করোনার দুশ্চিন্তা ক্রমেই ঠেলে দিচ্ছে অন্য অসুখের দিকে। ছবি: শাটারস্টক।
দুশ্চিন্তার ভার নিতে পারেন না অনেকেই। তার উপর পরিস্থিতি যা হল, তাতে কত দিন যে দুশ্চিন্তার সঙ্গে ঘর করতে হবে, তার কোনও ঠিক নেই। বিজ্ঞানীরা বলেই দিয়েছেন কোভিড থে্কে সহজে মুক্তি নেই। হয়তো ভাইরাসের শক্তিক্ষয় হবে, কিন্তু থাকবে। আর এই দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের হাত ধরে অন্য রোগও এসে হাজির হতে পারে যখন-তখন।
দু’জনের মধ্যে এখন দূরত্ব বেড়ে ৬ ফুট। তাতে মনের দূরত্বও যে বাড়বে না, এমন কথা হলফ করে বলা যায় না। নিয়মের তাড়নায় মেজাজ খারাপ হবে৷ তার উপর বন্ধ রিল্যাক্সেশনের প্রায় সব মাধ্যম। দল বেঁধে জমিয়ে আড্ডা, একসঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়া থেকে সিনেমা-থিয়েটার সবই এখন অতীত। মাঝে মাঝে পাহাড়ে-সমুদ্রে না গেলে যাঁদের মন বিক্ষিপ্ত হয়, তাঁরা এ বার কী করবেন? সাজগোজ যাঁদের নেশা তাঁরা এ বার কোন অছিলায় জামাকাপড় বা মেকআপ কিট কিনবেন? তার উপর যখন-তখন, যেখানে-সেখানে তাড়া করবে রোগের ভয়। কেউ হাঁচলে-কাশলে বা নিজের গা একটু গরম হলেই দুশ্চিন্তার ভার জমা হচ্ছে মনে।
করোনার ভয়ে বাড়তে পারে কী কী?
ওবেসিটি: মানসিক চাপ বাড়লে অনেকেরই হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো মনোভাব হয়। তার প্রভাব পড়ে জীবনযাপনে। বাছবিচার না করে যা খুশি খেতে শুরু করেন। ব্যায়াম ছেড়ে দেন। ফলে ওজন বাড়ে। তার হাত ধরে হাই প্রেশার, হাই কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভার, হৃদরোগ, বাত ইত্যাদির আশঙ্কা বাড়ে। রোগ থাকলে বাড়ে তার প্রকোপ।
আরও পড়ুন: রাজ্যে শুরু হয়েছে অ্যান্টিবডি টেস্ট, কতটা কাজে আসবে তা?
মানসিক চাপে ডায়াবিটিস বাড়ার ভয় বাড়ে।
ডায়াবিটিস: এই অসুখ এত দিন হয়তো ছিল আয়ত্তের মধ্যে। কারণ সঠিক খাবার খেতেন, ব্যায়াম করতেন। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করতেন। করোনার ভয়ে সব বন্ধ হয়ে গেল। বন্ধ হল হাঁটাহাটি।শিকেয় উঠল খাওয়ার নিয়ম। সঙ্গে যোগ হল তীব্র মানসিক চাপ। ফলে রোগের প্রকোপ বাড়ার সব কারণই মজুত।
অনিদ্রা: মানসিক চাপের সঙ্গে যোগ আছে অনিদ্রার ও অনিদ্রার। এর সঙ্গে যোগ রয়েছে আবার খিটখিটে মেজাজ ও মনোযোগ কমার। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতেও সিদ্ধহস্ত সে। ফলে যে রোগের চিন্তায় রাতের ঘুম বরবাদ হচ্ছে, সে রোগ হওয়ারই আশঙ্কাই হয়তো বা বাড়ছে ঘুরপথে।
বদহজম: মানসিক চাপ বাড়লে অম্বল, বদহজম সব বাড়ে।নিয়ম মানা হয় না বলে আরও বাড়ে। টুকটাক অম্বল বা হজমের ওষুধ খেয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টায় তা বেড়ে যেতে পারে আরও।
ঋতুস্রাব: উদ্বেগের হাত ধরেই শুরু হতে পারে অনিয়মিত ঋতুস্রাব। মাসে একাধিক বার হওয়ার নেপথ্যেও টেনশন অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন: আরও বাড়বে সংক্রমণ, এটা অপরিকল্পিত লকডাউনেরই ফল
মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, দুশ্চিন্তা করে যখন করোনাকে ঠেকাতে পারবেন না, তখন দুশ্চিন্তাকেই বরং ঠেকানোর চেষ্টা করুন। সঙ্গে ঠিক করুন জীবনযাপন। কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে সে কাজ অনেক সহজ হয়। যেমন—
• জীবনযাপনের নতুন নিয়মগুলি মেনে নিন। যত তাড়াতাড়ি মানবেন, তত ভাল থাকবেন।
• রিল্যাক্সেশনের নতুন পথ খুঁজুন। সে বই পড়া হোক বা গান শোনা। ঘরে বসে সিনেমা দেখা বা হালকা ব্যায়াম করা। যোগাসন ও মেডিটেশনে মন হালকা হয়। কাজেই করে দেখতে পারেন।
• টিভিতে বা মোবাইলে হালকা অনুষ্ঠান দেখুন। হাসির অনুষ্ঠান দেখলে আরও ভাল।
• ডায়াবিটিস, হাই প্রেশার ও ওবেসিটি থাকলে রোজ নিয়ম করে ব্যায়াম করুন। এখন হঠাৎ জিমে ভর্তি হয়ে যাওয়াও যাবে না। প্রশিক্ষক রেখে ব্যায়াম করার উপায়ও নেই। এখন যা করতে হবে একা। মনকে সে ভাবে প্রস্তুত করে নিন। প্রয়োজনে ফোনে প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিন।
• খাওয়াতেও একটু রাশ টানুন। ডায়াবিটিস ও মেদবাহুল্য থাকলে কার্বোহাইড্রেট ও মিষ্টিতে রাশ টানতে হবে। হাই প্রেশার থাকলে নোনতা খাবার ও ভাজাভুজি।
• ঘন ঘন চা-কফি-কোলা খেয়ে ঘুম নষ্ট করবেন না। মন ভাল রাখার অর্ধেক কিন্তু লুকিয়ে আছে এই ঘুমের মাঝেই।
• বাইরে করোনা আছে ভেবে কোনও অস্বস্তি শুরু হলে চিকিৎসা না করিয়ে বসে থাকবেন না। ফোনে বা অনলাইনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy