স্পন্ডিওলোসিস ঠেকাতে বদলান কিছু নিত্য অভ্যাস। ছবি: শাটারস্টক।
কোথাও পেশার তাগিদ আবার কোথাও বা নিজের স্বভাবদোষেই শিরদাঁড়ার হাড় ক্ষয়ের জানান দেয় অকালেই। সহজ করে বললে, স্পন্ডিলোসিস বাসা বাঁধছে শরীরে। অফিস ডেস্কে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই টনটন করে উঠছে পিঠ, কাঁধ। কিংবা বাড়িতেও একটানা টিভি দেখতে গিয়ে বা ঘুম থেকে উঠে ঘাড় ঘোরাতে গেলেই মালুম হচ্ছে কলকব্জা বশে নেই।
এ সমস্যা আপনার একার নয়। দৈনন্দিন দৌড়ঝাঁপের সময়ও মাঝে মাঝেই টের পান যে ব্যথা, তা আধুনিক জীবনযাত্রার অসুখ বা লাইফস্টাইল ডিজিজ বলেই দেগে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অস্থিবিশেষজ্ঞ চিন্ময় নাথের মতে, ‘‘স্পন্ডিলোসিস আসলে শিরদাঁড়ার হাড়ের সমস্যা। জন্মের পর থেকে আমাদের হাড়ের সংযোগস্থল বা অস্থিসন্ধিগুলো যেমন থাকে, তা নিয়েই আমরা বেড়ে উঠি, এ বার সে সব ব্যবহার করতে করতে যন্ত্রের মতোই ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। কখনও আবার অস্থিসন্ধির অঞ্চলে থাকা তরল জেল বাইরে বেরিয়েও আসে। তখনই জানান দেয় ব্যথা। ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সারা ক্ষণের ব্যথা, ঘাড় নাড়াতে অসুবিধা হওয়া এই রোগের মূল কষ্টের দিক। ঘাড়ের দিকের অংশে এই রোগ হলে তাকে আমরা বলি, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস। আবার শিরদাঁড়ার নীচের দিকের অংশে অর্থাৎ পিঠের নীচের দিকে হলে তাকে আমরা বলি লাম্বার স্পন্ডিলোসিস।’’
এ রোগের কোনও বয়সসীমা যেমন নেই, তেমন নেই কোনও লিঙ্গ প্রাধান্যও। এই অসুখ পুরুষ-মহিলা সকলের হতে পারে। সাধারণত, ঘাড় ঝুঁকিয়ে কাজ করতে করতে হয়, বা ঘাড়ে ঝাঁকুনি লাগে এমন কাজ করতে হয় যাঁদের, এই রোগে তাঁরাই বেশি আক্রান্ত হন। তবে সময় মতো চিকিৎসা করালে এই অসুখ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মেনে চলতে হয় কিছু ব্যায়াম ও নিয়ম। চিন্ময়বাবুর মতে, ব্যথা কাঁধ থেকে উপরের পিঠে উঠে হাত অবধি ছড়িয়ে যায়। স্পাইনাল কর্ডের উপরেও চাপ ফেলে এই অসুখ।
আরও পড়ুন: একটানা অনেক ক্ষণ টিভির সামনে বসে বিশ্বকাপ? এ সব ব্যায়ামেই দূরে রাখুন হাড়-পেশীর অসুখ
কোমর ব্যথার আটকাতে আজই বদলাল বসার অভ্যাস ও পছন্দের নরম গদির চেয়ার।
কেবল ঘাড়ে ব্যথাই নয়, ব্যথার অংশ অবশ হয়ে যাওয়া, সূচ ফোটানোর মতো বোধ হওয়া এই অসুখের লক্ষণ। হাতেও ব্যথা হতে পারে। মাথা ঘোরার সমস্যাও ধেয়ে আসতেই পারে। তবে এ রোগের হাত থেকে বাঁচতে কেবল ওষুধ খেলেই হবে না, মেনে চলতে হবে কিছু অভ্যাসও। যেমন?
চিকিৎসকের মতে, শুধু ওষুধ খাওয়াই নয়, তার পাশাপাশি কাজ করার ভঙ্গীওবদলাতেহবে। ঘাড় বা পিঠ বেঁকিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসার অভ্যাস বদলাতেই হবে। পেশার তাগিদে তেমন ভাবে বসতে হলে মাঝে মাঝেই উঠে হাঁটতে হবে। ঘাড় এ দিক ও দিক ঘুরিয়ে নিতে হবে, ঘড়ির কাঁটার দিকে ও ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘাড় ঘুরিয়ে ফের সিটে এসে বসুন। চাকা লাগানো ঘোরানো চেয়ারে না বসে চেষ্টা করুন কাঠের চেয়ারের ব্যবস্থা করতে। কম্পিউটার রাখুন এমন দূরত্বে যাতে চোখের সমস্যা না আসে, সঙ্গে চোখ ও কম্পিউটারের স্ক্রিন সোজাসুজি থাকে। কী বোর্ডের দিকে তাকান চোখ নামিয়ে, ঘাড় বেশি ঝুঁকিয়ে নয়। টিভি দেখার সময় একটানা বসবেন না। উঠে হাঁটুন বিজ্ঞাপনী বিরতির ফাঁকে। চেয়ারে সোজা বসুন। আরাম করে হেলান দিয়ে পিঠকে সাপোর্ট দিয়ে নয়, এতে মেরুদণ্ডকে বেঁকে যেতে থাকে। ২০-৩০ মিনিট অন্তর অবশ্যই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। কয়েক পা হাঁটুন। খেয়াল রাখবেন বসার সময় পা যেন মাটি ছুঁয়ে থাকে। শিশুদের বেলাতেও এমন উচ্চতায় টেবিল-চেয়ার দিন, যাতে পড়তে বা লিখতে গেলে খুব ঘাড় ঝোঁকাতে না হয়। তাদেরও পড়ার জায়গা বদল করুন। মাঝে মাঝে শুয়ে শুয়ে পড়লেও ক্ষতি নেই। তবে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুক সে ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল বাড়ছে? খাদ্যাভাস ও জীবনযাপনে করুন এ সব পরিবর্তন
প্রথম থেকে সচেতন না হলে এই অসুখ গড়াতে পারে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত।
এই অসুখ সামলাতে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আছে, বিশেষ করে কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ। মাংসপেশিকে শক্ত রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করুন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীকে বেল্ট, কলার বা বিশেষ ট্রাকশান নেওয়ার ব্যায়াম দেওয়া হয়। ইউটিউব দেখে নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে সব ব্যায়াম অভ্যাস করুন। আমাদের শিরদাঁড়ায় কিছু ডিস্ক রয়েছে। ব্যবহারের ফলে এই ডিস্কেও ক্ষয়হয়। এই ডিস্ক ক্রমশ নষ্ট হতে শুরু করে। এর ফলে নষ্ট হতে হতে এরা আশপাশের হাড় ও মাংসপেশির উপরে চাপ দেয়।তাইসব সময় চেষ্টা করুন সোজা হয়ে বসতে। সোজা দাঁড়াতে। মেরুদণ্ড যত সোজা রাখবেন, এই ডিস্কের ক্ষয় ও আশপাশের মাংসপেশির উপর চাপ তত ঠেকানো যাবে। রাতের ঘুমের দিকেও খেয়াল রাখুন। ছ’ঘণ্টা থেকে আট ঘণ্টাঘুমোতেই হবে রাতে। কম ঘুমিয়ে পরের রাতে বেশি ঘুমিয়ে পুষিয়ে ফেললাম, এমনটা হয় না। তাই ও সব ভুল ধারণায় মজে থাকবেন না। এক রাতের ঘুমের অভাব কখনও পূরণ করা যায় না। বালিশ ব্যবহার করা নিয়েও সচেতন হোন। অনেকেই স্পন্ডিলোসিসে বালিশ ছাড়া ঘুমোন। কখনওই বালিশ ছাড়া ঘুমোবেন না। নরম দেখে একটা বালিশ নিন। কেমন বালিশে শোবেন তা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ঘুম ভাঙার পর পাশ ফিরে উঠুন। সোজা উঠলে মেরুদণ্ডে চাপ পড়বে আরও। রান্না করার সময় একটা স্টুল ব্যবহার করুন। ইন্ডিয়ান টয়লেট নয়, কমোডের ব্যবস্থা করুন। কমোড একান্তই না থাকলে প্লাস্টিকের কমোড কিনুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy