Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
diabetic

ডায়াবিটিসে ভুগছেন? করোনা থেকে বাঁচতে কী করবেন?

ডায়াবিটিস বশে না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে যে কোনও সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাড়ে কোভিডের আশঙ্কাও।

ডায়াবিটিস বশে না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে যে কোনও সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাড়ে কোভিডের আশঙ্কাও।

ডায়াবিটিস বশে না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে যে কোনও সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাড়ে কোভিডের আশঙ্কাও।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ১৬:২২
Share: Save:

ডায়াবেটিকদের বেলায় কোভিড-১৯-এর ছোবল অন্যদের তুলনায় বেশি মারাত্মক বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। তাই বাঁচার উপায় বলতে, রসনায় তালা ঝুলিয়ে, আরাম-বিরামে ক্ষান্তি দিয়ে রোগটাকে বশে রাখার চেষ্টা করা উচিত। না হলে হার্ট থেকে শুরু করে কিডনি, চোখ, ত্বক, শিরা-ধমনী, সবার যেমন স্বাস্থ্য খারাপ হবে, বাড়বে সংক্রমণের আশঙ্কাও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ভারতে ডায়াবিটিসে ভুগছেন প্রায় ৬ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ। একক দেশ হিসেবে সারা পৃথিবীতে ভারতেই ডায়াবিটিস সবচেয়ে বেশি। মহামারির মতো সে বাড়ছে নিঃশব্দে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে সারা পৃথিবীতে ২৩ কোটি ২০ লক্ষ ডায়াবেটিক রয়েছেন। সেই হিসেবে যত্নের মান না বাড়লে ২০৩০-এ এই সংখ্যাটা হবে, ৩৬ কোটি ৬০ লক্ষ। সেখানেও ভারতে বৃদ্ধির হার সবচয়ে বেশি। তাই কোভিড-১৯ নিয়েও চিন্তাও আমাদের বেশি।

কেন এমন?

এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, “ডায়াবিটিস বশে না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে যে কোনও সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাড়ে কোভিডের আশঙ্কাও। ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস বা ‘ডিকেএ’ নামের সমস্যা হলে কোভিডের দরুণ যে সব জটিল পরিস্থিতি হচ্ছে তা সামলানো খুব কঠিন হয়ে যায়। ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে একটা নতুন ওষুধ বাজারে এসেছে, সেই ওষুধে রক্তে শর্করার ভাগ স্বাভাবিক থেকে যায় বলে ‘ডিকেএ’ হলেও অনেক সময় তা চিকিৎসক বুঝতে পারেন না। কাজেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ামাত্র ডায়াবিটিসের জন্য কী কী ওষুধ খাচ্ছেন তা চিকিৎসকদের জানিয়ে রাখুন।’’

আরও পড়ুন: অনেকেই উপসর্গ বুঝতে পারছেন না, কী হলে আপনার অবিলম্বে টেস্ট করানো দরকার?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কোভিড এড়ানোর নিয়ম মানার সঙ্গে এই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সুগারকে নিক্তির মাপে আনতে মেনে চলুন কিছু বিষয়।

সুগার ও সুগারজনিত বিপদ সামলাতে

• রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে যে ভাবে চলছিলেন, সে ভাবেই চলুন। ঘরে আছেন বলে ব্যায়াম যেন বন্ধ না হয়। কারণ এতে ওজন-ডায়াবিটিস যেমন বশে থাকে, বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

• জল বেশি খান। এমনিও তা করা দরকার। তাছাড়া সুগারের কিছু ওষুধ আছে যা খেলে জল বেশি না খেলে সমস্যা হতে পারে।

• ধূমপান করবেন না। ‘না’ মানে ‘না’। কারণ করোনাভাইরাস যে রিসেপ্টার দিয়ে শরীরে ঢোকে, ধূমপান করলে ওই রিসেপ্টার বেশি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে। এছাড়া ধূমপান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে।

• অনেক ডায়াবেটিক রোগীরই রক্তচাপ বেশি থাকে। অনেকেই ভুয়ো তথ্যে ভরসা করে ডায়াবিটিসের যে সব ওষুধের নামের শেষে ‘প্রিল’ বা ‘সার্টান’ আছে, সে ওষুধ খাওয়া নিজেরাই বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতে কিন্তু মারাত্মক বিপদ হতে পারে। কারণ কোনও গাইডলাইনেই কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটা বলা হয়নি যে এ সব ওষুধে কোভিডের আশঙ্কা বাড়ে। যদি গাইডলাইনে আসে তখন তা জানিয়ে দেওয়া হবে। তার আগে পর্যন্ত এই সব কাণ্ড করে বিপদ বাড়াবেন না।

• টেনশন করবেন না। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে কথাটা বলা যত সহজ, করা ততটা নয়। তবু চেষ্টা করুন। কারণ টেনশন করলে লাভ তো হবেই না, বরং এতে ডায়াবিটিস যেমন বেড়ে যেতে পারে, কমতে পারে সবারই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। কাজেই দ্বিগুণ বিপদ।· সাধারন জ্বর-সর্দি-কাশি হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না। কারণ নানা ওষুধের নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে ডায়াবিটিসের উপর।

• ডায়াবিটিস কোনও কারণে বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়া বুঝে করুন। ভাত-রুটি কম খেয়ে সবুজ শাক-সব্জি খাওয়া বাড়ান। হাঁটাহাটি ও ব্যায়াম বাড়ান।

• ডায়াবেটিস কিটো অ্যাসিডোসিস বা ‘ডিকেএ’ হলে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয়। সেটাকে কোভিডের উপসর্গের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। যদিও ডিকেএ-ও যথেষ্ট বিপজ্জনক।

আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণের সময় কোন কোন ফল বেশি করে খাবেন

ওষুধ, ইনহেলার হাতের কাছে রাখুন।

ডায়াবেটিকদের কোভিড-১৯ ঠেকানোর নিয়ম মানুন

সবাই যা যা করার কথা, আপনিও তাই করবেন। তবে একটু বেশি সতর্কতার সঙ্গে। যেমন:

• দিনে ৫-৬ বার হাত ধোবেন। কোনও কারণে বাইরে যেতে হলে বা বাইরের কিছু ধরলে ঘরে এসে জল ও সাবান দিয়ে কম করে ২০ সেকেন্ড হাত রগড়ে ধুয়ে নেবেন। স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবান কোনও অংশে কম নয়। একান্তই বাইরে বেরলে উপায় না থাকলে তখন একমাত্র স্যানিটাইজারের প্রশ্ন। এবং তাতে যেন ৭০ শতাংশের বেশি অ্যালকোহল থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

• রান্না, পরিবেশন ও খাওয়ার আগে হাত ভাল করে ধুয়ে নিন। নিজের থালা-বাটি-গ্লাস আলাদা করে নিন। কারও শ্লেশ্মাজনিত অসুখ হলে দরকারে জামা-কাপড়-তোয়ালেও আলাদা করতে হবে।

• নিতান্ত অপারগ না হলে রাইরে যাবেন না। অন্যরা একটু অনিয়মের ধকল সামলাতে পারলেও, আপনি হয়তো নাও পারতে পারেন। কাজেই কিছু জিনিস বেশি করে কিনে রাখুন। যেমন:

• পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর খাবার। শাক, সব্জি, ফল, চিকেন, মাছ, ডিম, ব্রাউন রাইস, হোল গ্রেন বা মাল্টি গ্রেন আটা ইত্যাদি। তবে বাজারে সবই পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই এক সপ্তাহের মতো কিনলেই হবে।

• হাতের কাছে চিনি-বাতাসা, মধু, ফলের রস, চকলেট জাতীয় মিষ্টিও কিছু রাখবেন। যদি হঠাৎ ডায়াবিটিস খুব কমে যায়, তখন কাজে আসবে।

• প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনসুলিন কিনে রাখুন। মেশিনে সুগার মাপার স্ট্রিপ কিনে রাখুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE