বাড়ির একটি গোটা দেওয়াল ঘন সবুজ। কৃত্রিম রং নয়, আগাছায় ভর্তি নয়, এমনকি ইতিউতি বেড়ে ওঠা গাছ নয়। একটি বিশেষ অংশ জুড়ে লাগানো হয়েছে ছোট ছোট গাছ। তার রঙেই রাঙিয়ে উঠে সবুজ হয়েছে গোটা দেওয়াল। এ ধরনের দেওয়ালের পোশাকি নাম গ্রিন ওয়াল। ইদানীং নানা হাইরাইজ় থেকে শুরু করে রেস্তরাঁ, কাফে কিংবা বাড়ির একাংশ সাজানো হচ্ছে গ্রিন ওয়ালে। কিন্তু চাইলে আপনিও বাড়িতে স্বল্প পরিসরে তৈরি করতে পারেন
গ্রিন ওয়াল।
সবুজ দেওয়ালের ধরন
এই গ্রিন ওয়াল তৈরি করার আগে দু’টি বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। সবুজ দেওয়ালে গাছ লাগানো যেতে পারে দু’রকমের। একটির ক্ষেত্রে কোনও ক্লাইম্বার বা লতানে গাছ এ দিক-ও দিক বেড়ে গোটা দেওয়ালে ছড়িয়ে পড়ে। আর
অন্যটির ক্ষেত্রে দেওয়াল জুড়ে সার্বিক ভাবে জন্মায় গাছ। সে ক্ষেত্রে দরকার অন্য ধরনের প্রযুক্তি এবং ইনস্টলেশনের পদ্ধতি।
কেমন গাছ লাগাবেন?
গ্রিন ওয়াল তৈরি করার জন্য এমন গাছই লাগানো উচিত, যা একে অপরের সঙ্গে ঘন সন্নিবদ্ধ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। কোনও একটি গাছের রোগ দেখা দিলে, তা অবিলম্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে বাকি গাছেও। ফলে তখন সবুজ দেওয়ালের সৌন্দর্য একেবারেই মাটি। আবার এ ধরনের দেওয়াল তৈরি করতে এমন গাছ লাগানো উচিত, যেগুলি সারা বছর ধরে বেশির ভাগ সময়ে ঘন সবুজ থাকে। শীতকালে পাতা ঝরে যাওয়া, হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ যেন সে সব গাছের না হয়। তা হলে ভাল দেখাবে না। এ ছাড়াও গ্রিন ওয়ালের গাছ নির্ভর করে দেওয়ালটিতে সূর্যের আলো, রোদ-ছায়া, বায়ু চলাচল কেমন, তার উপরে।
বেসিল, তেজপাতা, ক্যামোমাইল, চাইভ, ধনে পাতা, কারি পাতা, ডিল, লেমন বাম, লেমনগ্রাস, মারজোরাম, অরিগ্যানো, পার্সলে, রোজ়মেরি, সেজ জাতীয় হার্ব দিয়ে হার্ব গ্রিন ওয়াল করতে পারেন। এডিবল গাছ লাগাতে চাইলে চেরি টম্যাটো, ছোট বাঁধাকপি, লেটুস, রকেট, ছোট লঙ্কার গাছ বসাতে পারেন। যে দেওয়াল সারাক্ষণ রোদে থাকবে, তার জন্য ভাল অ্যাকিলিয়া, এরিকা, জেরানিয়াম, ল্যাভেন্ডার, প্যানজ়ি, রোজ়মেরি, থাইম ইত্যাদি। আর সবুজ দেওয়ালে ছায়া বেশি পড়লে বেছে নিতে পারেন ইন্ডিয়ান বিগোনিয়া, অ্যাসপ্লেনিয়াম, ইউফোরবিয়া। রকমারি গাছ লাগাতে না চাইলে ভরসা রাখতে পারেন মানি প্ল্যান্টেও। তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং লতানে মানি প্ল্যান্ট দেখতেও লাগে ভারী সুন্দর। মানি প্ল্যান্ট সবুজ পাতা হবে না কি তাতে অন্য রঙের ছোঁয়া থাকবে, বেছে নিন পছন্দ অনুযায়ী।
কী ভাবে তৈরি করবেন?
প্রথমত বেছে নিন কোন জায়গায় তৈরি হবে গ্রিন ওয়াল। সেটি সলিড দেওয়াল কিংবা ফেন্স বরাবর... যে কোনও কিছুর উপরেই হতে পারে। তা ঠিক হলে স্ক্রুয়ের সাহায্যে ছোট ছোট প্ল্যান্টার্স লাগিয়ে নিন। হোস পাইপের সাহায্যে জল দেওয়ার ব্যবস্থা রাখুন। ইনস্টলড গ্রিন ওয়ালে সাধারণত এক ধরনের রিজ়ার্ভয়ার থাকে যা প্রায় দু’সপ্তাহ পর্যন্ত জল ধরে রাখতে পারে। তেমন রিজ়ার্ভয়ারের বন্দোবস্ত করতে চাইলে পেশাদারের সাহায্য নিতে হবে। ১২-১৪ সেন্টিমিটার মাপের পট বা প্ল্যান্টার্সে পছন্দসই গাছ লাগান। এ বার একটি দেওয়ালে এক ধরনের না কি বিশেষ কোনও প্যাটার্ন তৈরি করবেন, তা নিজে ঠিক করে নিন।
অনেক সময়ে পুরো দেওয়াল না জুড়ে একটি গোটা দেওয়ালের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ঘরের মধ্যেই তৈরি করা যায় ফ্রেমড গ্রিন ওয়াল। সে ক্ষেত্রে কাঠের ফ্রেমের মাঝে থাকবে এমন বেস যাতে দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকে সাকিউলেন্ট। এ বার সেই ফ্রেমের মধ্যে নানা ধরনের ক্যাকটাস রেখে তা ঝুলিয়ে দিতে পারেন দেওয়ালে।
মানি প্ল্যান্ট দিয়ে দেওয়াল তৈরি করতে চাইলে জল নয়, ভরসা রাখুন মাটিতে পোঁতা মানি প্ল্যান্টে। কারণ মাটির গাছ আরও বেশি ঘন হয় এবং বাড়েও তাড়াতাড়ি।
খেয়াল রাখুন
বাড়ির বাইরের দেওয়ালটি গাছ দিয়ে সবুজ করতে চাইলে অবশ্যই একটি ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন লাগাতে পারেন। এতে বাড়ির ভিতরে ড্যাম্প ধরার সমস্যাকে আটকানো যাবে। বাড়িতে রিজ়ার্ভয়ারের ব্যবস্থা না থাকলে রোদ এবং তাপমাত্রার উপরে নির্ভর করে দু’-তিন দিন অন্তর জল দেওয়া প্রয়োজন। গরমকালে জল দিতে হবে প্রত্যেক দিন। অনেকে গ্রিন ওয়ালকে শুধু সবুজ না রেখে, ফুলেও ভরিয়ে তুলতে চান। সে ক্ষেত্রে টাইম ও’ক্লক জাতীয় ছোট ছোট ফুলগাছ বেছে নেওয়াই আদর্শ। গ্রিন ওয়ালের সৌন্দর্য চোখজুড়োনো। তার সঙ্গে পরিবেশও বাঁচে। তা হলে এ বার বাগান সাজান নতুন ভাবে। কংক্রিট আর সবুজে মিলেমিশে যাক ইন্টিরিয়র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy