Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
noodles

সন্তান মোটা হয়ে যাচ্ছে? মেদের জুজু তাড়ান এই সব উপায়ে

শিশুর ওবেসিটি নিয়ে প্রথম থেকে না ভাবলে তা বড় সমস্যায় ফেলবেই। তাই কিছু নিয়ম প্রথম থেকে মানা উচিত। তা কেমন হবে সে সব মিয়ম?

মেদ বাড়ছে শিশুদের শরীরে, সাবধান না হলে বিপদ আসন্ন। ছবি: শাটারস্টক।

মেদ বাড়ছে শিশুদের শরীরে, সাবধান না হলে বিপদ আসন্ন। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ১৪:২২
Share: Save:

ইঁদুর দৌড় কেবল আমার-আপনার নয়। আধুনিক জীবনে ব্যস্ততার ছায়া পড়েছে বাড়ির খুদে সদস্যটির উপরেও। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা গুণে পারদর্শী হয়ে উঠতে গিয়ে তাদের হাতেও সময় বড় কম। আর এই সময়ে ব্যস্ততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মা-বাবারা পড়েছেন ফ্যাসাদে। কখনও বা শিশুর ঘুম কমিয়ে দিতে হচ্ছে সিলেবাসের চাপে। কোথাও আবার মা-বাবার প্রত্যাশার বহর চেপে বসছে শিশুর কাঁধে। সেই মারণচাপ স্ট্রেস হয়ে কামড় দিচ্ছে শৈশবে। ফলে স্ট্রেসজনিত হতাশা, মানসিক অসুখ গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ছে শিশুর জীবনে। আর এই সবগুলিই ডেকে আনছে খাওয়ার অনিয়ম, কম ঘুম, অবৈজ্ঞানিক ডায়েট। যার জেরে ওবেসিটি তাড়া করে বেড়াচ্ছে অকালেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভারতের মতো প্রায় গোটা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শিশুদের মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরাও এমন একটি পরীক্ষা করেন। এর আগেও ৩-১২ বছর বয়সি হাজার খানেক শিশু নিয়ে এমনই আর একটি পরীক্ষা করেন এই ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। ২০১৭ সালে করা পরীক্ষাতেও ৩ বছর বয়সিদের জন্য টিভি দেখার সময়, খাওয়া, ঘুম সব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। ওবেসিটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, এদের মধ্যে ৪১ শতাংশ শিশু শোওয়ার সময় মেনে চলত, ৪৭ শতাংশ নির্দিষ্ট সময় খেত ও ২৩ শতাংশ শিশু টিভি দেখার নিয়ম মানত। প্রায় ১১ বছর বয়সে দেখা যায় পরীক্ষারত শিশুদের মধ্যে ৬ শতাংশ ওবেসিটির শিকার। এবং তারাই নিয়ম মানতে ব্যর্থ হয়েছে সার্বিক ভাবে। এ বারও প্রায় ১২ হাজার শিশুকে নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা যায়, নিত্য অনিয়মই তাদের ওজন বাড়িয়ে চলেছে হু হু করে।

ওবেসিটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চিকিৎসকরাও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘ছোটবেলা থেকেই শিশুকে নির্দিষ্ট নিয়মে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। মা-বাবাকেও মানতে হবে কিছু নিয়ম। রান্না করতে ইচ্ছে করছে না বলে শিশুকে যথেচ্ছ সাপ্লিমেন্ট বা হেলথ ড্রিঙ্ক খাইয়ে রাখা, কিংবা যখন তখন বায়না করলেই চকোলেট দিয়ে বায়না মেটানো, ঘুম থেকে তুলে পড়তে বসানো এ সব অভ্যাস বদলাতেই হবে। ওবেসিটি নিয়ে প্রথম থেকে না ভাবলে তা বড় সমস্যায় ফেলবেই। তাই কিছু নিয়ম প্রথম থেকে মানা উচিত।’’

আরও পড়ুন: নিরামিষ ভালবাসেন? মাছ-মাংস-ডিম ছাড়াই শরীরকে সুস্থ ও ছিপছিপে রাখুন এই উপায়ে

বাড়িতেই নুডলস বা ফ্রোজেন ফুড এনে বানিয়ে দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তাতে রাশ টানুন।

পর্যাপ্ত ঘুম: স্কুল স্তর পর্যন্ত শিশুর বুদ্ধি ও দেহের বিকাশ ঘটে। তাই এই সময় ঘুমে কোপ বসালে অসুখ সেই জায়গাটা পূরণ করবে। তাই যতই পরীক্ষা-পড়াশোনাজনিত চাপ থাকুক না কেন ঘুমের সময় কোনও ভাবেই সাত-আট ঘণ্টার কম করা যাবে না।

খাওয়া: পুষ্টিবিদের কাছে যান শিশুকে নিয়ে। ওর নির্দিষ্ট বয়সে ডায়েট চার্ট ঠিক কেমন হবে তা মেনে চলুন তাঁদের পরামর্শ মতো। ডায়েট মানেই শিশুর সব প্রিয় খাদ্য বাদ, এমন নয়। চাইল্ড ডায়েটে চকোলেটও থাকে। তাই ভয় নেই। কেবল দরকার কতটা খাবে আর কখন খাবে তা নিয়ে পরিমিতিবোধ। যা কিনা এই ডায়েট থেকে পাবেন।

স্ট্রেস: মানসিক চাপ বাড়তে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ করবেন না। সকলের মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি সমান হয় না। স্রেফ পড়াশোনা দিয়েই যে বড় হতে হবে এমনও নয়। বরং ওর আগ্রহের জায়গা খুঁজে বার করুন। সেটাতেই জোর দিন। অনেক অভিভাবক বুঝেই উঠতে পারেন না সন্তান কিসে আগ্রহী। তেমন হলে অকারণ চাপে পড়বেন না। ওকে ওর মতো বড় হতে দিন। একটা বয়সের পর ও ঠিকই ওর দিশা খুঁজে পাবে। অনেকে নিজের অপূর্ণ শখ চাপিয়ে দেন সন্তানের উপর। একেবারেই তা করবেন না। আপনি যা পারেননি তা ও পারবে এই ভাবনার গোড়াতেই গলদ রয়েছে। অন্য কারও সঙ্গে তুলনাও নয়। মনে রাখবেন, দু’জন অন্য মানুষ। তাদের মেধা, বুদ্ধি সবই আলাদা। বরং চাপমুক্ত হয়ে বড় হতে দিন ওকে। রাশ আপনার হাতে থাক, সময়ে-অসময়ে তা কড়া হাতে টানুন, কিন্তু অকারণ ভীতি বা চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না।

ফাস্ট ফুড: বায়না মেটাতে যখন তখন বাড়িতেই নুডলস বা ফ্রোজেন ফুড এনে বানিয়ে দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তাতে রাশ টানুন। প্যাকেটবন্দি সুপ ও ঠান্ডা পানীয়ও এড়িয়ে চলুন। এ সবে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও প্রিজারভেটিভসে থাকা সোডিয়াম ফ্যাট বাড়াবেই বাড়াবে। বরং বাড়িতে বানানো খাবার দিন। টিফিনকে মুখরোচক করে তুলতে নতুন নতুন চটজলদি রান্নার রেসিপি জানুন। একান্তই না পারলে হাত-রুটি, মুড়ি, ওটস, চিঁড়ের পোলাও, সপ্তাহান্তে একটু-আধটু লুচি এ সবে আস্থা রাখুন। নিয়ন্ত্রণ রেখে মিষ্টিও দিতে পারেন।

আরও পড়ুন: এ সব খাবারই উস্কে দেয় থাইরয়েডের সমস্যা, সুস্থ থাকতে পাত থেকে আজই বাদ দিন এদের

শরীরচর্চার সময়ে কোপ বসাবেন না।

চকোলেট: বায়না মেটাতেই হোক বা খুদে দস্যিকে শান্ত রাখতেই হোক, সব সময় কথায় কথায় চকোলেট একেবারে নয়। দাঁতের ক্ষতি তো বটেই ওজনও হু হু করে বাড়তে পারে এতে। সপ্তাহে দু’টির বেশি চকোলেট বার (ছোট বা মাঝারি আকারের) দেবেন না। তাও যদি ডার্ক চকোলেট হয়, তো খুবই ভাল।

ফ্রিজের জল: ফ্রিজ খুলেই ঢকঢক করে ঠান্ডা জল নিজেও খাবেন না, বাচ্চাকেও দেবেন না। ঠান্ডা জল ওবেসিটির জন্য খুব দায়ী। এই অভ্যাসকে একেবারেই প্রশ্রয় নয়।

পর্যাপ্ত জল: শরীরে জলের অভাব হলে শরীরও সুযোগ বুঝে জল জমিয়ে রাখবে। এতেও শরীর ফোলে। তাই শিশুকে নিয়ম করে জল খাওয়ার অভ্যাস করান।

ভাত কম: সারা দিন ভাত পেটে পড়ল না বলে কান্নাকাটি করবেন না। ভাত কম খেলেই ‘ও কিছু খায় না’ বলে অকারণ দুশ্চিন্তাও নয়। বরং ছোট থেকেই ভাত কম দিন। না দিলেও ক্ষতি নেই। ভাতের জায়গায় দু’-একটি রুটি খাক। ভাত খেলেও পরিমাণে কম দিয়ে সেই খিদে মেটান তরিতরকারি, মাংস, মাছ, পনির, দুধ, টক দই এ সব দিয়ে।

শরীরচর্চা: শুধু পড়াশোনা আর অন্যান্য গুণে দক্ষ করে তুলতে গিয়ে ওর ছুটোছুটি করার সময়টা কেড়ে নেবেন না। খেলার মাঠ সে ভাবে না থাকলে বা খেলার সঙ্গী না পেলে যে কোনও যোগাসন ক্লাসে বা সাঁতারে ভর্তি করে দিন। এটাকেও পেশার মতো নিয়ে নেবেন না। হালকা চালেই অভ্যাস চলুক, স্রেফ শরীর ঠিক রাখতে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy