জীব থেকে শুরু করে উদ্ভিদ... বংশবিস্তারের মাধ্যমেই অস্তিত্ব বজায় রাখে। তবে গাছের সংখ্যাবৃদ্ধি করা যায় আপন হাতে। বিশেষ করে এই আপাতবন্দি জীবনে যখন বেশির ভাগ সময়ই কাটছে বাড়িতে, তখন একটা গাছ থেকেই যদি আরও দু’-তিনটি গাছের জন্ম দেওয়া যায় ক্ষতি কী? গাছ প্রপ্যাগেট করার অনেক পদ্ধতি আছে। সেগুলি জেনে নিয়ে প্রপ্যাগেট করলেই বাড়ি ভরে উঠবে সবুজে।
শুরুর আগে
• গাছ অনুযায়ী প্রপ্যাগেট করার পদ্ধতিও আলাদা হবে। প্রত্যেক গাছের প্রপ্যাগেশন পিরিয়ডও আলাদা। কিছু ক্ষেত্রে নতুন শিকড় গজাতে কয়েক দিন তো কিছু ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহও লাগতে পারে। তাই ধৈর্য নিয়ে এই কাজ শুরু করতে হবে।
• প্রথম প্রপ্যাগেশন সফল না-ও হতে পারে। মনোবল হারালে চলবে না। আরও দু’তিনবার চেষ্টা করুন। ক্রমে গাছের ধরন বুঝে যাবেন। আর ব্যর্থ হবেন না। নতুন প্রাণের জন্ম দেওয়া বা প্রাণপ্রতিষ্ঠা খুব সহজ নয়। তাই গোড়া থেকেই যত্ন ও সময় নিয়ে কাজ শুরু করুন।
• প্রপ্যাগেশন পদ্ধতিতে আলো, তাপমাত্রা, মাটিতে আর্দ্রতার পরিমাণ— সব দিকেই নজর রাখতে হবে। প্রপ্যাগেশনের ক্ষেত্রে গাছ অনুযায়ী এই প্রত্যেকটি নির্ধারকের মাপ আলাদা হয়। কিছু ক্ষেত্রে যেমন আলোর দরকার, কখনও আবার অন্ধকার। তাই কোন গাছ কত ডিগ্রি তাপমাত্রায়, কতটা আলোয় বা ময়শ্চারে রাখতে হবে, তা ভাল করে জেনে নিয়ে তবেই গাছে হাত দিন।
• রুটিং হরমোনের সাহায্য নিতে পারেন। শিকড়ের বাড়বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এই হরমোন। এই রুটিং হরমোন অক্সিন সাপ্লিমেন্টের জোগান দেয়, যা শিকড় তৈরি করতে সাহায্য করে। তবে গাছ অনুসারে এই হরমোনের পরিমাণও বিভিন্ন হয়।
স্টেম কাটিং, লিফ কাটিং, গ্রাফ্টিং ইত্যাদি পদ্ধতিতে প্রপ্যাগেশন করা হয়। এখানে কিছু অপেক্ষাকৃত সহজ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হল—
স্টেম কাটিং
• এই পদ্ধতিতে সাধারণত দু’ভাবে ডাল কাটা হয়। টিপ কাটিং অর্থাৎ ডালের মাথার অংশ থেকে কাটা হয়। যে ডালের মাথায় বেশ কচি সবুজ পাতা থাকে, তেমন পাতা কাটা হয়।
• দ্বিতীয়ত স্টেম কাটিং। এই পদ্ধতিতে গাছের ডালের প্রায় তিন-চার ইঞ্চি কেটে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দু’টি ডালের সংযোগস্থল থেকে কাটলে প্রপ্যাগেশন ভাল হয়। স্টেম কাটিংয়ের মাধ্যমে বেগোনিয়া, ড্রাকেনা, জেরানিয়াম, পথোজ়, ফাইলোডেনড্রন গাছ তৈরি করা যায়।
• তবে পথোজ়, ফাইলোডেনড্রন, এই ধরনের গাছে প্রপ্যাগেশন করা অপেক্ষাকৃত সহজ। তাই প্রথম বার প্রপ্যাগেট করলে এই ধরনের গাছ বেছে নিন। মানিপ্ল্যান্ট দিয়েও শুরু করতে পারেন।
• প্রথমে ভাল করে গাছ পর্যবেক্ষণ করুন। এমন একটা ডাল বাছুন, যার গোড়ায় বা জয়েন্টে খয়েরি রঙের শিকড় বেরিয়ে থাকবে। ঠিক সেই জায়গা থেকে ডাল ভেঙে নিন।
• একটি কাচের জারে বা বোতলে পরিষ্কার জল ভরে তার মধ্যে গাছের ডালটা রেখে দিন। এমন জায়গায় রাখবেন যেখানে আলো আসবে, কিন্তু রোদ লাগবে না।
• জলের রং ঘোলা হয়ে এলে তা পাল্টে দিন। ১-২ সপ্তাহে দেখবেন শিকড় বাড়তে শুরু করেছে। শিকড় ১ ইঞ্চি মতো বাড়লে তবেই তা পটে শিফ্ট করবেন। তার জন্য চার থেকে ছ’সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। শিকড় মজবুত হলে মাটি তৈরি করে, পটে তাকে জায়গা করে দিন। এ বার নিয়মিত অন্যান্য গাছের মতো যত্ন পেলেই সে বাড়তে থাকবে।
লিফ কাটিং
পাতার ভেন কাটিংয়ের পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি পাতার শিরার গা দিয়ে পাতা কাটতে হবে। মূল শিরার বা উপশিরার অংশ পুঁতেও নতুন গাছের জন্ম দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে একটা পাতা থেকেই প্রায় সাত-আটটি নতুন গাছের জন্ম দেওয়া যায়। রেক্স বেগোনিয়া গাছ এই ভাবেই প্রোপ্যাগেট করা হয়। পাতা থেকে নতুন সাকিউলেন্টস ও ক্যাকটাসও তৈরি করা যায়। তবে পদ্ধতি আলাদা।
সাকিউলেন্টস
• সাকিউলেন্টস পাতা থেকে তৈরি করা যায়। তার জন্য এই গাছের পাতা গোড়া থেকে কেটে নিতে হবে। খুব সাবধানে। চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব গোড়ার দিক থেকে কেটে নিতে। তার জন্য হাতে পাতাটি ধরে একবার ডান ও একবার বাঁ দিকে ঘোরাতে থাকুন। দেখবেন, পাতা আলগা হয়ে খুলে ফুলের পাপড়ির মতো হাতে চলে আসবে।
• এই পাতাগুলি একটি পাত্রে করে দিন দুয়েক অন্ধকারে রেখে দিন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
• দিনদুয়েক পরে পাতাগুলি টবের মাটির উপরে উপুড় করে ধরে আলো আসে এমন কোনও জায়গায় রেখে দিন। উপর থেকে নিয়মিত অল্প অল্প জল দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন যেন খুব বেশি জল না দেওয়া হয় আবার মাটিও যেন শুকনো না থাকে। এ ভাবেই এক সপ্তাহ যত্ন নিলে দেখবেন পাতা থেকেই শিকড় বেরোতে শুরু করেছে, ক্রমে ক্রমে নতুন পাতাও আসবে গাছে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে।
ক্যাকটাস
• এই ধরনের গাছের বংশবিস্তার করতে সাধারণত কাটিং বা গ্রাফ্টিং পদ্ধতির উপরে ভরসা রাখতে হবে। কেটে প্রোপ্যাগেট করতে চাইলে ক্যাকটাসের স্টেম কেটে নিন। ক্যাকটাসে প্যাড থাকলে সেই প্যাডও কেটে নিতে পারেন।
• কেটেই তা জলে বা মাটিতে পুঁতবেন না। কিছু দিন আলো ও জলের কাছ থেকে দূরে রেখে দিন। অনেকটা সাকিউলেন্টসের মতো। ক্যাকটাসের যে জায়গা কেটেছেন
সে জায়গার ক্ষত শুকিয়ে এলে তা পোঁতার জন্য মাটি তৈরি করুন। এ বার ক্ষত দিকটা মাটিতে পুঁতে দিন। তাতে অল্প জল দিন আর আলোয় রাখুন।
• ক’দিন বাদেই শিকড় বার হবে। তখন অন্যান্য ক্যাকটাসের মতোই যত্ন নিতে হবে। গ্রাফ্টিংয়ের মাধ্যমে কিছু ধরনের ক্যাকটাস তৈরি করা হয়। তবে গ্রাফ্টিং পদ্ধতি প্রশিক্ষকের কাছ থেকে শিখে করাই ভাল। বীজ থেকেও প্রপ্যাগেট করা যায়। যেমন, লঙ্কা, কুমড়োর বীজ শুকিয়ে মাটিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঠিক যে ভাবে নতুন প্রাণের জন্ম হয়, গাছের প্রপ্যাগেশনও অনেকটা সে রকমই। যত গাছ প্রপ্যাগেট করতে পারবেন, ততই আপনার অন্দর ভরে উঠবে সবুজে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy