Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Clarified Butter

জানেন কি, ঘি খেলে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে?

সারা দিনে যত ক্যালোরি খাওয়ার কথা, তার ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসা উচিত ফ্যাট থেকে। তার মধ্যে ১০ শতাংশের কম যদি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসে, তা হলে ক্ষতি নেই। বরং তা উপকারই করবে।

ঘিয়ের স্যাচুরেটেড ফ্যাট উপকারীই।—ছবি : শাটারস্টক

ঘিয়ের স্যাচুরেটেড ফ্যাট উপকারীই।—ছবি : শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:০০
Share: Save:

দুধের মাঠা তুলে, দেশি পদ্ধতিতে ঘি বানানোর প্রচলন আজকের কথা নয়। কয়েক হাজার বছর ধরে এই রীতির চল রয়েছে ভারতে। সাতের দশকের গোড়ায় এসে এই পরম্পরায় খানিক ছেদ পড়ে। তখনকার গবেষকরা বলেন, হৃদরোগের অন্যতম কারণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট। আর ঘি এই স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভর্তি। এক চামচ ঘিয়ের মধ্যে থাকা ১৫ গ্রাম ফ্যাটের মধ্যে ৯ গ্রামই হল স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সেই ১৫ গ্রামের মধ্যেই রয়েছে ৪৫ মিলিগ্রামের মতো কোলেস্টেরল। তাই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ ছিল, হৃদরোগ ঠেকাতে হলে বর্জন করতে হবে ঘি।

কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় দেখা গেল, হৃদরোগ সম্পর্কিত ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেল, সবচেয়ে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট খান ফ্রান্সের মানুষ। অথচ হৃদরোগে মৃত্যুর হার ফ্রান্সেই সবচেয়ে কম। ফলে তখন ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’–এর বিজ্ঞানীরা জানালেন, সারা দিনে যত ক্যালোরি খাওয়ার কথা, তার ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসা উচিত ফ্যাট থেকে। তার মধ্যে ১০ শতাংশের কম যদি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসে, তা হলে ক্ষতি নেই। বরং তা উপকারই করবে। এখন যে হেতু এক চামচ ঘিয়ের মধ্যে থাকা ১৫ গ্রাম ফ্যাটের মধ্যে ৯ গ্রাম স্যাচুরেটেড, তাই অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, দিনে দু’চামচ ঘি খাওয়া যেতেই পারে। শুধু তাই নয়, এক চামচ ঘি থেকে যে ৪৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যা, তাও শরীরের দৈনিক চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ। ফলে ঘি মানেই যে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক, এমন ভাবার কোনও কারণই নেই।

চিকিৎসকের কথায়

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কোলেস্টেরলের ধাত না থাকলে অসুবিধার কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে খাবার থেকে অল্পবিস্তর কোলেস্টেরল এলে শরীরের ক্ষতি হয় না। বরং ক্ষতি হয় বনস্পতি খেলে। কারণ তাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট তো থাকেই, তার সঙ্গে থাকে প্রায় ৪০ শতাংশ ট্রান্স ফ্যাট।’’ তাঁর মতে, অনেক সময় এই বনস্পতির সঙ্গে কৃত্রিম স্বাদগন্ধ মিশিয়ে দেশি ঘি বলে চালানো হয়। মানুষ ভুলে বুঝে তা খান। আর তাতেই ক্ষতি হয় শরীরের। শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ, ‘‘ঘি খেতে ইচ্ছে হলে ঘরে বানিয়ে নিন। সেই উপায় না থাকলে বিশ্বস্ত জায়গা থেকে কিনুন। সেই ঘি খেলে প্রচুর উপকার পাবেন।’’

এ বার দেখে নেওয়া যাক, ঘি কোন কোন দিক থেকে উপকারী

• সুষম খাবারের পাশাপাশি, দিনে দু’চামচের কম দেশি ঘি খেলে ওজন কমে। কারণ এতে আছে কনজুগেটেড লিনোলেইক অ্যাসিড। ডায়াবিটিস ঠেকানোর পাশাপাশি ওজন কম রাখতেও সাহায্য করে এই অ্যাসিড। ক্যানসার ও ইস্কিমিক হৃদরোগ প্রতিরোধেও ঘি সাহায্য করে।

• দিনে দু’চামচ ঘি খেলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমে, বাড়ে উপকারী কোলেস্টেরল। এতে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায় প্রায় ২৩ শতাংশ।• ঘিয়ের মধ্যে ভিটামিনও থাকে। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে রয়েছে এতে। তার সঙ্গে আছে কোলিন। যকৃত এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ঘি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

• পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল বলছেন, ‘‘ঘি দিয়ে রান্না করলে অনেক লাভ হয়। সে ক্ষেত্রে ঘিয়ের মধ্যে থাকা ফ্যাট দ্রবীভূত হতে পারে, এমন ভিটামিনগুলো এ, ডি, ই, কে শরীরের উপযোগী হয়ে সব্জিতে মিশে যায়। ভিটামিনের গুণে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে খাবার।’’

• ঘিয়ের স্মোক পয়েন্ট ৪৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অর্থাৎ রান্না করার সময় ঘিয়ের রাসায়নিক গঠন চট করে ভেঙে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয় না।

• ঘিয়ের মধ্যে আছে বিউটিরেট। কোলনকে সুস্থ রাখতে, প্রদাহ কমাতে, ক্রনিক অসুখের আশঙ্কা কমাতে বিউটিরেটের ভূমিকা বিরাট।• মজার কথা, দুধে যাঁদের অ্যালার্জি আচে, ঘি খেলে তাঁদের সমস্যা হয় না। কারণ দুধ থেকে ঘি বানানোর সময়, অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান বাদ চলে যায়।

কী ভাবে খাবেন

• সুষম খাবারের সঙ্গে মাঝে মধ্যে এক চামচ দেশি ঘি খান। পুষ্টি হবে। হার্ট ভাল থাকবে। নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজন, ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল।• ঘি ক্যালোরিতে পরিপূর্ণ। তাই বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

• লো–ফ্যাট খাবার খাওয়ার তাগিদে প্রসেসড ফুডের দিকে ঝুঁকবেন না। ফ্যাটের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে এতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Clarified Butter Ghee Heart Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy