স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্কদের দেশে এমন একটি ভেষজ মেলে যার দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। তার নাম টি ট্রি। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড আর নিউ সাউথ ওয়েলসে এই উদ্ভিদটির চাষ হয়। এই গাছটির পাতা থেকেই টি ট্রি অয়েল মেলে। তবে এর সঙ্গে চা গাছের কোনও সম্পর্ক নেই। শোনা যায়, স্থানীয়েরা চায়ে এই তরল ঢেলে মিশ্রণ তৈরি করতেন। তাই দেখে ক্যাপ্টেন জেমস কুক এই উদ্ভিদটির এমন নাম দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় লোককাহিনি প্রচলিত, স্বর্গের এক দেবতা তাঁদের এই তেল উপহার দিয়েছেন। এই তেলের আশ্চর্য গুণাবলির কারণেই এটি এমন ‘মিথ’-এর পর্যায়ে চলে গিয়েছে। এই বিশেষ এসেনশিয়াল অয়েলটি ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাকনাশক আর প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। গত একশো বছর ধরে রূপচর্চায় ও প্রসাধনী শিল্পে টি ট্রি অয়েলের প্রভূত ব্যবহার চলছে। ত্বক, নখ ও চুলের সমস্যা মেটাতে ও সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলতে তেলটি দারুণ কার্যকর।
ত্বকচর্চায় দক্ষ
শীতে শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ময়শ্চারাইজ়ারের সঙ্গে দু’-তিন ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করুন। যাঁদের ত্বক এমনিতেই তৈলাক্ত, তাঁরা ক্লেনজ়ার হিসেবে দু’ফোঁটা মধুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এই তেল মিশিয়ে মুখ মাসাজ করে ধুয়ে নিন। স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে এটিকে ফেস মিস্ট হিসেবে ব্যবহার করা চলে। একটি বোতলে গোলাপজলের সঙ্গে দু’-তিন ফোঁটা তেল মেশান। সারা দিনে কয়েক বার ব্যবহার করলে ত্বক সতেজ থাকবে।
সংক্রমণ, জ্বালাপোড়ায় এই তেল দারুণ কার্যকর। তাই ব্রণ-অ্যাকনে দূর করতে টি ট্রি অয়েল যুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন। ত্বকের যেখানে সমস্যা, সেখানে ড্রপারে করে দু’ফোঁটা টি ট্রি অয়েল লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালেই সমস্যা অনেকটা কমবে। ত্বকের রোদে পোড়া ছোপ দূর করে এই তেল। তার জন্য বেসন, মধু ও অ্যালো ভেরা জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা তেল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। টি ট্রি অয়েল যুক্ত সানস্ক্রিনও ব্যবহার করা যায়। ত্বকের জ্বালাপোড়া, র্যাশ, কাটাছেঁড়াতেও অ্যালো ভেরা জেল ও টি ট্রি অয়েলের মিশ্রণ লাগাতে পারেন।
চুলের যত্নবিধি
কিউটিকলকে মসৃণ করে চুলের ভিতর পর্যন্ত পুষ্টি জোগায় টি ট্রি অয়েল। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ আছে বলে স্ক্যাল্পের নানা সমস্যা ও জ্বলুনিতে এটি ফলপ্রসূ। হেয়ার ফলিকলস (চুলের গোড়ার কোষ) পরিষ্কার করে ও আর্দ্রতা জোগায়। তাই খুশকি পরিষ্কার হয় এবং চুল পড়ার সমস্যা কমে। স্ক্যাল্পের রোগজীবাণু, পোকা দূর করে। রোদেজলে শুষ্ক হয়ে যাওয়া চুলের স্বাস্থ্য ফেরায়। উপযুক্ত পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পেতে সাহায্য করে। তাই চুল খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে।
রোজকার শ্যাম্পুতে টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পুর বোতলে ১০-১৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। এ ক্ষেত্রে শ্যাম্পু মেখে দু’-তিন মিনিট রেখে দিতে হবে। ওই সময়েই চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ শুষে নেবে। মসৃণ ও উজ্জ্বল চুল পাবেন।
স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে বলে, এটি ব্যবহারে চুল ঘন হয়। নারকেল তেল বা বাদাম তেলে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে গরম করে স্নানের আগে মাসাজ করতে পারেন। যাঁদের খুব চুল উঠছে, জলপাই তেলের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
মাথার চিড়বিড়ানি, স্ক্যাল্পে জ্বালার মতো সমস্যায় মধুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা তেল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। আলতো করে মাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।
একটি বোতলে পরিস্রুত জলের সঙ্গে পাঁচ-দশ ফোঁটা এই তেল মিশিয়ে রেখে দিন। স্নানের পর লিভ অন কন্ডিশনার হিসেবে স্প্রে করুন।
টি ট্রি অয়েলকে ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করবেন না। তা ছাড়া, এই তেল ভীষণ ঘন। সরাসরি চুলে বা ত্বকে লাগালে অ্যালার্জি বা কোনও সমস্যা হতে পারে। জল বা অন্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা প্রসাধনীর উপকরণ হিসাবে তেলটি প্রয়োগ করা ভাল।
শীতে অনেক সময়ই পরিচিত তেল, শ্যাম্পু বা ক্রিম ত্বক-চুলের পরিচর্যা সম্পূর্ণ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে, প্রসাধনীতে এই অয়েল মিশিয়ে নিন। কয়েক দিনেই তফাত মন ভাল করে দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy