—প্রতীকী চিত্র।
মেনোপজ়ের পর থেকেই ক্রমশ ওজন বাড়ছে বছর বাহান্নর নীলিমার। বেড়েছে ভুঁড়ি। কোমর-সহ শরীরের নানা অংশে জমেছে মেদ। একই সমস্যা শীর্ষারও। বয়স এখনও তাঁর চল্লিশের কোঠায়। কিন্তু গত তিন-চার বছরে তাঁর ওজন বেড়েছে প্রায় দশ কেজি। ধরেছে নানা রোগ। চিকিৎসকের বক্তব্য মেনোপজ়ের কারণে বাড়ছে ওজন। আর তার হাত ধরেই বাসা বাঁধছে রোগ।
শীর্ষা, নীলিমার মতো মেনোপজ়ের কারণে বাড়তি এই ওজন, ভুঁড়ি কমানোর চেষ্টা করছেন আরও অনেক চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাই। কখনও জ়ুম্বা, হাঁটাহাঁটি, কখনও বা আবার ডায়েট করছেন তাঁরা। তবে ওজন বিশেষ কমছে না তাতে। ফিটনেস বিশারদ সৌমেন দাস বলছেন, মেনোপজ়ের সময়ে ওজন বাড়ার সমস্যা যেমন সাধারণ, তেমন তা কমানোর জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু শারীরচর্চা।
মেনোপজ় ও তার ফল
মাসিক বা ঋতুস্রাবের মতো মেনোপজ়ও নারী দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। তার প্রভাব পড়ে ঋতুচক্রের উপর। বছর খানেকের বেশি সময় যাবৎ যদি কারও ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে, তবে তা মেনোপজ় বলেই ধরে নেওয়া হয়। এর হাত ধরে আসে মানসিক ও শারীরিক নানা পরিবর্তন। অবসাদ, দুশ্চিন্তা, ঘুমের ব্যাঘাতের পাশাপাশি অত্যাধিক গরম লাগা, খিদে কমে যাওয়া, ক্লান্তি বোধ হওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দেয়। এ ছাড়াও, মেনোপজ়ে মহিলারা ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়েও বেশ চিন্তিত থাকেন। বিশেষ করে এই সময়ে মহিলাদের শরীরের মধ্যভাগ জুড়ে পেট, নিতম্ব এবং উরুতে জমতে থাকে চর্বি। দেখা দেয় ভুঁড়ি। সৌমেন বলছেন, “ওজন বাড়ার কারণে কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি দেখা দেয়। মধ্যবয়সি মহিলাদের অনেকেরই ভুঁড়ি হয়। সঙ্গে পেশির নমনীয়তা যেমন হ্রাস পায়, তেমনই শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথাও হয়। এর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় শারীরচর্চা।”
কী করবেন?
পেট থেকে উরুর উপরের অংশ পর্যন্ত পেশিগুলি হল ‘কোর মাসল’ বা ‘মূল পেশি’। শরীরের এই অংশটির সঙ্গে মেরুদণ্ডের যোগ থাকে। শরীরের ঊর্ধ্বাংশের সঙ্গে নিম্নাংশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই পেশিগুলি। মেনোপজ়ের পর মেদ জমা হয় মূলত শরীরের এই অংশেই। তাই শারীরচর্চায় কোর মাসলের মেদ ঝরানো জরুরি। সৌমেন জানাচ্ছেন, তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম নিয়মিত ভাবে করা যায়। যেমন,
সঙ্গে কার্ডিয়ো, ব্রিদিং, স্ট্রেংদেনিং, টোনিং, ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানোর ওয়ার্কআউট করা জরুরি।
আরও কিছু…
মেনোপজ়ের সময় শারীরিক কারণেই মানসিক অবসাদ ঘিরে থাকে। মেজাজ এ সময়ে খিটখিটে হয়ে থাকে। সে সময়ে রোজ একই ধরনের শারীরচর্চা বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে। তাই একই শারীরচর্চা না করে তা বদলে বদলে করাই ভাল। দিনে মোটামুটি এক ঘণ্টা শারীরচর্চা করা জরুরি। প্রশিক্ষকের পরামর্শ মতো সকাল-বিকালে আধ ঘণ্টা করে ভাগ করেও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সকালে কার্ডিয়ো, স্ট্রেংদেনিং, টোনিং, জগিং ইত্যাদি করলে বিকেলে যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। দিনে অন্তত দশ মিনিট করুন টোনিং ওয়ার্কআউট। ফ্লেক্সিবিলিটি ও স্ট্রেংদেনিং ওয়ার্ক আউট মিলিয়ে অন্তত কুড়ি মিনিট করতেই হবে। নজর দিতে হবে থাই, গ্লুট, হিপ স্ট্রেংদেনিংয়ের দিকেও। ওয়ার্ম আপ দিয়ে শুরু করে বিভিন্ন কুল ডাউন এক্সারসাইজ় দিয়ে শেষ করতে হবে ব্যায়াম।
পুরুষেরও প্রয়োজন
পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওযার পরে পুরুষদেরও জীবনে আসে ‘মেনোপজ়’, বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম অ্যান্ড্রোপজ়। মেনোপজ়ের মতোই অ্যান্ড্রোপজ়ে পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। অবসাদ, ঘুমে ব্যাঘাত, মনোযোগের ঘাটতির পাশাপাশি এ সময়ে বাড়তে থাকে তাঁদের ওজনও। দেখা দেয় ভুঁড়ি ও অতিরিক্ত মেদ। আসে আত্মবিশ্বাসের অভাব। মেয়েদের মতোই তাঁদেরও তাই এ সময়ে প্রয়োজন নিয়মিত শারীরচর্চা।
শারীরচর্চার পাশাপাশি কিন্তু খাদ্যাভ্যাস বদলানো জরুরি। সারা দিনে মাঝেমধ্যেই টুকটাক খাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে। মেনোপজ়ের সময়ে বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে এলেই কমবে মানসিক অবসাদ। শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাধার ভয়ও কমবে। এক বার ওজন অনেকটা বেড়ে গেলে কিন্তু তা কমানো কঠিন হয়ে যায়। সময় থাকতেই তাই সতর্ক হওয়া দরকার। মেনোপজ়ের শুরু থেকে বা তার আগে থেকেই শারীরচর্চা করা, প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শারীরচর্চায় মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি না হলে, মনোবিদের সাহায্য নেওয়া দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy