উঁচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীর অনেকেই পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগে। ছবি: আইস্টক।
পুজোর পরেই বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতির মরসুম শুরু হয়ে যায়। কোনও কোনও স্কুলে পুজোর পর মূল্যায়ন পরীক্ষাও থাকে। তাই উৎসবের মজা সেরে উঠেই বইপত্রের জগতে ডুবে যেতে হয় বাড়ির খুদে সদস্যকে। আর সন্তানের পরীক্ষা মানেই উদ্বেগ থেকে প্রস্তুতি সব যেন আপনারও! বর্তমান যুগে পড়াশোনার চাপ, কেরিয়ারের ভাবনা ছোট বয়স থেকেই শুরু করে দেন অভিভাবকদের একাংশ।
আর এই ভাবনা আর ভয় থেকেই কোনও কোনও সিশুর বেলায় দেখা যায় পরীক্ষাভীতি। তবে শুধু ছোটদের বেলায় নয়, একটু উঁচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরাও কিন্তু অনেকেই পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগে। তবে তাঁদের ভয়ের কারণ ও মাত্রা ছোটদের মতো নয়। আর এই ভয়ের জেরে ফলাফল আরও খারাপ হয়। যেটুকু সময় বাকি আছে, ভয়ের চোটে তাকেও ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না। সিলেবাস শেষ হয়নি বা তেমন করে মন দেওয়া হয়নি সারা বছর, এমন সমস্যাও নতুন নয়।
কোনও ভাবে যদি আপনার সন্তানও এমন সমস্যায় পড়ে, তা হলে সেই ভয় কী ভাবে দূর করবেন? হাতে যেটুকু সময় আছে, মন দিয়ে ও বুদ্ধি খাটিয়ে সেটুকু সময়কে কাজে লাগাতে পারলে কিন্তু অনেকটাই সামলানো যায়৷ কী করবেন?
আরও পড়ুন: রান্নার নানা ভুলই ডেকে আনে অসুখ, কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকতেই হবে
ঠান্ডা মাথায় বসে কয়েকটি জিনিস পর পর ভাবুন৷ অনেকেই নানা কারণে পরীক্ষার কয়েক মাস আগে পড়া শুরু করে৷ এবং মোটের উপর ভলও করে৷ কাজেই অকারণ উদ্বিগ্ন হবেন না। সন্তানের ভয়ের জায়গাটাও দূর করতে হবে। অসুস্থতায় বছর কাটালে তো বকাবকি আরওই চলবে না। বরং পাশে থাকতে হবে, যাতে মনের জোর পায়। যদি অকারণেই সময় নষ্ট করে থাকে, তা নিয়ে শাসন করবেন ঠিকই, খেয়াল রাখবেন যেতে পরের বছর এমনটা করার সুযোগ না পায়। তবে এ বছরের জন্য বাকি সময়টা ব্যবহার করতেও শেখান। ভাল করে রুটিন বানিয়ে দিন৷ কত ক্ষণ পড়বে, স্নান–খাওয়া–ঘুমে কত সময় লাগবে, সব হিসেব করে নিন৷ তবে হ্যাঁ, ঘুমের সময়ে কিন্তু খুব একটা কাটছাঁট করবেন না৷ কারণ ঠিক মতো না ঘুমলে পড়ায় মন বসবে না৷ পড়া মনে রাখতেও অসুবিধে হবে৷ ডিপ ব্রিদিংয়ের জন্য সকাল–বিকেল দশ মিনিট করে রাখুন৷ আধ ঘণ্টা রাখুন আড্ডা, বেড়ানো ইত্যাদির জন্য৷ পড়া মনে রাখতে গেলে এটুকুর দরকার আছে৷
সাজেশন হোক বা পড়ার রুটিন, সবেতেই সন্তানের পাশে থাকুন।
কী ভাবে পড়বে তার প্ল্যান করে দিন৷ যে যে বিষয়ে সে দুর্বল সেগুলো বেশি করে পড়তে হবে৷ দরকারে কয়েক বছরের প্রশ্ন গেঁটে একটা সাজেশন করে নিতে হবে। সাজেশন ভিত্তিক পড়াশোনার অভ্যাস ভাল নয়, তবু দুরবস্থা দূর করতে কিছুটা কাজে আসবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বারবার পড়া চাই৷ একটা অধ্যায় শেষ করে ১০–১৫ মিনিট পরে তবে অন্য বিষয়ে হাত দিতে দিন। ওই সময় পড়া বিষয়টা খুব ছোট ছোট পয়েন্টে লিখে বা গল্পের ছলে আলোচনা করুন ওর সঙ্গে ৷ যে অধ্যায় পড়া হল সেটা পর দিন আবার পড়া এবং সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন সমাধান করাও জরুরি৷ দিনে দু’তিনটের বেশি বিষয় না পড়াই ভাল৷ টার্গেট ঠিক করে নেবেন৷ চেষ্টা করবেন সেটা মানতে৷ টেনশন–স্থিরতার অভাবে প্রথম দিকে মন বসাতে অসুবিধে হবে৷ কাজেই উত্তেজক ব্যাপার থেকে দূরে থাকুন৷ ঝগড়া–বিবাদের মধ্যে রাখবেন না৷ যে কোনও ঘরোয়া অশান্তি পাশ কাটিয়ে যান৷ একাগ্রতা বাড়াতে ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন, যোগাসনের কোনও জুড়ি নেই৷ অভ্যাস করিয়ে দেখতে পারেন৷ টেনশন কমাতে খাওয়াদাওয়ার দু’-চারটে নিয়ম মেনে চলুন৷ যেমন, উঁচু ক্লাসে পড়লেও কফি বেশি খাবেন না৷ কোল্ড ড্রিঙ্কও না খাওয়াই ভাল৷ চা খান৷ তবে বার বার খেতে ইচ্ছে হলে পরিমাণে একটু কম খাবেন৷ হালকা খাবার আর দিনে অন্তত ৭–৮ গ্লাস জল খান৷ সুরের প্রভাবেও মন শান্ত হয় আমাদের৷ কাজেই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গান শুনতে পারেন৷ নিয়ম মানা সত্ত্বেও টেনশন হলে ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে আলোচনা করুন৷ চেষ্টা সত্তেও পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলেও সবাই পাশে থাকবেন এই আশ্বাস পেলে অনেক সময় মনে জোর ফিরে আসে৷ হঠাৎ টেনশন মূলত একটু উঁচু ক্লাসে হয়। উদ্বেগ বাড়লে মন অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করুন৷ অনেক সময় পড়তে বসে দেখা যায়, কিছুই মাথায় ঢুকছে না৷ মনে হয় নির্ঘাত ফেল করবেন৷ তৎক্ষণাৎ পড়া ছেড়ে উঠে সিনেমা দেখে আসুন বা যা করলে ভাল লাগবে তাই করুন৷ অশান্তি কেটে যাওয়ার পর আবার বই নিয়ে বসবেন৷ চেষ্টা করেও টেনশন না কমলে, হাত–পা কাঁপা, বুক ধড়ফড়, ঘেমে যাওয়ার মতো উপসর্গ শুরু হলে এবং তার জেরে পড়াশোনা এবং জীবনযাত্রা যদি ব্যাহত হয় দেরি না করে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷ প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হতে পারে৷ টেনশন কাটাতে আর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে উঁচু ক্লাসে অনেকে নেশা করতে শুরু করেন, ভাবেন এতে পড়ার সুবিধে হবে, কিন্তু হয় উল্টো বিপত্তি৷ কাজেই এ সব পথে যেন সন্তানএকেবারেই না হাঁটে খেয়াল রাখুন।
আরও পড়ুন: আমন্ড না আখরোট? কখন কোনটা খাবেন...
লিখে লিখে পড়ার অভ্য়াস করান ছোট থেকেই।
মৌখিক পরীক্ষার ভয় কাটাতে কয়েকটি পদ্ধতি মেনে দেখুন, কাজ হতে পারে৷ যেমন—
প্রশ্ন এবং উত্তর কথ্য ভাষায় লিখে আয়নার সামনে বলুন৷ কাউকে বলুন প্রশ্ন করতে৷ আপনি উত্তর দিন খাতা না দেখে৷ পরের ধাপে বাড়ির কয়েক জনকে প্রশ্নোত্তর পর্বে থাকতে বলুন। বিষয়ের বাইরেও কিছু প্রশ্ন করতে বলুন৷ ভেবেচিন্তে উত্তর দেওয়া ও অজানা প্রশ্ন মোকাবিলা করা সহজ হবে৷ কোনও বিষয়ে দু’-তিন মিনিট বলা অভ্যাস করুন৷ প্রথমে লিখে আয়নার সামনে, তার পর না দেখে কয়েক জনের সামনে৷ কোনও কোর্সে ভর্তি হতে পারেন৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy