Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
fever

সন্তান জ্বরে ভুগছে? করোনা পরিস্থিতিতে কী করবেন

জ্বর কিন্তু আদৌ কোনও রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। কী করবেন, কী করবেন না।

শিশুর যত্নে ওষুধ বাছুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে। ফাইল চিত্র।

শিশুর যত্নে ওষুধ বাছুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে। ফাইল চিত্র।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ১৫:০৭
Share: Save:

করোনার দাপটে জ্বর হলেই আতঙ্কে ভুগছেন ছোট থেকে বড় সকলেই। এ দিকে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বর্ষাকাল এসে গিয়েছে। যখন তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, কখনও আবার ভ্যাপসা গরম। এই সময় ছোটদের জ্বরের ঝুঁকি ভীষণ ভাবে বেড়ে যায়। আর জ্বর হলেই কোভিড-১৯-এর ভয়ে জাঁকিয়ে বসছে। তবে চিকিৎসকদের মতে, শুধু করোনার কারণেই যে জ্বর হচ্ছে তা নয়, ফিরে এসেছে ডেঙ্গি জ্বরও। এ ছাড়া সাধারণ ভাইরাল ফিভার তো আছেই। তাই জ্বর হলেই কোভিড-১৯ মনে করার কোনও কারণ নেই, বরং উপসর্গের দিকে নজর দেওয়া দরকার বলেই মত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়।

জ্বর কোনও অসুখই নয়

জ্বর কিন্তু আদৌ কোনও রোগ নয় রোগের উপসর্গ মাত্র। জীবাণুর সংক্রমণ বা অন্যান্য কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ভাইরাসকে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাই জ্বর হয়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায়ের মতে, “বেশির ভাগ জ্বরের নেপথ্যেই শ্বাসনালী, গলা, পেট-সহ কোনও না কোনও সংক্রমণ আছে। কোভিড-১৯ ভাইরাস ছাড়াও এই সময়টায় বৃষ্টি ও তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ অন্যান্য জীবাণুদের সংক্রমণেও জ্বর হতে পারে। তবে ইদানীং যত শিশু জ্বর নিয়ে আসছে, তাদের বেশির ভাগেরই ভাইরাল ফিভার। বাতাসবাহিত এই অসুখ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি কথা বলার সময়েও এই জীবানুরা বাতাসে মিশে রোগ ছড়াতে পারে। তাই শিশুদের মাস্ক পরিয়ে রাখা ও ভিড় এড়িয়ে চলার পাশাপাশি হ্যান্ড হাইজিন মেনে চলার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে।”

জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক নয়

বাচ্চার জ্বর হলে ভয় পেয়ে অনেক অভিভাবক শিশুকে তড়িঘড়ি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। অনেকে আবার জ্বর হলেই কোভিড-১৯-এর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে চান। এর কোনওটাই করার দরকার নেই বলে অভয় দিলেন পল্লব চট্টোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের মতে, শিশুর জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখবেন, কিন্তু নিজে নিজে চিকিৎসা করে বিপদ বাড়াবেন না। জ্বর খুব বেশি হলে মাথায় জলপট্টি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈষদুষ্ণ জলে বাচ্চার শরীর স্পঞ্জ করিয়ে দিতে হবে। বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। জ্বরের পাশাপাশি বাচ্চার অন্যান্য উপসর্গর দিকেও লক্ষ্য রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর হলে শিশুরা খেতে চায় না, বমি করতে পারে ও পেটে ব্যথা ও ডায়ারিয়াও হতে পারে। এর সঙ্গে মাথা ও গা-হাত-পা ব্যথা তো করেই। অনেকে দ্রুজ্বর কমাতে আইব্রুফেন জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দেন। ভুলেও এই ওষুধ দেবেন না। বরং মাথা ধুয়ে দিয়ে অল্প গরম জলে গা হাত পা স্পঞ্জ করিয়ে দিলে ভাল হয়।

আরও পড়ুন: কলকাতায় করোনার নয়া উপসর্গের সন্ধান: চর্মরোগ, ডায়ারিয়াতেও সতর্ক হোন

মাস্ক, স্যানিটাইজার দিয়ে শিশুর জীবনয়াপনেও আনুন বদল।

জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া হলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে। তাই জ্বরের সময় বাচ্চা খাবার খেতে আপত্তি করলেও বারে বারে জল, সুপ, শরবত জাতীয় জলীয় খাবার দেওয়া জরুরি। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা ঝিমিয়ে পড়লে বা জ্ঞান হারালে বাড়িতে রেখে চিকিৎসার বদলে চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার হতে পারে।

আরও পড়ুন: করোনা-সংক্রমণকে কমিয়ে ফেলার ওষুধ কি তবে এসে গেল? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দরকার হলে তবেই রক্ত পরীক্ষা করান

জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক বাবা মা নিজেরাই শিশুর ব্লাড টেস্ট করান নিজেদের ইচ্ছে মতো। কিন্তু বাচ্চাদের জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করার দরকার নেই। শান্তনুবাবুর মতে, “সাধারণ ভাইরাল ফিভারের সঙ্গে গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা ডায়রিয়া হলে এবং বাচ্চা যদি নেতিয়ে পরে তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।”

শিশুর জ্বর কমাতে অনেকেই চিকিৎসককে ফোন করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। এ দিকে ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকাই নেই। জ্বরের সঙ্গে অন্য কোনও সংক্রমণ হলে তার জন্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে বাচ্চাকে খাওয়ালে বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এই পরিস্থিতিতে শিশুকে সুস্থ রাখতে তাকে অকারনে বাইরে নিয়ে যাবেন না, শপিং মল বা বাজারে গেলে করোনা ছাড়াও অন্যান্য জ্বরের ঝুঁকি থাকে। বাড়ির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রেখে মশা মাছির হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করে সুস্থ রাখুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy