Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Adenovirus

অ্যাডিনোয় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েও ছড়াতে পারে সংক্রমণ

সংক্রমিত হয়ে অসুখ প্রকাশ্যে আসার পরে প্রথম কয়েক দিন সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা মারাত্মক বেশি থাকে বলেও জানাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যালের শিশু-রোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী।

A Photograph representing Adenovirus

স্থ হওয়ার পরেও রোগীর ফের একই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫৩
Share: Save:

অ্যাডিনোভাইরাসে এক বার আক্রান্ত হওয়া মানে কিন্তু তা থেকে নিস্তার পাওয়া নয়। বরং সুস্থ হওয়ার পরেও রোগীর ফের একই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। আবার কোনও উপসর্গ ছাড়াই শরীরের মধ্যে থাকা ওই ভাইরাস অন্তত কয়েক সপ্তাহ ধরে অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

চলতি মরসুমে অ্যাডিনোভাইরাসের এহেন কাণ্ডে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহলও। তাই অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রমিত শিশু সুস্থ হওয়ার পরেও অন্ততদু’-তিন সপ্তাহ তাকে বাইরে বার করতে বারণ করছেন শিশু-রোগ চিকিৎসকেরা। শহরের এক শিশু-রোগ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অ্যাডিনোয় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে কোনও শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার দিন সাতেক পরে ফের জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ফিরে আসছে। এখন এমন অনেক রোগীই পাওয়া যাচ্ছে।’’

ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের অধ্যক্ষ-চিকিৎসক জয়দেব রায় জানাচ্ছেন, অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মাত্রই রোগ তৈরি হয়ে প্রকাশ্যে আসবে, এমন নয়। বরং ভাইরাস আক্রমণের অন্তত সপ্তাহখানেক পরে সেটি উপসর্গ-সহ প্রকাশ্যে আসে। কারও ক্ষেত্রেসেই অসুখ এক-দু’সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল, তাদের দীর্ঘ দিন ধরে অসুখ থাকছে। এ বার সেই শিশুর থেকে বেশি দিন ধরে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, যে সমস্ত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রেটনসিল, অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি, অন্ত্রে সপ্তাহখানেক বা তার বেশি সময় ধরে ভাইরাস বাস করতে পারে। ফলে তাদের নিজেদের কোনও উপসর্গ না থাকলেও তাদের থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সংক্রমিত হয়ে অসুখ প্রকাশ্যে আসার পরে প্রথম কয়েক দিন সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা মারাত্মক বেশি থাকে বলেও জানাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যালের শিশু-রোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু যে সমস্ত বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা ক্রনিক কোনও অসুখ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে উপসর্গহীন ভাবে অ্যাডিনোভাইরাস শরীরে লুকিয়ে থেকে যেতে পারে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন ভাইরাসকে চিনে নেয়, তখন সেটি আর রোগ তৈরি করতে পারে না। কিন্তু নিশ্চুপ ভাবে থেকে গিয়ে পরবর্তী কালে হামলা চালানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও ভাইরাস বিষয়ক গবেষক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ ভাইরাস কোষের ভিতরে ‘রেপ্লিকেশন’-এর মাধ্যমে সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। তার পরে ওই কোষের মৃত্যু ঘটায় বা হামলা চালাতেপাশ্ববর্তী অন্য কোষে চলে যায়। আবার এক শ্রেণির ভাইরাসের আক্রান্তকোষে বহু দিন থেকে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। অনেক সময় তারা কোষের নিউক্লিয়াসের ডিএনএ-তে নিজেদের ডিএনএ ঢুকিয়ে দীর্ঘদিন চুপচাপ থেকে যায় ও নিশ্চুপ সংক্রমণ (লেটেন্ট ইনফেকশন) চালায়। অ্যাডিনো ডিএনএ ভাইরাস হওয়ায় এর ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ (পার্সিস্টেন্ট ইনফেকশন) খুবই স্বাভাবিক। শিশু-রোগ চিকিৎসক নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, ‘‘হতেই পারে অ্যাডিনোভাইরাস না মরে শরীরেই থেকে গেল। কিছু দিন পরে সেটি আরও শক্তিশালী হয়ে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠল। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহখানেক পরে রোগীর পুনরায় সংক্রমিত হওয়া এবং সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও থাকছে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই শরীরের মধ্যেই এমন ধরনের ভাইরাসের ‘মিউটেশন’ হয়। ফলে আগের স্ট্রেনকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চিনে রাখলেও নতুন স্ট্রেনকে চিনতে পারে না। আর সেই নতুন স্ট্রেন থেকেই ফের সংক্রমিত বা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণেই শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘তাই সুস্থতার পরেও কয়েকটি সপ্তাহ বাইরের জগৎ থেকে শিশুকে দূরে রাখাই ভাল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Adenovirus Viral fever Infection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy