গ্রাফিক — শৌভিক দেবনাথ।
বহুজাতিক সংস্থার তথাকথিত ‘ভাল’ চাকরি। অথচ সেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার চার মাসের মধ্যেই আত্মহত্যা করতে হল বছর ২৬-এর এক তরুণীকে। বাবা-মায়ের অভিযোগ, মেয়ে কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছেন। আর সেই দাবি ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভারতের শ্রম আইন কি তবে বদলানো দরকার? যাতে কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবন, দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে!
গীতার উদাহরণ তুলে কর্মসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, শ্রীকৃষ্ণও বলে গিয়েছিলেন, জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ভারসম্য বজায় রাখার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বহুজাতিক বা কর্পোরেট সংস্থাগুলি সেই ভারসম্যের বিপরীত মেরুতে বাস করে। ইনফোসিসের মতো সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তিও বলছেন, ভারতের তরুণ প্রজন্মের উচিত দেশের উৎপাদনের কথা ভেবে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা!
বিতর্কের আবহে টানা হচ্ছে তুলনাও। অন্য কয়েকটি দেশের কর্মক্ষেত্রগুলির কথা টেনে এনে অনেকেই বলছেন, সেখানকার শ্রম আইন অনেক বেশি উদার। ওই সব আইন এ দেশেও চালু হওয়া উচিত। বিশেষ করে বিদেশের পাঁচটি আইন অবিলম্বে ভারতে চালু করার দাবি তুলেছেন অনেকেই।
১। কাজের পরে কাজ নয়: রাইট টু ডিসকানেক্ট। অর্থাৎ, কাজের সময়ে কাজ, শেষ হওয়ার পরে আর কাজ সংক্রান্ত কোনও কথোপকথন বা সহায়তা না করার অধিকার রয়েছে কর্মীর। ২০১৭ সালে ফ্রান্স ছিল প্রথম দেশ, যেখানে এই রাইট টু ডিসকানেক্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে স্পেন, বেলজিয়াম, ইতালি, আয়ারল্যান্ডেও তা চালু হয়। পর্তুগালে তো কাজের সময়ের পরে এক কর্মীকে ফোন করার জন্য জরিমানা দিতে হয়েছিল এক ম্যানেজারকে।
২। সপ্তাহে চার দিন কাজ: কর্মীরা ভাল থাকলে কাজও ভাল হবে। এই ভাবনা থেকেই বহু দেশ সপ্তাহে চার দিন কর্মদিবসের নীতি চালু করেছে। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জাপান ছাড়াও বহু দেশ রয়েছে এই তালিকায়।
৩। ছুটি বাধ্যতামূলক: জানেন কি অস্ট্রিয়ায় এক জন কর্মী যদি কোনও সংস্থায় অন্তত ৬ মাস কাজ করেন, তা হলে তাঁর অন্তত পাঁচ সপ্তাহের সবেতন ছুটি প্রাপ্য! এটাই বলা হয়েছে সে দেশের শ্রম আইনে। ভারতের বহু সংস্থায় যেখানে উর্ধ্বতনদের আচরণে ছুটি নেওয়ার জন্য কর্মীদের অপরাধবোধ হয়, সেখানে এই নিয়ম প্রশংসনীয়।
৪। চাকরি না হারিয়েই দীর্ঘ বিশ্রাম: বেলজিয়ামে এক জন কর্মী তাঁর কাজ থেকে এক বছরের বিশ্রাম নিতে পারেন। তা সত্ত্বেও তাঁর চাকরি যাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। এই এক বছরে তিনি কিছু না করতে পারেন আবার পার্ট টাইম চাকরিও করতে পারেন। সরকার তার পরেও তাঁকে নিয়মিত অর্থসাহায্য করবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ছুটি বা বিশ্রাম ছ’বছর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।
৫।সাপ্তাহিক শ্রমের সময়সীমা: ভারতে এক জন সাধারণ কর্মী সপ্তাহে ৪৬.৭ ঘণ্টা কাজ করেন। সাপ্তাহিক শ্রমের এই সময়সীমা ভারতকে পৌঁছে দিয়েছে সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক শ্রমের প্রথম ১৫টি দেশের মধ্যে। দেখা গিয়েছে, ভারতে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর্মীরা সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টাও কাজ করেন। অথচ ফ্রান্সে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি কোনও কর্মীকে কাজ করতে দেওয়া হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy