পঞ্চকন্যা। আমেরিকা থেকেই বাংলার কোভিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চকোরী, পারমিতা, অনিন্দিতা, মণিদীপা, সৃজনীরা। ফাইল চিত্র
তাঁরা জুড়ে গিয়েছেন নেটমাধ্যমে। পাঁচ বঙ্গকন্যা। ৪ জন থাকেন আমেরিকায়, একজন কলকাতায়। লড়ছেন বাংলার জন্য। কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের মাটিকে ঘিরে উদ্বেগই তাঁদের একে অপরের কাছে এনেছে। সংসার, সন্তান সামলেও তাই ওঁরা মাঝরাতে ফোন ধরে কাউকে পাইয়ে দিচ্ছেন হাসপাতালের শয্যা, কারও বাড়িতে ওঁদের তত্ত্বাবধানেই পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেন। শুধু এই ব্যবস্থা করেই থামেননি। ৩০ মে ২০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠাচ্ছেন কলকাতায়। দিন-রাত অর্থ সংগ্রহ করছেন। যত মানুষের প্রাণ বাঁচানো যায়, চালিয়ে যাচ্ছেন সেই চেষ্টা। ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।
‘ঐকতান’ নামে একটি ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক মঞ্চের হয়ে কাজ করছেন পারমিতা ঘোষ, অনিন্দিতা দাস ঘোষ, মনিদীপা দাস ভট্টাচার্য, চকোরী মিত্র, সৃজনী গুহঠাকুরতা। অনিন্দিতা,পারমিতা ও চকোরী থাকেন নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটে, আর মণিদীপা থাকেন সানফ্রানসিস্কোর বে এরিয়ায়। সৃজনী থাকেন কলকাতায়। ভারতের ও মূলত পশ্চিমবঙ্গের করোনা পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে তাঁরা ঠিক করেন পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়ানোর। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহের কাজ। আমেরিকায় বসবাসকারী বাঙালিদের কাছে অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। প্রবাসী বাঙালিরাই শুধু নন, এগিয়ে আসেন অন্যান্য জায়গার মানুষও।
তাঁদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। আছে সংগঠনের ফেসবুক পেজ। দেশের বাইরে বসবাসকারী কারও পরিজন পশ্চিমবঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁরা সেই পেজে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করছেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনের কথা জানানো হচ্ছে রাজ্যে কর্মরত কোনও স্বেচ্ছসেবী সংগঠনকে। দ্রুত চিকিৎসা পাচ্ছেন আক্রান্ত। শুধু চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়াই নয়, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলার বেশ কিছু জায়গায় অর্থ সংগ্রহ করে ফেস মাস্ক, ফেসশিল্ড, স্যানিটাইজার, গ্লাভস, হেড ক্যাপ এবং পিপিই কিটও পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে তাঁরা পৌঁছে দিয়েছেন অর্থ। যা দিয়ে ‘সন্ধি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিদিন প্রায় ৫০০ রোগী ও তাঁদের পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।
ঐকতান নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান দেবপ্রতিম ঘোষ বলেন, “যে অর্থ আমেরিকার বাঙালি ও অন্যান্যরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তার সাহায্যে রাজ্যে অক্সিজেন কনসেনট্রের পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে সেই চেষ্টা সফল হচ্ছে। ঐকতানের সংগৃহীত অর্থে দশটি এবং সেই সংস্থার দেওয়া মোট ২০টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ৩০ শে মে, পৌঁছবে কলকাতা। তুলে দেওয়া হবে কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে।” তবে মূল কাজটি করছেন পঞ্চকন্যাই। মণিদীপা বললেন, “মজার বিষয় হল আমরা এই পাঁচজন একে অপরকে কখনও দেখিনি। আজ দেশের সঙ্কটে যেন আমরা বাঁধা পড়েছি এক অদৃশ্য বন্ধনে। যাঁরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সবাইকে প্রাণ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তবে কষ্ট হয় তখন, যখন অনেক চেষ্টা পরেও কোনও একজনকে বাঁচানো যায় না। তবু জানি, অন্ধকারের শেষে আলো আছে। আমরা এককাট্টা, সেই আলো খুঁজে বার করবই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy