সাইনাস-গহ্বরে থাকা মিউকাসগুলি কোনও ভাবে শরীর থেকে বেরতে না পারলেই শুরু হয় সাইনাসাইটিসের সমস্যা। ছবি: শাটারস্টক।
আবহাওয়া পরিবর্তনের হাত ধরে যে সব সমস্যা নিত্য রুটিনে ঢুকে পড়ে, নাক দিয়ে জল পড়া, মাথা ব্যথা, ঠান্ডায় নাক বন্ধ হওয়া সে সবের অন্যতম। হাওয়া-বাতাসে ঠান্ডার আমেজ আসতে শুরু করলেই সর্দি-কাশির উপদ্রব শুরু হয় ঘরে ঘরে। তবে অনেকেই এই সমস্যায় কোনও ওষুধ খান না, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর সেরে ওঠাকে ছেড়ে দেন। যদি হালকা কোনও ওষুধে বা প্রতিরোধী শক্তিকে সমস্যা কেটে যায়, তার পরও লক্ষ্য রাখতে হয় যাতে সহজে ঠান্ডা না লাগে। তবে সকলের ক্ষেত্রেই যে এই সমস্যা সহজে মিটে যায়, এমন নয়। আর তখনই শুরু হয় সাইনাসইটিসের শঙ্কা।
এ রোগ আসলে কী?
সাইনাসাইটিস নিয়ে সচেতন হওয়ার বেলায় রোগের খুঁটিনাটি জানলে অনেকটা সামাল দিতে সুবিধা হয়। ইএনটি বিশেষজ্ঞ শীর্ষক দত্তের মতে, ‘‘মাথার খুলির মধ্যে যে ক’টা ফুটো থাকে তাদের সাইনাস বলে। নাকের দু’পাশে, কপালে, দু’চোখের মাঝে, চোখের পিছনে এই গহ্বরগুলি তাকে। স্থান ভেদে এদের নামও বদলায়। মিউকাসে ভরা থাকে এক একটা গহ্বর। এরা প্রত্যেকেই সাইনাসই অস্টিয়ামের মাধ্যমে নাকের গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত। সাইনাসের মিউকাসগুলি কোনও ভাবে শরীর থেকে বেরতে না পারলেই শুরু হয় সাইনাসাইটিসের সমস্যা। এই অসুখ সাধারণত লাইফস্টাইল ডিজিজ। ক্রনিকও বলা যেতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার।’’
রোগের লক্ষণ
ঘুম ভাঙা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, নাক বন্ধ, নাক থেকে জল পড়ার বিরাম নেই। অনেক সময় এর সঙ্গে জ্বরও আসে।
আরও পড়ুন: পাকা পেঁপের বীজ খেলেই কমবে ওজন!
চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কোনও প্রকার ড্রপ ব্যবহার নয়।
কী করবেন
দিনের পর দিন একই অবস্থা চলতে থাকলে সাইনাসাইটিসের ভয় উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তাই ওষুধ প্রয়োজন। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সঙ্গে মেনে চলতে হবে কিছু ঘরোয়া উপশমের পদ্ধতিও। দিনে অন্তত বার দুয়েক গরম জলের ভেপার নিতে হবে। জলে নুন ফেলে বা সাধারণ গরম জলেও এই ভেপার নেওয়া যায়। ভেপার নেওয়ার সময় দরজা-জানলা বন্ধ রাখুন। কান-মাথা-গলাও ঢেকে রাখতে হবে। ভেপার নেওয়ার সময় ও মিনিট দশেক পর পর্যন্ত পাখার হাওয়া শরীরে লাগানো যাবে না। এই অসুখে সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খুব কার্যকর ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এ ছাড়া নুন মেশানো ঈষদুষ্ণ গরম জল নাক দিয়ে টানতে পারলে ভাল। বাজারচলতি ন্যাজাল ড্রপে সাময়িক আরাম মিললেও দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার ভাল নয়। তাই সে সব ব্যবহার না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ড্রপে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে অসুখ সারতে সময় লাগে। মাথা যন্ত্রণা সরাতে বাম লাগানোর প্রবণতাও একেবারেই ভাল নয়। এড়িয়ে চলুন তা।
সতর্ক থাকুন
আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সচেতন হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। গভীর রাতে বাড়ি ফিরতে হলে বা বোরে বেরতে হলে কান-মাথা-গলা ঢেকে বেরন। পায়ে থাকুক মোজা। অফিসে এসি থাকলে মাঝে মাঝেই বেরিয়ে স্বাভাবিক আবহাওয়ায় কাটিয়ে আসুন। ধুলো থেকে এলার্জি বাড়ে। তাই রাস্তায় বেরলে রুমাল রাখুন সঙ্গে। নাক চাপা দিন ধুলো, ধোঁয়ায়। অনেকে মাস্ক ব্যবহার করেন। তবে বাজারচলতি মাস্কে কাজের কাজ কিছু হয় না। বরং একটু দামি সুতির কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। দীর্ঘ ক্ষণ জল ঘাঁটবেন না।
আরও পড়ুন: নিয়ম করে খান আমন্ড, রিঙ্কল থেকে দূরে রাখুন ত্বককে
বাজারচলতি মাস্ক নয়, ব্যবহার করুন সুতির কাপড়ের মাস্ক।
ওষুধে না কমলে?
সাধারণত প্রথম থেকে সতর্ক হলে ওষুধেই কমে এমন অসুখ। তবে সমস্যা না কমলে চিকিৎসার নানা পদ্ধতি রয়েছে। কারও ক্ষেত্রে রোগের ধরন বুঝে এন্ডোস্কোপের সাহায্য নিতে হতে পারে। কারও আবার সিটি স্ক্যান লাগে। তবে সাধারণত বাড়বাড়ি হলে প্রথমিক পর্যায়ে অ্যালার্জি টেস্টই করে থাকেন চিকিৎসকরা।
ওষুধে না কমলে ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারির মাধ্যমেও মিউকাস বার করা হয়। আবার আধুনিক কালে অনেকেই বেলুন সাইনোপ্ল্যাস্টির শরণ নিচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে সাইনাস গহ্বরে বেলুন প্রবেশ করিয়ে প্যাসেজ বড় করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy