বেড়ান। সুরক্ষা বিধি মেনেই।—ছবি : শাটারস্টক।
লম্বা একটা ট্রেন সফর করে বা টানা লং ড্রাইভে বেরিয়ে ক্লান্ত হয়ে যেতে চাইছেন মঞ্জিমা। পারলে একই দিনে দার্জিলিংয়ের গ্লেনারিজে ব্রেকফাস্ট আর রাতে তাজপুরের বালিয়ারিতে আগুন জ্বালিয়ে বার-বি-কিউ ডিনারের প্ল্যান করে ফেলেন তিনি। নেহাৎ সময়ে দেবে না, না হলে মাঝে শান্তিনিকেতেনেও থামতেন। খোয়াইয়ের হাট থেকে কিনে নিতেন খান কয়েক বাটিকের শাড়ি বা খেসের চাদর। কিংবা একটা একতারা। লাল ধুলোতে পা ডুবিয়ে শুনে নিতেন বাউল গান।
গত কয়েক মাসের বদ্ধ জীবন থেকে ছুটি যদি নিতেই হয় তবে এ ভাবেই নেওয়া ভাল, তাই না! ভাবছেন মঞ্জিমার মতো অনেকেই। কেউ আবার ভাবছেন, গত ১০ মাসের ঘরে বসা ক্লান্তি যদি ঝাড়া দিয়ে ফেলতেই হয় তবে এ রকমই একটা জোরদার ঝটকা দরকার। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের টিকাকরণ প্রক্রিয়ায়র প্রথম পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে গা ঝাড়া দিয়ে বারমুখী হওয়ায় সাহসও বেড়েছে একটু। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই চোখে পড়ছে বেড়ানোর ছবি। আজ এক বন্ধু পুরুলিয়া, তো কাল আরেকজন গনগনি। কেউ লামাহাটা তো কেউ সুন্দরবন। কিন্তু, এ ভাবে বেড়িয়ে পড়াটা কি সত্যিই ঠিক হচ্ছে!
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
শুধু পশ্চিমবঙ্গের কথা নয়! গোটা দেশ এমনকি বিশ্বেও দেখা যাচ্ছে এই একই ট্রেন্ড। টিকা বাজারে আসার খবর সামনে আসতেই সবাই এত দিনের সমস্ত সুরক্ষাবিধিকে সরিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন পথে। আর এই ট্রেন্ডেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশ্বের করোনা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ‘‘এক দিকে যেমন মানতে বাধা নেই, যে এই ১০ মাসের তেষ্টায় শুকিয়ে যাওয়া জীবনে জলের ধারার মতো স্বস্তি দিতে পারে এই বেড়াতে বেরনো। আবার এটাও ঠিক যে, সাবধান হওয়া জরুরি।’’ ভ্রমণ চিকিৎসা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সোসাইটির অধিকর্তা চিকিৎসক লিন চেন। তাঁর মতে, “করোনার টিকা বেরিয়ে যাওয়া মানে এই নয়, যে আমরা এখন পুরোপুরি সুরক্ষিত হয়ে গিয়েছি। বরং এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে খুব কম তথ্যই রয়েছে আমাদের হাতে। আর সেই তথ্য থেকে যা জানতে পারছি, তা থেকে আমরা সংক্রমণ ছড়ানোর বা সংক্রমণ বহন করার ক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে ফেলেছি, তা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।” তাই অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার আগে যাঁরা বেড়াতে বের হচ্ছেন, তাঁদের এখনও বেশ কিছু সতর্কতা বজায় রেখেই চলতে হবে।
এলাকা জনবহুল না হলেও সঙ্গে থাকুক মাস্ক, স্যানিটাইজার।
কোন কোন বিষয়ে সতর্ক হবেন
• উডল্যান্ডস হাসপাতালের ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানাচ্ছেন, এই সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, টিকা বেরিয়েছে মানেই সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, এমন কিন্তু নয়। প্রথমত, টিকা এখনও পুরো দমে দেওয়া শুরু হয়নি। আর দেওয়া শুরু করলেও যে সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে, তা-ও নয়। এক বার টিকা প্রয়োগ করলে তা বড়জোর ছ’মাসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিতে পারবে। তাও ফাইজারের টিকায় এই ক্ষমতা ৯৫ শতাংশ। আর ভারত বায়োটেকের মাত্র ৬৫ শতাংশ। তাই টিকা বাজারে এসেছে, শুধু এই আশ্বাসটুকু পেয়েই সমস্ত বিধি ভুলে বেরিয়ে পড়া ঠিক নয়।
• আর যদি বেড়াতে বেরতেই হয়, তা হলে সব রকম সুরক্ষাবিধি মেনেই বের হতে হবে। যেখানেই যান, মাস্ক ব্যবহার বন্ধ করলে চলবে না। এমনকি, জনবহুল নয় এমন জায়গাতেও না। কারণ সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আপনি নিজেও কোনও না কোনও ভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন।
• বেড়াতে গেলে হোটেলে থাকতেই হবে। সে ক্ষেত্রে হোটেলের ঘর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই। কম্বল বা ব্ল্যাঙ্কেট নিজেরটা নিয়ে যাওয়াই ভাল। হোটেলের দেওয়া টাওয়েলও ব্যবহার না করারই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল।
• খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রেও যদি বাইরে থেকে খাবার খেতে হয় তবে হোটেলের প্লেটের উপর যদি কাগজের একবার ব্যবহার্য থালা বসিয়ে নিলে ভাল।
• এ ছাড়া ঘন ঘন হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা ও বিছানা বালিশের জীবাণুনাশের ব্যবস্থা করা জরুরি।
• বেড়াতে যাওয়ার জন্য এখন বেশি জনবহুল জায়গা না বেছে, অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গা বাছাই ভাল।
• মনে রাখতে হবে, আপনার সুরক্ষাবিধি বজায় রাখার উপরেই নির্ভর করছে বাকিদের সুরক্ষাও।
• তবে হাতের কাছে স্থানীয় হাসপাতালের নম্বর, অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর রাখুন।
• বেড়াতে গিয়ে তেমন সমস্যা বোধ করলে এড়িয়ে না গিয়ে দেখিয়ে নেওয়াই ভাল।
আরও পড়ুন : শীত–গ্রীষ্ম–বর্ষা শুধু ব্যায়ামই ভরসা! এমন আসক্তি আবার মনোরোগ নয় তো?
আরও পড়ুন : কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, জানতে পারবে হোয়াটসঅ্যাপ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy