Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

জানান না দিয়েই আসে গ্লকোমা, দৃষ্টিশক্তি বাঁচাতে এখনই সতর্ক হোন

চিকিৎসকেরা একে বলে থাকেন ‘সাইলেন্ট থিফ’। বুঝে ওঠার আগেই ধীরে ধীরে আপনার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে গ্লকোমাচিকিৎসকেরা একে বলে থাকেন ‘সাইলেন্ট থিফ’। বুঝে ওঠার আগেই ধীরে ধীরে আপনার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে গ্লকোমা

ঠিক সময়ে ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা শুরু না করলে চিরতরে দৃষ্টিশক্তিও কেড়ে নিতে পারে তা।

ঠিক সময়ে ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা শুরু না করলে চিরতরে দৃষ্টিশক্তিও কেড়ে নিতে পারে তা।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

জানান না দিয়েই আসে দৃষ্টিঘাতী এই অসুখ। এবং সেই অর্থে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর রাস্তাও খোলা নেই। আট থেকে আশি, যে কোনও বয়সি মানুষের চোখেই থাবা বসাতে পারে গ্লকোমা। ঠিক সময়ে ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা শুরু না করলে চিরতরে দৃষ্টিশক্তিও কেড়ে নিতে পারে তা। তাই চিকিৎসকেরা একে ‘সাইলেন্ট থিফ’ বলে থাকেন।

কী ও কেন

গ্লকোমা ঠিক কী ও কেন হয়, তা বুঝিয়ে বললেন চক্ষু চিকিৎসক সুমিত চৌধুরী, ‘‘খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে চোখের মধ্যে যে প্যাসেজ দিয়ে ফ্লুইড সার্কুলেট করে, তার বেরোনোর রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তা জমে চোখের উপরে চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে অপটিক নার্ভে। সেই প্রেশার বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণতর হতে থাকে, পরবর্তী কালে যা অন্ধত্ব ডেকে আনতে পারে,’’ বললেন ডা. চৌধুরী। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিটা শুরু হয় পরিধির চারপাশ থেকে, তাই গ্লকোমায় আক্রান্ত রোগীদের সাইড ভিশন নষ্ট হতে থাকে। ডা. চৌধুরী জানালেন, জল তৈরি হতে থাকে, অথচ বেরোনোর জায়গা পায় না— এর ফলেই তা দুর্বল জায়গাগুলোয় চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কোনও পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যদি বলেন, তিনি পাশের দিকে দেখতে পারছেন না, তা হলে বুঝতে হবে, ক্ষতি অনেক দূর ছড়িয়ে গিয়েছে।

পালাবার পথ নেই

গ্লকোমা এমন এক অসুখ, যার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। ধরা পড়ার পরে চিকিৎসা শুরু হলেও ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়াই এর সঙ্গে যুঝে ওঠার একমাত্র উপায়।

শিশু থেকে বৃদ্ধ— গ্লকোমা যে কোনও বয়সি মানুষেরই হতে পারে। সাধারণত বয়স্কদের গ্লকোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার জন্ম থেকেই এই অসুখ থাকতে পারে অনেকের। আমেরিকায় এর প্রবণতা বেশি।

সাধারণত ওপেন-অ্যাঙ্গল গ্লকোমা এবং অ্যাঙ্গল-ক্লোজ়ার বা ন্যারো-অ্যাঙ্গল গ্লকোমা— এই দু’ধরনের টাইপ বেশ কমন। প্রথম ক্ষেত্রে অসুখ দীর্ঘদিন পর্যন্ত ধরাই পড়ে না। কারণ পার্শ্ববর্তী দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে ধীরে ধীরে, যা চট করে বোঝা যায় না প্রথমে।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আবার আবছা দৃষ্টিশক্তি, উজ্জ্বল আলোর ছটায় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া, চোখ ও মাথা ব্যথা, আলোয় রামধনুর সাত রং দেখতে পাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে যদিও কোনও লক্ষণই প্রাথমিক ভাবে বোঝা যায় না। জোরালো আলোয় স্পর্শকাতর চোখের দৃষ্টি, কর্নিয়ার ধূসর রং, চোখ বড় দেখানো, বার বার চোখ দিয়ে জল পড়া বা চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

ঝুঁকি ও সাবধানতা

কোনও কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর গ্লকোমার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। পরিবারে বা নিজের ডায়াবিটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে গ্লকোমার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। যাঁরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নেন নিয়মিত, তাঁদেরও গ্লকোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। ইনহেলার যাঁরা নেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আবার অনেক সময়ে চোখে গুরুতর চোট-আঘাত লাগলে, পরবর্তী কালে সেখান থেকেও গ্লকোমা ডেভেলপ করার আশঙ্কা থেকে যায়। কাজেই, এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো চিহ্নিত করে আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করলে, খানিকটা হলেও গ্লকোমার অতর্কিত আক্রমণ এড়ানো সম্ভব। তবে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ হল, ছ’মাস থেকে এক বছর অন্তর চোখ পরীক্ষা করানো।

চোখের ডাক্তার একবার পাওয়ার সেট করে দেওয়ার পরে সাধারণত আর এক-দেড় বছরের মধ্যে তা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে যদি মাসকয়েক যাওয়ার পর থেকেই দেখতে অসুবিধে হয়, কিংবা ঘন ঘন পাওয়ার বাড়ে, তা হলে সন্দেহ করতে হবে, তা গ্লকোমার প্রকোপে হতে পারে।

অতএব উপায়

গ্লকোমা ধরা পড়ার পরে বিভিন্ন উপায়ে তার মোকাবিলা করা সম্ভব। প্রথমেই চিকিৎসকেরা দেখেন, চোখের প্রেশার কতটা বেশি আছে, ওষুধ দিয়ে তা কমানো সম্ভব কি না। অপটিক নার্ভ পরীক্ষা করলেই ধরা পড়ে, ক্ষতির মাত্রা ঠিক কতটা। অনেক সময়ে টানা ওষুধের সাহায্যে চোখের প্রেশার কন্ট্রোলে রাখলেই নার্ভের উপরে চাপ কমানো যায় এবং গ্লকোমাও আয়ত্তে রাখা সম্ভব। আবার যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় চোখের পরিধির অংশের অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সে ক্ষেত্রে সার্জারি কিংবা লেজ়ার হতে পারে দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখার একমাত্র উপায়। ডা. চৌধুরীর কথায়, ‘‘গ্লকোমা কিয়োরেবল নয়, কন্ট্রোলেবল। যে ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে, তাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অসুখের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’’

মডেল: রিয়া বণিক, ছবি: অমিত দাস, মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Glaucoma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy