প্রতিটি মেয়েকে ঋতু-শিক্ষায় সচেতন করতে অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণিতে এ নিয়ে পড়ানোর জন্য সব রাজ্যকে অনুরোধ করেছেন অরুণাচলম। তাঁর কথায়, ‘‘তামিলনাড়ু, রাজস্থান সরকার ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সার্কুলার জারি করেছে। তবে শুধু মেয়েদের স্কুলেই নয়, মেয়েদের ঋতু-সমস্যা নিয়ে শিক্ষিত করতে হবে ছেলেদেরও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sanitary Napkin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy