Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Exercises

সচলতা বাড়াতে ভরসা শারীরচর্চা

অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মোবিলিটি অর্থাৎ সচলতার অভাবে ব্যাহত হতে পারে রোজকার কাজকর্ম। সময় থাকতে সচেতন হতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৯:০৭
Share: Save:

কাঁধের ব্যথায় কেউ দরজার ছিটকিনি আটকাতে পারেন না, কেউ আবার মাটিতে পড়ে যাওয়া জিনিস কোমরে ব্যথার কারণে তুলতে পারেন না। হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা হওয়া, অনেকক্ষণ বসে থাকলে পা ফুলে যাওয়া, কোমরে খিঁচ ধরা, দৌড়ে বাস ধরতে গেলে পায়ের পেশিতে টান ধরা... এ সবই এখন সাধারণ সমস্যা। ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এ ধরনের সমস্যা এখন প্রতি দশজনের মধ্যে প্রায় সাত জনেরই। আর এর মূল কারণ পেশি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মোবিলিটি অর্থাৎ সচলতার অভাব।

আধুনিকতার সুযোগে কায়িক শ্রমের প্রয়োজনীয়তা যত কমছে, তত এ ধরনের সমস্যা জাঁকিয়ে বসছে শরীরে। সঙ্গে রয়েছে লাগামহীন খাওয়াদাওয়াও। তাই পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই সতর্ক হওয়া দরকার। আর তার একমাত্র উপায় শারীরচর্চা। রোগ কিংবা ওজন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও, নিয়মিত শারীরচর্চায় বাড়ে কর্মক্ষমতা, পেশির নমনীয়তা। তাই অন্যান্য শারীরচর্চার সঙ্গে নিয়মিত দিনে অন্তত দশ মিনিট করে দু’বেলা মোবিলিটি অর্থাৎ সচলতা বাড়ানোর ব্যায়াম পেশির জড়তা ছাড়াতে পারে। কাজে এনে দিতে পারে গতিশীলতা।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ধাপে ধাপে করুন

হাত, ঘাড়, হাঁটু, কোমর, পা... শরীরকে গতিশীল রাখতে সুস্থ থাকা দরকার সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরই। সকালে অন্তত আধ ঘণ্টা সাইক্লিং কিংবা সাঁতার কাটতে পারেন। নিদেনপক্ষে মিনিট কুড়ি হনহনিয়ে হাঁটাও কিন্তু শরীরে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়াতে পারে। তা ছাড়া জিম, যোগব্যায়াম কিংবা রোজকার শারীরচর্চার রুটিনে জুড়ে নিন কিছু মোবিলিটি বাড়ানোর ব্যায়াম।

  • ঘাড়ের জন্য: কম্পিউটার, ল্যাপটপে একটানা কাজের চোটে হাতে, ঘাড়ে ব্যথা হয় অনেকেরই। ঘাড়ের ব্যায়াম তা থেকে মুক্তি দিতে পারে। চেয়ার বা বিছানায় সোজা হয়ে বসে ঘাড় প্রথমে ডান-বাঁ, উপর-নীচ করুন পাঁচ বার করে। এ বার প্রথমে বাঁ দিকে ঘাড় স্ট্রেচ করে পিছন দিকে তাকিয়ে পাঁচ গুনুন। ফের একই ভাবে ডান দিকে ঘাড় স্ট্রেচ করুন। ঘাড় পিছন দিকে হেলিয়ে উপর দিকে তাকিয়ে অন্তত দশ গুনুন। তবে ব্যায়ামের সময়ে ঘাড় নীচের দিকে ঝোঁকাবেন না। এ ব্যায়ামে ঘাড়ে ব্যথা কমার পাশাপাশি কমবে ডাবল চিনও।
  • কাঁধের ব্যথায়: শোল্ডার রোলিং, শোল্ডার শ্রাগিং, স্ট্রেচিং অব দ্য শোল্ডার প্লেটসের মতো একাধিক ব্যায়াম উপকারী। শোল্ডার রোলিং করতে চেয়ারে বসে হাত দু’পাশে ঝুলিয়ে রাখুন। এ বার প্রথমে ক্লকওয়াইজ় ও অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ় দশ বার করে ঘাড় ঘোরান। দিনে দু’বার করুন এই ব্যায়াম। শোল্ডার শ্রাগ করতে মাথা না নাড়িয়ে দু’কাঁধ দিয়ে দুই কানের লতি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এই অবস্থায় পাঁচ সেকেন্ড ধরে রেখে ছেড়ে দিন। পাঁচ সেট করে দিনে দু’বার করুন এই ব্যায়াম। স্ট্রেচিং অব দ্য শোল্ডার প্লেটসে দু’হাত ভাঁজ করে মাথার পিছনে রাখুন। কনুই দুটো দুই গালে ঠেকান। এ বার শ্বাস নিয়ে যতটা সম্ভব পিঠের দিকে দুই হাত একসঙ্গে স্ট্রেচ করুন। সারা পিঠে টান অনুভব করবেন। এ বার পাঁচ গুনে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত আবার গালের কাছে নিয়ে আসুন।
  • পিঠের ব্যায়াম: মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। ডান থাইয়ের পাশে দু’ হাত রেখে প্রথমে ডানদিকে যতটা সম্ভব কোমর ও শরীর বেঁকান। পাঁচ সেকেন্ড পিছনের দিকে তাকিয়ে থেকে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। পাঁচ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে ফের উল্টো দিকে একই ব্যায়াম করুন। করতে পারেন সিটেড ব্যাক আর্চও। এ ক্ষেত্রে চেয়ারে বসে দুই হাঁটুর উপরে হাতের তালু দু’টি রাখুন। মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। এ বার উপর দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিতে নিতে শরীরটা পিছনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন। এই ভাবে পাঁচ সেকেন্ড ধরে রেখে ফের শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। দিনে মোটামুটি পাঁচ বার করুন এই ব্যায়াম।
  • হাঁটু ভাল রাখতে: দুই হাঁটুর তলায় একটা বালিশ রাখুন। গোড়ালিও রাখুন কুশনের উপর। দুই হাতের তালু রাখুন থাইয়ের উপর। এ বার গোড়ালি দু’টি জুড়ে পায়ের পাতা সামনে-পিছনে টেনে ধরুন পাঁচ সেকেন্ড করে। দিনে দু’বার অন্তত দশ বার করে করুন এই ব্যায়াম। এ বার কুশন সরিয়ে গোড়ালি উপর দিকে তুলুন, হাঁটু বালিশের উপর নীচের দিকে টেনে ধরুন। পাঁচ সেকেন্ড ধরে রেখে ছেড়ে দিন। দিনে দু’বার করে অন্তত দশ বার করুন এই ব্যায়াম। এতে যেমন হাঁটুর ব্যথা কমবে, তেমনই গোড়ালি, কাফ মাসল, থাই মাসলের মোবিলিটি বাড়বে।
  • পায়ের জোর বাড়াতে: কাফ মাসলের ব্যায়াম করতে পারেন। দু’পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়ান। এতে দেখবেন পায়ের কাফ মাসলে চাপ পড়বে। দশ গুনুন। এ বার গোড়ালির উপরে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে দশ গুনুন। চাপ পড়বে ফ্রন্ট মাসলের উপর। এই ভাবে কুড়ি বার করুন। তা ছাড়া, মিউজ়িকের তালে যেমন আমরা পা নাড়াই, সে ভাবে পায়ের ব্যায়াম করা যায়। হাই-ইন্টেনসিটি মিউজ়িকের সঙ্গে জোড়া পায়ে বা সিঙ্গল পায়ে তাল মেলালেই পায়ের এক্সারসাইজ় হবে।

বাচ্চাদের জন্য

অভিভাবকেরা মনে রাখবেন, ছোটবেলায় বাচ্চার যে ফ্লেক্সিবিলিটি, মোবিলিটি, ইমিউনিটি তৈরি হয়, তা-ই সারা জীবনের সম্বল হয়ে থাকে। তাই মোটামুটি বছর পাঁচ থেকেই বাচ্চাদের শারীরিক সচলতা বাড়ানোর দিকে নজর দিন। এখনকার রুটিনে বাচ্চাদের মাঠে গিয়ে খেলাধুলো কমে গিয়েছে। সব স্কুলেই এখন শারীরচর্চার ক্লাস থাকে। সেখানে যে ব্যায়াম শেখানো হয়, তা মূলত বাচ্চার মোবিলিটি বাড়ানোর ব্যায়াম। তাই অভিভাবকেরা রোজ সকালে স্কুলের সেই ব্যায়ামই ফের একবার অভ্যেস করান বাচ্চাকে। তা ছাড়া সাঁতার, ক্যারাটে, নাচ, ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদিতে ভর্তি করাতে পারেন।

সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর রাখুন। রাতে খাওয়ার পর কুড়ি-পঁচিশ মিনিট হাঁটাচলা করুন। হাঁটতে না চাইলে অন্তত খাওয়াদাওয়ার পর ঘরের টুকটাক কাজ করুন। তবে কোন বয়সের জন্য কী ধরনের ব্যায়াম উপযোগী, তা প্রশিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exercises Health care Fitness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE