জ্বরের লক্ষণ বুঝলে চিকিৎসা সহজ হয়। ছবি: শাটারস্টক।
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঘরে ঘরে জ্বরের হানা নতুন নয়। তবে জ্বরের প্রকারভেদে এর গুরুত্ব ও চিকিৎসাও বদলে যায়। সাধারণত, আমাদের রাজ্যে ফি বছর ডেঙ্গি ও ভাইরাল ফিভারে মৃত্যু হয় অনেকের। অনেক সময় জ্বর হলেও কী ধরনের জ্বর তা বুঝতেই কেটে যায় অনেকগুলো দিন। প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করতেও তাই দেরি হয়ে যায় রোগীর তরফে। অনেক সময় সাধারণ জ্বরব্যধির ওষুধ খেয়েই সপ্তাহ খানেক সময় নষ্ট করে পেলেন রোগী। সে কারণেই জ্বরের উপসর্গের ফারাকটুকু জেনে রাখা খুবই জরুরি।
তবে অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাল ফিভার না সারতে চাওয়ার নেপথ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে জীবাণুর লড়ে যাওয়ার ক্ষমতাকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মত, ঘন ঘন ও অবৈজ্ঞানিক উপায়ে অ্যন্টিবায়োটিক নেওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে বিপদ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, “এই অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে মেদ তো বাড়ছেই, তার সঙ্গে শরীরে সুপারবাগসের উপস্থিতি সমস্যায় ফেলছে রোগী ও চিকিৎসককে। যখন-তখন ইচ্ছে মতো অ্যান্টিবায়োটিক নিতে নিতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ (এএমআর)। ফলে শুধু যে জ্বরের জীবাণুকে মারতে না পেরে তাকে ‘অজানা’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তা-ই নয়, অন্যান্য অসুখের ক্ষেত্রেও চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: অনেক ক্ষণ একটানা বসে কাজ? স্লিপ ডিস্ক ঠেকাতে এ ভাবেই সতর্ক হোন
হেমন্ত ঋতু এমনিতেই শীতের বার্তাবাহক। তাই এই সময় আবহাওয়ায় হিমেল ভাব আসে। শীতের প্রাক ইনিংস ঝালিয়ে নিতে এই সময়টাই যথার্থ। আর এর হাত ধরে জীবাণুরাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে তাই জ্বরের হানায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শঙ্কর দাসের মতে, ‘‘খুব ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, প্রতিটা জ্বরই একে অন্যের চেয়ে আলাদা। গত কয়েক বছরে পরিসংখ্যানের হিসেব ধরলে, আমাদের রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তার পরেই কিন্তু টাইফয়েড ও ভাইরালের ভাগ বেশি। তবে রোগীর বাড়ির পরিজন ওয়াকিবহাল হলে ও রোগী নিজেও একটু সতর্ক থাকলেই জ্বরের ধরন সহজে বুঝে চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।’’
কেমন করে বুঝবেন জ্বরের ধরন
চিকিৎসকদের মতে, প্রতিটি জ্বরের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, তার জেরেই সে অন্যের চেয়ে আলাদা। কোথায় আলাদা এটুকু বুঝলেই অসুখে নির্ণয় সম্ভব। কোন জ্বরের প্রকার কেমন, রইল হদিশ।
ভাইরাল ফিভার: সাধারণত ঘুষঘুষে জ্বর এই ধরনের অসুখের অন্যতম লক্ষণ। যদি জ্বর কখনও ১০২ ওঠেও, তার পর জলপট্টি, জ্বরের ওষুধে জ্বর দ্রুত নামে। সঙ্গে সর্দি, কাশি, গলা খুসখুস ও ঠান্ডা থেকে মাথা যন্ত্রণা থাকে। শরীর দুর্বল থাকে। কখনও কখনও সারা শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে অসুখ ও দুর্বলতা সারতে ১ সপ্তাহ সময় নেয়।
ডেঙ্গি: একটানা ঘুষঘুষে বা উচ্চ তাপমাত্রায় ৫ দিন জ্বর। চোখের পিছন দিক থেকে সারা কপাল ও মাথা জুড়ে যন্ত্রণা। হাড়ে ব্যথা, ঘন ঘন বমি ও ডায়েরিয়ার কিছু উপসর্গও দেখা যায়। শরীরও খুব দুর্বল থাকে। এই জ্বরে সাধারণত সর্দি-কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা না গেলেও ত্বকে নানা রকম র্যাশ ও চুলকানি দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে। নাক ও দাঁতের গোড়া থেকে রক্তপাতও হতে পারে। রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
এলাইজা পরীক্ষার মাধ্যমে এই অসুখ নির্ণয় করতে হয়। বিশেষ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি ও দ্রুত রোগ নির্ণয় করলে অসুখ সারানো সম্ভব।
আরও পড়ুন: মেদ ঝরাতে রোজ সকালে লেবু-জল, আদৌ কোনও লাভ আছে কি?
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
টাইফয়েড: একটানা দীর্ঘ দিন ধুম জ্বর থাকে। ১০-১২ দিন ধরে নানা জ্বরের ওষুধ খাওয়ার পরেও জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যায়। কোনও সময় তা নামলেও খুব ধীরে নামে কিন্তু বাড়ার সময় হু হু করে বাড়ে। সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, বমি ভাব থাকে। অনেকের ক্ষেত্রেই পেটে যন্ত্রণা ও পেট খারাপের উপসর্গ দেখা দেয়। মূলত উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘ দিনের জ্বর এর মূল লক্ষণ।
চিকুনগুনিয়া: এই ধরনের অসুখে টানা চার-পাঁচ দিন জ্বর থাকে। সঙ্গে দুর্বলতা দেখা দেয়। কারও কারও ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিসের প্রকোপ দেখা যায়। বহু দিন ধরেই গাঁটে গাঁটে ব্যথা থাকে। মুখে কোনও স্বাদও থাকে না।
ম্যালেরিয়া: কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে, কাঁপুনি দিয়েই জ্বর ছাড়বে। এই জ্বরের এটাই মূল লক্ষণ। এর সঙ্গে মাথায় ও গাঁটে যন্ত্রণা থাকে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে খুব। কারও কারও ক্ষেত্রে বমি দেখা দেয়। তবে বাড়াবাড়ি হলে খিঁচুনিও হতে পারে। ঠিক সময়ের রক্তপরীক্ষা এই রোগ নির্ণয়ে খুব প্রয়োজন। দ্রুত চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করলে বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই অসুখ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy