আপনার সামনেই হাজির হাজারো সমস্যার মুশকিল আসান
ফোড়ন বা বড়জোর পরোটার পুর। বাঙালি হেঁসেলে মেথি এবং মেথিশাকের দৌড় এর বেশি খুব একটা বাড়েনি। এই একটি মশলায় যে আরও গুণ আছে, তার সন্ধান আমাদের অনেকের কাছেই অজানা।
মেথির ইংরেজি নাম ‘ফেনুগ্রিক’ থেকেই বোঝা যাচ্ছে বিদেশে এর কদর আছে বহু যুগ ধরেই। লাতিন ভাষা থেকে ফরাসি ছোঁয়া পেয়ে এই শব্দের প্রবেশ ইংরেজিতে। আক্ষরিক অর্থ হল ‘গ্রিক খড়’।
শুধু ইউরোপেই নয়, মেথির ব্যবহার ছিল সুদূর অতীতের ব্রোঞ্জ যুগেও। প্রাচীন সুমেরীয় ও মিশরীয় সভ্যতায় যে মেথি খাওয়া হত, তার প্রমাণ পেয়েছেন ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিকরা। শারীরিক সুস্থতা এবং রূপটানে মেথির উপকারিতা অসংখ্য।
এই মশলায় যে আরও গুণ আছে, তার সন্ধান আমাদের অনেকের কাছেই অজানা
ওজন হ্রাস:
রোগা হতে চাইল ডায়েটে অবশ্যই রাখুন মেথি। দু’গ্লাস জলে রাতভর ভিজিয়ে রাখুন এক চা চামচ মেথিদানা। সকালে খালি পেটে ছেঁকে নিয়ে ওই মিশ্রণ পান করুন। মেদ এবং ওজন কমাতে এই হেল্থ টনিকের জুড়ি নেই।
বদহজম ও অ্যাসিডিটি দূর:
অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও ফাইবারে ভরা মেথি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে। মেথি ভেজানো জলের পাশাপাশি রান্নাতেও মেথি দিন। পেটের সমস্যা দূর হবে।
কোলেস্টেরল কমায়:
নিয়মিত মেথি খেলে শরীরে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। মেথির প্রভাবে ক্ষুদ্রান্ত্র কোলেস্টেরল গ্রহণ করে না। ফলে দেহে এলডিএল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড-এর মাত্রা লাগামছাড়া হতে পারে না।
মেথি শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন দূর করে
মধুমেহতে কার্যকরী:
মেথিতে থাকা গ্যালাক্টোম্যানানের প্রভাবে দেহে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না। মেথির অ্যামাইনো অ্যাসিডের জন্য অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপাদিত ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ে। তাই শর্করা রোগীর ডায়েটে মেথি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ঋতুস্রাবের কষ্ট হ্রাস:
ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের ভেজানো মেথিদানা চিবিয়ে খেতে বলা হয়। মেথিতে থাকা যৌগ এই সময়কার পেটের যন্ত্রণায় উপশম দিতে খুবই কার্যকর।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
গ্যালাক্টোম্যানান ছাড়াও মেথিতে আছে প্রচুর পটাসিয়াম। ফলে মেথি খেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে। কমে হৃদরোগের ঝুঁকিও।
কিডনি ভাল রাখে:
মেথিদানার প্রভাবে কিডনি ভাল ভাবে কাজ করে। কিডনির কোষও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় মেথি সেবনে।
মেথির ভিটামিন সি ত্বকের জন্য খুব উপকারি
সুস্থতার পাশাপাশি রূপ সৌন্দর্য রক্ষাতেও মেথি অপরিহার্য।
ত্বকের জেল্লা বাড়ায়:
মেথির ভিটামিন সি ত্বকের জন্য খুব উপকারি। এক চামচ মেথিবাটা বা মেথিগুঁড়োকে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে সেটিকে ফেসিয়াল মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে।
ত্বক পরিষ্কার:
রাতভর ভিজিয়ে রাখা মেথিদানা পেস্ট করে মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর সেটি ফেসিয়াল মাস্ক হিসেবে মুখের সব অংশে খুব ভাল করে লাগান। মেথিদানা ভেজানো জলটুকু ফেলবেন না। ওতে তুলো ভিজিয়ে ক্লিঞ্জার হিসেবে ব্যবহার করুন। ত্বকের গভীরে ঢুকে ধুলো ময়লা তেল বের করে আনে এই রূপটান। আবার মেথিদানা ভেজানো জল ফেসিয়াল টোনারের ভূমিকাও পালন করে। বোতলে ভরে রেখে দিন মেথি ভেজানো জল। তারপর ময়শ্চারাইজার লাগানোর আগে ওই মিশ্রণ দিয়ে স্কিন টোনিং করে নিন।
স্ক্রাবার ও ময়শ্চারাইজার হিসেবে:
ভেজানো মেথিদানা পেস্ট করে ওই মিশ্রণ দিয়ে স্ক্রাব করলেও ত্বক উজ্জ্বল হয়। মরা কোষ ঝেরে ফেলে এবং বাড়তি তেল মুছে আপনার ত্বককে ঝকঝকে করে তোলে মেথির স্ক্রাবার। আবার এই একই মিশ্রণ টক দই এবং মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা ত্বকের জন্য ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে।
ত্বকের কালচে ভাব দূর করে:
মেথির ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে ত্বকের দাগছোপ এবং বয়সের রেখা দূর করে। রাতে ভেজানো মেথি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পরের দিন সকালে একটি মিশ্রণ বানান। কিছুক্ষণ রেখে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। এতে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়বে।
অ্যাকনে কমাতে:
জলে মেথিদানা ফোটান অন্তত ১৫ মিনিট ধরে। তারপর ওই জল ছেঁকে তুলোয় করে মুখে লাগান। রোজ ব্যবহার করলে এর ফলে কমবে অ্যাকনে ও ব্রণর সমস্যা।
চুলপড়া কমায়:
রাতে ভেজানো মেথিদানার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ বানান। তারপর ব্যবহার করুন হেয়ারমাস্ক হিসেবে।
নারকেল তেলে ১০ দিন ধরে মেথিদানা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ওই তেল ছেঁকে নিয়ে মাথায় মালিশ করুন। এতে দূর হবে খুশকি ও চুলপড়ার সমস্যা।
চুল চকচকে করে:
অর্ধেক কাপ ভেজানো মেথি, আর্ধেক কাপ টক দই, লেবুর রস আর জল মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। স্ক্যাল্প ও চুলে ভাল করে লাগিয়ে রাখুন অন্তত এক ঘণ্টা। তারপর হাল্কা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। বাজারচলতি যেকোনও কন্ডিশনারকে হার মানাবে আপনার চুলের জেল্লা।
চুলের বৃদ্ধি:
অর্ধেক কাপ ভেজানো মেথি, এক চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক চামচ নারকেল তেল, সাত চামচ রোজমেরি অয়েল একসঙ্গে নিয়ে মিশ্রণ বানান। তারপর স্ক্যাল্পে মালিশ করুন। ৪০ মিনিট রেখে ভাল করে মাথা ধুয়ে নিন।
অকালপক্বতা রোধ:
অকালে চুল পাকার হার কমাতে মেথি খুব কার্যকর। ভেজানো মেথিদানায় মেশান আমলার রস। স্নানের এক ঘণ্টা আগে স্ক্যাল্প ও চুলে ভাল করে লাগিয়ে নিন। তারপর হাল্কা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। কমবে অকালপক্বতার হার।
বাজারচলতি দামি জিনিসের বদলে রান্নাঘরে মশলার কৌটো থেকে একমুঠো মেথিদানা তুলে নিন। আপনার সামনেই হাজির হবে হাজারো সমস্যার মুশকিল আসান।
(ছবি: শাটারস্টক)
আরও পড়ুন: হাতের কাছের এই সব উপকরণে সহজেই দূর করুন খুশকির সমস্যা
আরও পড়ুন: এই নিয়মগুলি মনে রাখুন, নখ থেকে চট করে উঠবে না নেলপলিশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy