সারাদিন না খেয়ে থাকার চেয়ে একটু ভেবে বেছে নিতে পারেন কম ক্ষতিকর রাস্তার খাবার। ফাইল ছবি।
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে কথা। পছন্দের কলেজে পড়তে বাড়ি ছেড়ে শহরে এক ভাড়াবাড়িতে থাকে সে। সকালে উঠে খাবার তৈরি করে কলেজ পৌঁছতে গিয়ে টিফিন নেওয়ার সময় আর হয় না। অথচ ক্লাস, টিউশন সব সেরে বাড়ি ফিরতে-ফিরতে কেটে যায় প্রায় গোটা দিনটাই।
কর্পোরেট সংস্থায় নতুন চাকরি পেয়েছে অভি। সকাল দশটায় বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে কোনও দিন রাত দশটা তো কোনও দিন এগারোটা। বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে গেলে তা দিয়ে সেরে নেওয়া যায় লাঞ্চ। কিন্তু দুপুরে খেলেও আবার সন্ধের দিকে খিদে পেয়ে যায়।
স্কুলশিক্ষক অমল সকাল ন’টায় বেরিয়ে রোজ ঘণ্টা দুই জার্নি করে পৌঁছয় স্কুলে। সব কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত আটটা তো বাজেই। অধিকাংশ দিনই আর ইচ্ছে করে না বাড়ি ফিরে রাতের খাবার তৈরি করতে।
এ রকম আরও অসংখ্য মানুষ রয়েছেন আমাদের চারপাশে। স্কুল, কলেজ, পড়াশোনা, কাজ দৈনন্দিন ব্যস্ত রুটিনে নিয়মিত বাড়ির খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না তাঁদের পক্ষে। অথচ, রাস্তার খাবার মানেই ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড। কিন্তু সারাদিন না খেয়ে থাকাটাও তো ভাল নয়। পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরীর কথায়, “সারাদিন না খেয়ে থাকার চেয়ে রাস্তার খাবার বেছে খাওয়া ভাল।” রাস্তার খাবার মানেই যে তা অত্যন্ত খারাপ, নিয়মিত খেলে শরীর খারাপ হবে তা ঠিক নয়। বরং কথাতেই আছে, ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়’। কোয়েলের মতে, খেতে হবে একটু সচেতন ভাবে, খাবার ও সেই দোকানের গুণগত মান বিচার করে।
সতর্কতা
এখন পায়ে পায়ে খাবারের দোকান। অফিসপাড়ায় পথচলতি হাজারও মুখরোচক খাবার। ভিড় লেগেই আছে সেই সব দোকানে। কিন্তু রাস্তার সব খাবারই তো আর স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। কোয়েলের মতে, বাইরে খাওয়া জরুরি হলে আগেই দেখে নিন দোকানের অবস্থা। নিয়মিত ভিড় থাকলে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন সেই দোকানে। চলতি দোকানে খাবার ফ্রেশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। পাশাপাশি মেনে চলা দরকার সামান্য কিছু সতর্কতাও। ভাজাভুজি এড়িয়ে বেছে নেওয়া দরকার সিদ্ধ, গ্রিলড কিংবা বেকড খাবার। তেমনই তেল মশলা জাতীয় খাবার থেকে নজর সরিয়ে রাস্তাতেও খুঁজতে হবে ঘরোয়া ধরনের খাবার। বাইরের খাবার খেলেও, রাস্তার জল একেবারে খাওয়া চলবে না। যতটা সম্ভব বাড়ির জলই খান। প্রয়োজনে দোকান থেকে কিনে নিন প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার বা মিনারেল ওয়াটারের বোতল।
কী খাবেন, কেন খাবেন?
এ বার আসল প্রশ্ন কী-কী খেতে পারেন? হরেক খাবারের পসরায় খুঁজে নিন মনের মতো তুলনায় নিরাপদ খাবার।
স্ট্রিট ফুড বললে প্রথমেই মনে পড়ে ফুচকা কিংবা ঝালমুড়ির কথা। ফুচকার আলু, ছোলা মাখা যেমন পেট ভরাবে, তেমনই তার টকজল বেশি না খাওয়াই ভাল, কারণ জল কোথা থেকে নেওয়া হচ্ছে, তা তো আপনার জানা নেই। আর মুড়িতে তো ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই, প্রয়োজনে কম তেল, মশলা দিয়ে মাখানো যেতে পারে মুড়ি। পাশাপাশি ঘুগনি কিংবা ছোলা মাখাও নিরাপদ। তবে খুব খিদের মুখে বা খালি পেটে ফুচকা নয়। খালি পেটে স্যান্ডউইচ খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন তা যেন অবশ্যই গ্রিলড হয়। রাস্তার কচুরি-তরকারি-জিলিপির বদলে খান রুটি-তরকারি। সঙ্গে বরং কিনে নিন হালকা মিষ্টির কোনও ছানার সন্দেশ। দুপুরে খেতে পারেন ভাত-ডাল-সবজিও। তবে অবশ্যই খাবারের গুণগত মান বিচার করে খাবেন। বাসি, পচা, পোড়া তেলে রান্না হলে কিংবা অস্বাস্থ্যকর রান্নার জায়গা হলে, সে খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন।
অফিস এলাকা-সহ রাস্তার অনেক জায়গাতেই কিন্তু ঘোর গ্রীষ্মের দুপুরে পেয়ে যাবেন দই-চিঁড়ে জাতীয় খাবার। তেল-মশলা এড়াতে রাস্তার ধারের দক্ষিণী খাবারও ভাল। ইডলি, দোসা, সম্বর জাতীয় খাবারে যেমন পেট ভরবে, তেমনই শরীর খারাপের সম্ভাবনাও কম।
পুষ্টিবিদ কোয়েলের কথায়, “রাস্তার খাবার একটু ভেবেচিন্তে খাওয়া দরকার। ময়দার তৈরি মোমো স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় না পড়লেও, তা খেলে তুলনামূলক ভাবে ক্ষতি কম। তবে ফ্রায়েড, প্যান-ফ্রায়েড নয়, মাঝেমধ্যে স্টিমড মোমো খাওয়া যেতেই পারে। আবার, রোল সাধারণত বেশি তেলে ভাজা হয়। তার বদলে চাউমিন বেছে নিতে পারেন। পকোড়ার বদলে কিনে নিতে পারেন কাবাব।’’
পাশাপাশি, কাজের ফাঁকে রাস্তায় কিনে খেতে পারেন যে কোনও ফল। তবে কাটা ফল কিন্তু একেবারেই নয়। তাজা ফলের রস খাওয়াই ভাল। অনেক জায়গাতেই এখন চিনি ছাড়া পাল্প-সহ ফলের রস পাওয়া যায়। তেষ্টায় ঠান্ডা পানীয়ের বদলে খান ডাব। রাস্তার ধারের খাবারের মধ্যে লস্যি খাওয়াও ভাল।
তা ছাড়া, রাস্তায় খেতে পারেন ডিম-পাঁউরুটি, বাটার টোস্ট জাতীয় খাবারও। শুকনো খাবারের মধ্যে পপকর্ন বা ভুট্টা সেঁকাও বাছতে পারেন। সঙ্গে খেতে পারেন ডিম সিদ্ধও। নানা ধরনের কেকের দোকানও এখন চারিদিকে। পেস্ট্রি নয়, খিদে মেটাতে কিনে নিন সেখান থেকে সাধারণ কোনও কেক।
বাড়ির খাবার কিন্তু সব সময়েই ভাল। কোয়েল বলছেন, তবে বাইরের খাবারের অভ্যেস টুকটাক থাকলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়ে। তবে ছোট বয়সে রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। এতে বাইরে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। অল্প বয়সেই শরীরে ওবেসিটি-সহ নানা সমস্যা বাসা বাঁধতে পারে। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যাদের ডায়াবিটিস, হৃদরোগ কিংবা আরও নানা শারীরিক সমস্যা রয়েছে, এ সব রাস্তার খাবার চলবে না তাঁদেরও। তবে মনে রাখবেন, কখনওই এই সব রাস্তার খাবার খাওয়াকে অভ্যাস বা নিয়ম বানিয়ে ফেলবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, খাবারের গুণগত মান বিচার করে খেলেও নিয়মিত তা খাওয়া ঠিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy