শিশুর মস্তিষ্কে শান দিতে ছোট থেকেই নজর রাখুন বিশেষ কিছু দিকে। ছবি: শাটারস্টক।
সন্তানের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও উন্নত মেধার চাহিদা প্রায় সকল অভিভাবকের মধ্যেই থাকে। একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল, ‘আই কিউ’ বা বুদ্ধিমত্তা নতুন করে বাড়ানো যায় না। জন্মের সময় থেকেই তা ধ্রুবক। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আধুনিক গবেষণা বার বার প্রমাণ করেছে, জন্মের পর থেকে মোটামুটি ৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মোটামুটি ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বুদ্ধিমত্তার ‘গোড়া’য় জল দেওয়া সম্ভব বলে দাবি ‘আমেরিকান ব্রেন ফাউন্ডেশন’-এর বিজ্ঞানীদের।
কিন্তু বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটানো মানেই কি আরও বেশি করে পড়াশোনায় মত্ত করে তোলা? বুদ্ধির প্রশ্ন ও অঙ্কের জালে আরও বেশি ব্যস্ত রাখা শৈশব? আদতে তেমনটায় সায় নেই বিশেষজ্ঞদের। শিশুদের মস্তিষ্ক ও তাদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন দিল্লির স্মৃতি চৌধুরী গোয়েঙ্কা। তাঁর মতে, ‘‘ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার চাপ দিয়ে সন্তানের মেধার উন্নতি ঘটাবেন এমনটা মনে করে অনেকে। এই ধারণা একেবারে ভুল। বরং শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে পড়াশোনার বাইরে আরও বিশেষ কোনও সৃজনশীল কাজে তাদের রপ্ত রাখা খুব জরুরি।’’
কেমন সে সব কাজ? কী ভাবেই বা তারা সন্তানের মস্তিষ্ককে পরিশ্রম করিয়ে তার কার্যক্ষমতা বাড়াবে? রইল সে সবের হালহদিশ।
শব্দছক-সুদোকু: ব্রেন গেমসের তালিকায় এই ধরনের খেলা সুপরিচিত। ছোটদের নানা পত্রিকায় বা অনলাইনে এমন শব্দছক ও সুদোকুর সন্ধান মেলে, যা ছোটদের মাথা খাটানোর জন্যই তৈরি। ওদের চেনা শব্দের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে এমন শব্দছক নিজেও বানিয়ে দিতেই পারেন। প্রতি দিন পড়াশোনার ফাঁকে সে সব অভ্যাস করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। নতুন শব্দের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারে শিশু।
দাবা: কোনও খেলা শিখলেই যে সেই খেলায় দক্ষ খেলোয়াড় হতে হবে, বা সেই খেলাকেই পেশা হিসেবে নিতে হবে এমন কোনও কথা নেই। শুধু বুদ্ধিমত্তার গোড়ায় শান দিতেও শিশুকে রপ্ত করাতে পারেন দাবার ছক। অন্য যে কোনও খেলার চেয়ে এই খেলা শিশুর মস্তিষ্ককে বেশি পরিশ্রম করায় ও মানসিক ভাবেও অনেক শান্ত ও দৃঢ় হতে সাহায্য করে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘দাবা মূলত ‘ব্রেন-জিম’। জিমে গিয়ে খাটাখাটনি করলে যেমন শরীরের পেশী বাড়ে, তেমনই দাবায় অভ্যস্ত হলে মস্তিষ্কের সরাসরি পরিশ্রম হয়। তাই এটিও মস্তিষ্কের মেদ ঝরায়। এই খেলায় মনোযোগ ও ফোকাস যেমন বাড়ে, তেমনই বাড়ে পরিকল্পনা করার ক্ষমতাও।’’
অ্যাবাকাস: বড় বড় অঙ্কের হিসেব খুব সহজ উপায়ে কোনও পদ্ধতির মাধ্যমে মুখে মুখে করে ফেলা বা দ্রুত কষতে পারার উপায় যদি ছোটবেলা থেকেই আয়ত্তে আনতে পারে, তা হলে মস্তিষ্ক ছোট থেকেই সক্রিয় থাকে। তাই অ্যাবাকাসে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন সন্তানকে। একান্তই তা সম্ভব না হলে ছোট ছোট অঙ্কের হিসেব মুখে মুখে করতে উৎসাহিত করুন। রপ্ত করান সেই কৌশল।
যন্ত্রানুসঙ্গীত: এমআরআই স্ক্যানেও দেখা গিয়েছে, ছোটবেলা থেকে কোনও না কোনও যন্ত্রসঙ্গীত শিখছে এমন শিশুর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেশি। বিজ্ঞানীদের দাবি, নোটেশন মনে রাখা, বা ছন্দ-তাল মাথায় রাখার অভ্যাস তার সঙ্গে সুর মস্তিষ্কের আঙ্কিক দক্ষতা ও রিজনিং সমাধান করার ক্ষমতা বাড়ায়।
শ্বাসের ব্যায়াম: বড় করে স্বাস নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে সেই শ্বাস ছাড়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ানো। কাজ বলতে এটুকুই। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষণা অনুসারে, আট সপ্তাহ ধরে টানা এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে হাইপোথ্যালামাসের একের চার ভাগ অংশ বেশি সক্রিয় হতে শুরু করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy