Advertisement
E-Paper

হারিয়ে যাওয়া খাবারে লুকিয়ে আছে ইতিহাস, তাঁর খোঁজ নিয়ে দেশে এলেন ব্রিটিশ তরুণী

সময়ের সঙ্গে বহু খাবার হারিয়ে যায়। আবার খাবারই ধরে রাখে বহু ইতিহাস। জয়পুরে সাহিত্যসভায় এসে সে সব নিয়েই আলোচনায় বসলেন ব্রিটিশ লেখিকা।

— নিজস্ব চিত্র।

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৪
Share
Save

আসলে সব কথাই খাবারের প্লেটে ধরা থাকে!

খাওয়াদাওয়ার উপরে পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ লেখিকা ক্যারোলিন ইডেনের মত অন্তত তেমনই। কথাটির যে যথেষ্ট ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে, তা অবশ্য এ দেশের সাংবাদিককে বলে দিতে হয় না। বেশি নয়, ৭০-৮০ বছর আগের ইতিহাস দেখলেই তা দিব্যি মালুম হয়। তবে ক্যারোলিন সাম্প্রতিক সময়ের কথা লেখেন। যুদ্ধে জর্জরিত এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করেন।

সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন ক্যারোলিন। নাম ‘কোল্ড কিচেন’। সেই কাজের জন্য উজবেকিস্তান থেকে শুরু করে আজারবাইজান হয়ে নানা দেশে ঘুরেছেন। গিয়েছেন রাশিয়ায়। সাবেক সোভিয়েত অঞ্চলের খাওয়াদাওয়ার সংস্কৃতি সামগ্রিক অর্থে কী ভাবে বদলে যাচ্ছে, তা নিয়েই কথা বলছেন আজকাল। তিনি বলেন, ‘‘এক ধরনের চালের চাষ প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ফলে নানা ধরনের খাবার, যা কিনা সেই চাল দিয়ে তৈরি হত, তা-ও আজকাল পাওয়া যাচ্ছে না।’’ এমন ঘটছে আরও নানা জায়গায়। নানা পরবের খাবারও হারিয়ে যাচ্ছে।

এ ভাবেও খাবার হারিয়ে যেতে থাকে। তার সঙ্গে বদলে যায় সংস্কৃতি। আর তা হয়তো অনেকে নজরই করেন না অস্থির সময়ে, আরও গুরুতর ঘটনার মাঝে। এমন কিন্তু প্রথম ঘটেনি। এর আগেও ঘটেছে। কিছু খাবার হারিয়েছে, কিছু খাবার তৈরি হয়েছে। ক্যারোলিনকে বলা গেল দেশভাগের সময়ের কথা। লেখিকা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘‘আমি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ— তিন জায়গাতেই গিয়েছি। খাবার দারুণ!’’ কিন্তু সে সময়ে কত খাবার হারিয়ে গিয়েছে, তা কি তাঁর জানা? লিখবেন কি কখনও? আবার দেশভাগের পরে পরিস্থিতির চাপে পড়ে যে সাধারণ কত পদের জন্ম হল, তা কি তাঁর জানার ইচ্ছা আছে? ভারতে বসে কথা বলছেন ব্রিটিশ নাগরিক। তাই খানিক যেন আড়ষ্ট। বলেন, ‘‘আমি এ দেশে এসেছি অনেক বার। খুব ভাল লাগে আসতে। কিন্তু ভারতীয় কোনও কিছু নিয়েই লিখতে বড় চিন্তা হয়। এত বৃহৎ দেশ। ইতিহাসও বহুমাত্রিক।’’

ক্যারোলিনের বই ‘কোল্ড কিচেন’-এর প্রচ্ছদ।

ক্যারোলিনের বই ‘কোল্ড কিচেন’-এর প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত।

কথা গড়ায় সময়ের সঙ্গে খাবারের রূপবদল নিয়ে। ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এ এসেও সে সব নিয়ে মঞ্চে আলোচনা করেছেন ক্যারোলিন। তাঁকে জানানো হল, বিশ্বায়নের যুগে কলকাতা শহরে যত না মোচার চচ্চড়ি পাওয়া যায়, তার চেয়েও বেশি পাওয়া যায় পাস্তা। মুচকি হাসেন। মেনে নেন বিদেশিনী। বলেন, ‘‘আমাদের দেশেও এমনই হাল। এক একটা সময় থাকে, যখন এক ধরনের খাবার বেশি ছড়িয়ে পড়ে। বাকি সব উধাও হয়ে যায়। আমি সে সব দিক নিয়েই কথা বলতে চাই। কারণ, অনেকে তো তা মনেই রাখেন না।’’ হারিয়ে যাওয়া রান্নাও তাই আজকাল শিখিয়ে দেন তিনি। প্রণালী লিখে দেন।

হারিয়ে যাওয়া রান্নার প্রণালী মনে করানো আসলে ইতিহাস লেখার সমান বলেই মনে করেন এই লেখিকা। শুধু তো প্রণালী নয়, তার সঙ্গে অনেক গল্প ধরা থাকে। ঠিক যেমন শীতকালীন পিঠে বানানোর চল। বাংলার এক সময়ে মকর সংক্রান্তির দিন এক জায়গায় জড়ো হয়ে মহিলারা পিঠে বানাতেন। পিঠে বানানোর অনেক ঝক্কি। হাতে হাতে করলে হয়েও যেত। সময় বদলেছে। একসঙ্গে রান্নার চল কমেছে, তেমন হারিয়ে গিয়েছে বহু ধরনের পিঠে। এখন অনেকেই শুনলে অবাক হন, কিন্তু এক একটি বাড়িতে কত রকমের পিঠে হত, তা কি আর জানেন এখনকার সংসারীরা!ক্যারোলিনও সে ইতিহাসই লেখেন। ঘুরে ঘুরে। নানা দেশের কথা তুলে আনেন। কখনও বিশ্বায়নের প্রভাব আসে সে গল্পে, কখনও বা যুদ্ধ থাকে কেন্দ্রে।

Jaipur Literature Festival Food History Food and Culture Jaipur Caroline Eden

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}