Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Home Decor

ঘরেতে বসত করে...

একজন মানুষ তাঁর সবচেয়ে নিভৃত সময়টুকু কাটান শোয়ার ঘরেই।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০ ০২:৩১
Share: Save:

বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ শোয়ার ঘর, যা আপনার শৌখিনতা, রুচি সব কিছুর পরিচায়ক। একান্ত আপন এই ঘরটি সাজাবেন কী ভাবে?

একজন মানুষ তাঁর সবচেয়ে নিভৃত সময়টুকু কাটান শোয়ার ঘরেই। রাতের ঘুম হোক, ছুটির দিনের অলস দুপুর বা কোনও কেজো সকাল... বেডরুমের সাজ পছন্দসই না হলে মনমেজাজ কি ভাল থাকে?

রঙের সমীকরণ

কোনও ঘরে ঢুকলে আগে নজরে আসে দেওয়ালের রং। বেডরুমের রং হালকা হলেই ভাল। ওয়ালপেপার দিয়ে সাজালেও চোখের আরামের কথা খেয়াল রাখবেন। চারটির বদলে একটি বা দু’টি দেওয়ালে ওয়ালপেপার পেস্ট করতে পারেন। টেক্সচার ওয়ালের ক্ষেত্রেও তাই নিয়ম। এখন সাদা দেওয়ালের চল বেশি। সাদার সঙ্গে বেজ, আইভরি, পিচ, হালকা মভ, পাউডার ব্লু— এই ধরনের কালার প্যালেট মিলিয়ে মিশিয়ে ঘর রং করার পরামর্শ দিচ্ছেন ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনাররা। নীল-হলুদ বা সবুজ-হলুদের শেড মিলিয়েও এই ব্যক্তিগত পরিসর সাজানো যায়। সে ক্ষেত্রে একটি দেওয়াল গাঢ় রঙের হলে বাকিগুলো হালকা হবে। সিলিংয়ের রং সাদা হলেই ভাল, তাতে ঘরের উচ্চতা বেশি দেখাবে। এর সঙ্গে মিলিয়েই বিছানার চাদর, পর্দা, আসবাব, কার্পেট বা রাগের রং বাছুন। ঘরের রং হালকা হলে বিছানা, পর্দায় উজ্জ্বল রং ব্যবহার করুন। উল্টোটাও করা যায়। তবে সব কিছু ম্যাচ করতে যাবেন না, কনট্রাস্ট জরুরি।

থিম সজ্জা

আগে থিম ঠিক করে নিন। যাঁদের বাড়ি সাবেকি, তাঁরা সেই থিমেই অন্দর সাজাতে পারেন। আধুনিক থিমের ভিড়েও এ সাজের মাধুর্য আলাদা। পালঙ্ক বা পুরনো দিনের ছত্রি দেওয়া খাট থাকলে তো কথাই নেই। পালিশ করিয়ে নিন। এখন লেসের সুন্দর মশারি পাওয়া যায়। ছত্রিকে ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করে মশারি দিয়ে পর্দার মতো সাজিয়ে নিন, বনেদি বাড়ির ফিল আসবে। পুরনো বাড়ির জানালা অন্য রকমের হয়। খড়খড়ি হলে তা ভুলেও বদলাবেন না। জানালার সামনে কাঁসা বা পিতলের ঘটিতে গাছ সাজিয়ে রাখতে পারেন। সঙ্গে হালকা প্যাস্টেল শেডের সুতির পর্দা। বাড়িতে পুরনো ট্রাঙ্ক থাকলে রং করে স্টোরেজ ও টেবিল দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। উপরে সুন্দর রানার পেতে দিলেই হল। পুরনো দিনের চেয়ার থাকলে পালিশ করিয়ে নতুন কভার পরিয়ে দিলে স্টেটমেন্ট তৈরি হবে। সাবেক স্টাইলে ঘর সাজালে বাকি আসবাব যেন মানানসই হয়। পুরনো দিনের আসবাব ভারী হয়, তাই ঘরে বেশি কিছু না রাখাই শ্রেয়।

হ্যান্ডিক্রাফ্টের শখ থাকলে বিভিন্ন প্রদেশের ক্রাফ্ট দিয়েও ঘর সাজাতে পারেন। জয়পুরী কাজের চাদর বিছানায় পাতলে পর্দায় বাঁধনি প্রিন্ট ব্যবহার করা যায়। অাজরাখ বা ইন্ডিগো কাপড় মিটার অনুযায়ী কিনে দর্জিকে দিয়ে পর্দা বানিয়ে নিন। ফ্লোরের জন্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের কারুকাজ করা শতরঞ্চি বা বাহারি কাশ্মীরি কাজের কার্পেটের অপশন তো আছেই। বাংলার পটশিল্প, ডোকরা বা বিহারের মধুবনী কাজের স্টেটমেন্ট পিস রাখতে পারেন অন্দরসজ্জায়। বেত বা দড়ি দিয়ে তৈরি আসবাবও সাইড টেবল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সকলের বাড়িতেই স্টিলের আলমারি থাকে। তা বাতিল না করে উডেন পালিশ করিয়ে নিন।

ফ্ল্যাট কালচারের সঙ্গে আধুনিক থিমই বেশি মানানসই। সে ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্যতা বেশি, এমন আসবাবের দিকে ঝুঁকতে হবে। খাটের ম্যাট্রেস তুলে স্টোরেজ খোলার কায়দা পুরনো ও কষ্টসাধ্য। খাটের ক্ষেত্রে ড্রয়ার সিস্টেম স্টোরেজ ব্যবহার অনেক সহজ। বেডরুম ডেকরের গোড়ার কথা হল কম আসবাব রাখতে হবে। ড্রেসিং টেবল, আলমারি ছাড়া স্পেস থাকলে ছোট বসার ব্যবস্থা বা কাজের জায়গা করা যেতে পারে। দরকার না হলে বেড সাইড টেবল রাখবেন না। প্রয়োজন বুঝে সাজান। খাটের মেটিরিয়ালের উপরে নির্ভর করছে বাকি আসবাব। কাঠের নানা ধরন হয়। তা ছাড়া রট আয়রন, স্টিল, আপহোলস্ট্রি ফ্রেমও আছে। আসবাবের রঙেও যেন সাযুজ্য থাকে। আধুনিক অন্দরসজ্জায় ভারী ড্রেসিং টেবল মানায় না। এখন দেওয়ালে ফিটেড আয়না ও ড্রয়ারের চলই বেশি। নয়তো স্লিক স্টাইল ড্রেসিং টেবলও চলে। কাবার্ডের সঙ্গে আয়নাও ভাল লাগে। স্টোরেজের কথা ভেবে এত বড় কাবার্ড বাছাই করলেন যে, গোটা ঘর ভরে গেল, এমন যেন না হয়। খাটের উপরের দেওয়ালও স্টোরেজের জন্য কাজে লাগানো যায়। সেখানে বই, ছবির ফ্রেম, শো পিস রাখুন। ঘরের অন্য দেওয়ালে কোয়ার্কি স্টাইল শেল্ফ বানাতে পারেন। খাটের মাথার অংশে পেন্টিংও ভাল লাগে।

নজর দিতে হবে ফ্লোরেও। ঘরের কোন জায়গায় ফ্লোর কভার করবেন, সেটা ভেবে নিন। খাটের সামনের দিকে কার্পেট বা রাগ পাতা থাকলে, সেখানে বসে আরাম করা যায়। আবার ধরুন বেডরুমের এক কোণে কাজের জায়গা করা আছে, সেখানেও মোলায়েম ম্যাট রাখতে পারেন। ঘরের যে জানালা দিয়ে আলোবাতাস আসে, তার সামনে ছোটখাটো বসার ব্যবস্থা করা যায়। তখন গোল রাগ ব্যবহার করুন।

পর্দা বাছাইয়েও মন দিতে হবে। ভারী পর্দার স্টাইল পুরনো। একরঙা বা প্রিন্টেড যে ধরনের পর্দাই বাছুন না কেন, তা সুতির হলেই ভাল। চাইলে হালকা ও গাঢ় দুটো রং দিয়ে লেয়ারও করতে পারেন।

সাজ‘শয্যা’

সারা দিনের ক্লান্তির পরে যেখানে আরাম করবেন সেই জায়গাটা যত্ন নিয়ে সাজানো উচিত। ম্যাট্রেস, গদি, তোশক যা-ই ব্যবহার করুন না কেন, আরামের কথা মাথায় রাখুন। বেডশিট লিনেনের হওয়াই ভাল। চাদর একরঙা হলে বেডকভার বা কুইল্টে মোটিফের ছোঁয়া রাখতে পারেন। বিছানার কালার প্যালেট পর্দা ও ঘরের সাজের সঙ্গে মানানসই হবে। বেডকভারের উপরে রানার পাতলে একটা ডায়মেনশন আসবে। বিছানায় বসলে পায়ের দিকে রানার থাকলে বেডকভার নোংরাও হবে না। রাতে যে বালিশ মাথায় দিয়ে শোবেন, সেগুলো ড্রয়ারে ঢুকিয়ে সারা দিন কুশন বা অন্য কোয়ার্কি শেপের বালিশ দিয়ে সাজিয়ে নিন। এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং, প্রিন্ট ব্যবহার করুন। বালিশ-কুশন মিলিয়ে সাজালে, বড় থেকে ছোট রাখবেন।

কম আসবাব আর রঙের ব্যবহার— এই দুটোই কিন্তু বেডরুম সাজানোর ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে। আর সবটাই করতে হবে সাধ ও সাধ্যের ব্যালান্সে।

এ ভাবেও সাজানো যায়

• ঘরের একটা কোণে নিজস্ব ছোঁয়া রাখতে পারেন। যদি মিউজ়িকের শখ থাকে, তা হলে সেই মতো ইন্সট্রুমেন্ট রাখুন বা বইয়ের তাক, খেলাধুলোর চর্চা থাকলে সেই সংক্রান্ত জিনিস নিয়ে ডেকরেট করতে পারেন। পেন্টিংয়ের শখ থাকলে একটা ইজ়েল ও অানুষঙ্গিক কিছু রাখুন

• শোয়ার ঘরে টিভি থাকলে, সেই দেওয়াল ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন। এতে চোখের আরাম হবে। টিভি সেটের নিচের অংশে স্টোরেজ করুন

• অ্যাম্বিয়েন্স লাইটিং করতে পারেন বেডরুমে। কাজের জায়গার জন্য জোরালো আলো। বেড সাইড টেবলে ল্যাম্পশেড না রেখে দেওয়ালেও রিডিং লাইট ফিট করতে পারেন। বরং ঘরের একটা কোণে স্টেটমেন্ট ল্যাম্পশেড রাখুন

• একটা গাছ এবং ফুলদানি অন্তত রাখবেন ঘরে। এ ক্ষেত্রে অধিকন্তু ন দোষায়

অন্য বিষয়গুলি:

Home Decor Bedroom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy