গেম খেলার বা সিরিজ দেখার সময় বেঁধে দিন বয়স অনুযায়ী
স্কুল বন্ধ। কোচিং বন্ধ। খেলা বন্ধ। ঘরবন্দি বাচ্চা করবেই বা কী! দিনরাত তাই ভিডিয়ো গেম, কার্টুন, সিনেমা। চিন্তিত বাবা-মা। দিনরাত টিভি বা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকলে চোখের ক্ষতি হবে না তো! ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার’ নামক সমস্যাটিও বাড়তে পারে অতিরিক্ত টিভি-মোবাইল দেখলে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় দত্ত জানান, ‘‘বেশি টিভি-মোবাইল দেখলে চোখের ক্ষতি অর্থাৎ পাওয়ার বেড়ে যাওয়া বা চোখের কোনও অসুখ হয় না। তবে চোখে চাপ পড়ে, অর্থাৎ ডিজিটাল আই স্ট্রেন। ফলে চোখ বা মাথায় ব্যথা, চোখে ক্লান্তি, ঝাপসা দেখা, চোখ লাল হওয়া, ঘাড়ে-কাঁধে-পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি, বিরক্তি ইত্যাদি হয় অনেক সময়। বাবা-মা একটু সতর্ক হলে এসব সহজেই সামলে ফেলা যায়।’’
মনোচিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম যদিও খানিকটা দ্বিমত পোষণ করেন, তাঁর কথায়, ‘‘সারাক্ষণ ডিজিটাল দুনিয়ায় পড়ে থাকলে অমনোযোগ থেকে শুরু করে এডিএইচডি বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার নামে মানসিক সমস্যা হতেই পারে। বাড়তে পারে ওজন। কার্টুন বা গেমের মতো মজার দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর পড়াশোনায় আগ্রহ কমে যেতে পারে। কাজেই বাচ্চাকে একটু বেশি সময় দিন। বাইরের দুনিয়া চিনতে শেখান। নিজেরাও চিনুন। ফেসবুক, হোয়াটস্যাপে মজে থাকার বদভ্যাস কাটিয়ে ফেলুন নিজেরাও। তাতে পরিবারেরই ভাল হবে।’’
আরও পড়ুন: সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও
সমস্যা কমাতে
• ৪-৫ বছর বয়সের আগে বাচ্চার হাতে মোবাইল দেবেন না। টিভি-র সামনেও বসিয়ে রাখবেন না। যদি ইতিমধ্যেই তা করে থাকেন, এখন হঠাৎ বন্ধ করতে পারবেন না। তবে সময়টা যাতে কমিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টা করুন। ৫ বছরের পর ২ ঘণ্টা, ৬-১০ বছর বয়স হলে ৪ ঘণ্টা, উঁচু ক্লাসে পড়লে বড়জোর ৫ ঘণ্টার বেশি টিভি বা মোবাইল না দেখাই ভাল সবমিলিয়ে। কীভাবে বাড়ির সকলে মিলে সেই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন, তা ভেবে দেখুন। মনে রাখবেন, বড়রা নিজেদের অভ্যাস না বদলালে ছোটরাও পালটাবে না।
আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?
• বাচ্চা মাঝে-মধ্যে কার্টুন বা সিনেমা দেখলে তবু ঠিক আছে। কিন্তু গেম খেললে বিপদ। কারণ গেম খেলার সময় মন এত একাগ্র থাকে, চোখের পলক খুব কম পড়ে। কাজেই নিয়ম করে দিন, বাচ্চা সারা দিনে একটার বেশি গেম খেলবে না। সেই সময় বাচ্চার সঙ্গে গল্প করুন বা এমন কিছু করুন যাতে সুঅভ্যাস গড়ে ওঠে।
• চোখের ক্ষতি কমাতে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা ও ‘কন্ট্রাস্ট’ কমিয়ে রাখুন। ঘরের আলো যেন তার চেয়ে কম উজ্জ্বল হয়। খোলা জানালা বা চড়া আলো পিছনে না থেকে যেন পাশে থাকে, বাঁ-দিকে থাকলে বেশি ভাল। না হলে পর্দায় তা প্রতিফলিত হয়ে সমস্যা বাড়াবে।
• টিভির থেকে সবাই ৮-১০ ফুট দূরে বসতে হবে। বাচ্চা যেন অন্ধকার ঘরে মোবাইল বা টিভি না দেখে তা খেয়াল রাখতে হবে।
খেলার সঙ্গী হিসেবে পাশে থাকুন। ফাইল ছবি।
• কম্পিউটারে বসলে মনিটর যেন ২০-২২ ইঞ্চি দূরে চোখের সমান্তরালে বাচ্চার বিপরীতে ১০ ডিগ্রি হেলে থাকে। দৃষ্টিসীমা থেকে স্ক্রিন যেন একটু নীচে থাকে।
• এক ফুট দূরে রেখে মোবাইল দেখার অভ্যাস করান। অর্থাৎ বই পড়ার সময় যে দূরত্ব থাকে। যদি দেখেন, সে আরও কাছে এনে দেখছে, চোখ দেখিয়ে নেবেন। অনেক সময় চোখে মাইনাস পাওয়ার এলে এরকম হয়।
• মোবাইলে স্ক্রিন যত বড় হয় তত ভাল। ট্যাব হলে আরও ভাল।
আরও পড়ুন: বাইরে বেরচ্ছেন রোজ? করোনা ঠেকাতে এই সব মানতেই হবে নিউ নর্ম্যালে
• আধ ঘণ্টার বেশি এক জায়গায় বসে থাকতে দেবেন না বাচ্চাকে। গল্প করুন, খেলুন, কম করে ৫-১০ মিনিট। মোবাইল নিয়ে খেলার সময় মাঝে মাঝে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে ধুতে বলুন। জল বা ফলের রস খাওয়ান।
• ২০ মিনিট অন্তর মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে ২০ ফুট দূরের কোনও বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকা ও ২০ বার চোখ খোলা ও বন্ধ করার একটা নিয়ম রয়েছে। এতে চোখে চাপ কম পড়ে। বাচ্চাকে ব্যাপারটা শিখিয়ে দিন। ভবিষ্যতে সুবিধা হবে।
আরও পড়ুন:নিউ নর্মালে নানা রোগ বাড়াচ্ছে দূষণ
• গদি-আঁটা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে যেন ল্যাপটপ ব্যবহার না করে বাচ্চারা। তাদের পা যেন মাটিতে পৌঁছয়। এতে ঘাড়ে-কোমরে চাপ কম পড়বে।
• নিয়ম মানার পরও যদি সমস্যা হয়, দিনে ২-৩ বার চোখের ড্রপ দিতে হতে পারে। সমস্যায় পড়লে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy