ফাস্ট ফুডের বদলে বাচ্চাকে দিন সুষম খাবার।
স্থানকালপাত্র নির্বিশেষে উচ্চতা ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কার উচ্চতা কতটা হবে, তা সবথেকে বেশি নির্ভর করে জিনের উপর। পাশাপাশি, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং শরীরচর্চার মতো বিষয়গুলিও মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই সন্তানের খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দিন। এখনকার দিনে, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে কর্মরতা মায়েদের রান্নাঘরে দেওয়ার মতো বেশি সময় থাকে না। তাই, বাচ্চাদের ডায়েটে আধিপত্য থাকে ফাস্ট ফুডের-ই। মুখরোচক স্বাদ এবং বানাতে সময় কম লাগে, এই দু’দিক মিলিয়ে বাচ্চা এবং তাদের মা, দু’তরফেরই পছন্দ ফাস্ট ফুড।
সাময়িক সমস্যার সমাধান হলেও ভবিষ্যতের জন্য কিন্তু এই ট্রেন্ড ভয়ঙ্কর। তাই সচেতন হন এখনই। ফাস্ট ফুডের বদলে বাচ্চাকে দিন সুষম খাবার। শারীরিক সু্স্থতা, বিকাশের পাশাপাশি সন্তানের উচ্চতার বৃদ্ধির হারও অনেকটাই সুনিশ্চিত করে এমনই কিছু খাবারের কথা থাকল এখানে।
ডিম ও চিকেন:
শারীরিক বিকাশে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণিজ প্রোটিন সাহায্য করে দেহের নতুন টিস্যু গঠনে এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু তৈরি করতে। মাংসপেশির গঠনেও প্রোটিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার ডায়েটে তাই রাখুন ডিম। বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশ এবং সেদ্ধ বা গ্রিলড চিকেন। শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি রোজকার কাজে এনার্জিও পাবে আপনার সন্তান।
মাংসপেশির গঠনেও প্রোটিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
মাছ:
বাঙালি বাড়ির ডায়েট মাছ ছাড়া অসম্পূর্ণ। চেষ্টা করুন বাচ্চাকে ছোট মাছ বেশি খাওয়াতে। প্রথম থেকেই তার মনে কাঁটার ভীতি দূর করুন। তা হলেই দেখবেন, মাছ থেকে বেশি অনীহা থাকবে না বাচ্চার। যদি আঁশটে গন্ধর কথা বলে বাচ্চা মুখ ঘুরিয়ে থাকে, হাতের কাছে রাখুন একটুকরো লেবু। মাছের টুকরোয় হাল্কা করে লেবুর রস মাখিয়ে দিন। দেখবেন, গন্ধের অজুহাত উধাও হতে বাধ্য।
সবুজ শাকসবজি:
কচিকাঁচাদের ভাল রাখতে তরিতরকারির কোনও বিকল্প নেই। বাচ্চাদের ডায়েটে যতটা বেশি সম্ভব সাকসবজি রাখুন। আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ এবং অন্যান্য খনিজে ভরপুর তরকারি বাচ্চার বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।
শীতকাল নানা রকমের তরকারির জন্য আদর্শ সময়। বাজার থেকে কিনে আনুন ব্রকোলি, পালং শাক, বাধাকপি, ফুলকপি, বিনস, গাজর এবং বিট। অনেক সময়েই বাচ্চা তরকারি খেতে চায় না। তাই, দরকার হলে একটু মুখরোচক করে রাঁধুন। বা, এমন করে সাজিয়ে পরিবেশন করুন, যাতে মনে হয় রামধনুর মতো রঙিন। তবে খেয়াল রাখবেন এ সব করতে গিয়ে যেন খাদ্যগুণ নষ্ট না হয়। সবজি সেদ্ধ করা জলও খুব পুষ্টিকর। সেটা দিয়ে স্টু বানিয়ে দিন। বিভিন্ন সবজি, ডিমসেদ্ধ এবং চিকেনের টুকরো দিয়ে বানিয়ে ফেলুন স্যালাড। একসঙ্গে অনেক রকম পুষ্টিকর খাবার হাজির বাচ্চার সামনে।
বিভিন্ন সবজি, ডিমসেদ্ধ এবং চিকেনের টুকরো দিয়ে বানিয়ে ফেলুন স্যালাড।
সয়াবিন:
আপনি যদি নিরামিষাশী হন, তা হলে প্রোটিনের জন্য খেতেই হবে সয়াবিন। বাচ্চাদেরও ছোট থেকে সয়াবিন খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরি করুন। স্বাদের দিক দিয়ে মাংসের কাছাকাছি হওয়ায় বাচ্চারা অনেক সময় সয়াবিন খেতে পছন্দও করে।
ডাল:
মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে ভাতের সঙ্গেই আসে ডাল। ছোট থেকেই বাচ্চাকে নানারকমের ডাল খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। এক একদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এক এক রকম ডাল রাঁধুন। দরকারে, দু’তিন রকম ডাল মিশিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন।
ফল:
সবসময় দামি ফল কিনে খাওয়াতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। আপেল, মুসাম্বি, আঙুরের দিকে সবসময় না ঝুঁকে কিনুন পেয়ারার মতো ফল। বাচ্চাকে অবশ্যই দিন সবেদা, পানিফল, বাতাবি লেবুর মতো মরসুমি ফলও। ফলের রসের বদলে বাচ্চাকে বলুন গোটা বা কাটা ফল কামড়ে খেতে। এতে পুষ্টিকর ফাইবার ডায়েট থেকে বাদ পড়বে না। দাঁতের গঠনও ভাল হবে।
দুধ খেতে বায়না করে না, এমন বাচ্চার দেখা পাওয়া দুষ্কর।
দুধ:
লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, মাংসপেশির গঠন এবং হাড় মজবুত করার জন্য দুধের কোনও বিকল্প নেই। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি-র মূল উৎস দুধ। এহেন অপরিহার্য খাবার খেতে বায়না করে না, এমন বাচ্চার দেখা পাওয়া দুষ্কর। তাই, সে রকম হলে, পুডিং, কাস্টার্ড, মিল্কশেক, চিজ, নিদেনপক্ষে টক দই রাখুন বাচ্চার ডায়েটে। হেল্থ ড্রিঙ্ক না থাক, দুধ যেন সে খায়, সে দিকে খেয়াল রাখুন। যদি, দুধ থেকে বাচ্চার পেটের অসুখ বা অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে, তা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ডায়েট চার্ট তৈরি করুন।
মনে রাখবেন, মহার্ঘ্য থাবারের তুলনায় ঘরোয়া খাবারেই লুকিয়ে থাকে সুস্থতার চাবিকাঠি। তাই, চটজলদি এক গ্লাস হেলথড্রিঙ্ক না বানিয়ে সন্তানকে ঘরে তৈরি খাবার বেশি করে দিন। সে রকম খাদ্যাভ্যাস বাচ্চার সুস্থতা এবং আপনার পকেট, দু’দিকের জন্যই ভাল।
আরও পড়ুন: আবরণের অন্তরালে...
আরও পড়ুন: এখন থেকেই শুরু করুন ঘরোয়া যত্ন, শীতে আর পা ফাটবে না
(ছবি: শাটারস্টক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy