চামড়ার অসুখ হিসেবে এগজ়িমা খুবই পরিচিত নাম। এতে ত্বকে জ্বালা, ফেটে যাওয়া, চুলকানি, ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাওয়া, কখনও আবার ফোসকা তৈরি হতেও দেখা যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় এরই নাম অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস।
কেন হতে পারে এগজ়িমা
এই সমস্যার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। অনেক চিকিৎসক মনে করেন জিনগত এবং পরিবেশগত কারণের সমন্বয়েই এই অসুখ হয়। বাবা-মায়ের কারও এই সমস্যা থাকলে, সন্তানেরও হতে পারে। পরিবেশগত বা বাহ্যিক কারণগুলোর মধ্যে আছে...
• ইরিট্যান্ট : সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, ডিসইনফেকট্যান্ট, ফলের রস, মাংস, আনাজপাতি।
• অ্যালার্জেন: ধুলো, পোকামাকড়, পোষ্য, ফুলের রেণু।
• জীবাণু : বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক।
• আবহাওয়া: অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা, বেশি আর্দ্রতা বা আর্দ্রতার অভাব, বেশি ঘাম হওয়া।
• খাবার: দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, বাদামজাতীয় তৈলবীজ, সয়াবিন, আটা-ময়দার খাবার।
• মানসিক চাপ: উদ্বেগ বা অ্যাংজ়াইটি থেকে এগজ়িমা হয় না, কিন্তু এগুলো এগজ়িমার তীব্রতা বাড়ায়।
• হরমোন : মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা বা পিরিয়ডস চলাকালীন হরমোনের মাত্রা ওঠানামায় এগজ়িমার লক্ষণ বাড়ে।
“৬০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে ২ বছরের কম বয়স থেকে, ৮০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে ৫ বছরের নীচে, ৯০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সের আগে এবং ১০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সের পরে এই রোগের লক্ষণ শুরু হয়। বড়দের ক্ষেত্রে এমন হওয়াকে বলা হয় অ্যাডাল্ট অনসেট এগজ়িমা। প্রধানত এটি একটি পেডিয়াট্রিক ডিজ়িজ়,” জানালেন ইন্টারন্যাশনাল এগজ়িমা কাউন্সিলের একমাত্র ভারতীয় সদস্য, বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপন ধর।
ছোটদের যে সব লক্ষণ দেখা যায়, সেগুলো হল, মাথার স্ক্যাল্পে বা গালে র্যাশ। তা থেকে ছোট ছোট জলফোসকা, হাঁটু, কনুই , ঘাড়, গলা, নিতম্বে র্যাশ, প্রচণ্ড চুলকানি থেকে চামড়া খসখসে এবং পুরু হয়ে যাওয়া... অতিরিক্ত চুলকানির ফলে বাচ্চার ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ত্বকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। বড়দের ক্ষেত্রে র্যাশের প্যাচগুলো ছোটদের তুলনায় বেশি শুষ্ক, খসখসে হয়, সারা শরীরের যে কোনও এক বা একাধিক জায়গায় প্যাচ তৈরি হতে পারে। স্থায়ী চুলকানি এবং সেখান থেকে ত্বকে সংক্রমণ বা ঘায়ের সৃষ্টি। মনে রাখবেন, এগজ়িমায় ইচিং হবেই, কিন্তু চুলকালে বা ঘষলে ক্রমশ তা বাড়ে এবং ত্বকের সমস্যা বাড়ে।
চিকিৎসা
একটা সময় অবধি বলা হত, এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। কিন্তু ডা. সন্দীপন ধর জানালেন যে, এখন এগজ়িমা থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব। সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেও এর সম্পূর্ণ কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব। বয়স, রোগের লক্ষণ এবং শরীরে অন্যান্য অসুখবিসুখের নিরিখে চিকিৎসার ধরন ঠিক করা হয়। ঠিক চিকিৎসায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একেবারেই সেরে যায় এই রোগটি। সেই কারণে এখন ‘কমপ্লিট কিয়োর’ শব্দটি এগজ়িমার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এই চিকিৎসা যত দিন প্রয়োজন, ধৈর্যের সঙ্গে তা কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে। প্রতি বছর কয়েকমাস করে প্রায় পাঁচ-ছ’বছর এর চিকিৎসা চালিয়ে গেলে তবেই এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব।”
সুস্থ থাকার জন্য
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোজকার জীবনে অবশ্যই মেনে চলা দরকার কিছু নিয়ম। এগুলো মেনে চললে ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, ত্বকের অনেক সমস্যাই আর কষ্ট দেওয়ার জায়গায় পৌঁছতে পারে না।
• সারা বছর ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করুন। প্রত্যেক দিন স্নান করার তিন মিনিটের মধ্যে সারা শরীরে ভাল করে মেখে নিতে হবে ময়শ্চারাইজ়ার।
• সব সময়ে পরা উচিৎ নরম সুতির জামাকাপড়। পোশাক নিয়মিত কেচে পরিষ্কার করাও জরুরি।
• এড়িয়ে চলতে হবে খসখসে, অমসৃণ ধরনের টাইট ফিটিং পোশাক।
• খেয়াল রাখতে হবে সাবান যেন মৃদু প্রকৃতির হয়। অর্থাৎ তীব্র ক্ষারযুক্ত সাবান, যা ত্বকের সব জল টেনে নিয়ে ত্বককে খসখসে করে তোলে, তেমন সাবান ব্যবহার করা যাবে না।
• সব সময়ে হাতের নখ যেন ছোট করে কাটা থাকে। এগজ়িমার চুলকানি বেশির ভাগ সময়েই নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়। হাতে নখ ছোট করে কাটা থাকলে সংক্রমণের ভয় কমবে।
• নারকেল তেল, অ্যালো ভেরা জেল অথবা অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহারেও উপকার পাবেন। এগুলো সারা ত্বকে, বিশেষ করে আক্রান্ত স্থানগুলোয় অবশ্যই ব্যবহার করা যেতে পারে।
আগেই বলা হয়েছে, মানসিক উদ্বেগ উত্তেজনায় এগজ়িমার ইচিং বাড়ে। ডা. সন্দীপন ধর আরও বললেন, “এ সময়ে শরীরে অ্যাড্রিনালিন, নর-অ্যাড্রিনালিন, সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এর সঙ্গেও রোগটির সম্পর্ক। যে কোনও রোগেই মনের জোর বড় ফ্যাক্টর।’’ প্যানিক করলে ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। রোগ আরও বেশি চেপে ধরে।
ডা. ধর বললেন, ‘‘সমীক্ষা বলছে, সাধারণ শিশুদের মধ্যে এগজ়িমায় আক্রান্তর হার ব্রিটেনে ১৫-১৬ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০-২২ শতাংশ, ভারতে ১১ শতাংশ। কিন্তু স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় এর হার হল ২৫-২৭ শতাংশ, অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। ওদের দেশে স্টাডি করে দেখা গিয়েছে, হিপনোসিস, যোগব্যায়াম, জিম, মেডিটেশন করলে মেন্টাল রিল্যাক্সেশনের মাধ্যমে ইমিউনিটি বেড়ে যায়। এই তথ্য বিজ্ঞানে পরীক্ষিত। ফলে বিশ্বে এই সব পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে শুধু এগজ়িমা নয়, নিয়ন্ত্রণে থাকে অ্যাজ়মাও। এগজ়িমা এবং অ্যাজ়মা— একই মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ। সার্বিক সুস্থতার জন্য জীবনযাপনে এ সবের ভূমিকাও জরুরি।”
মন থেকে রোগ সরান, শরীরও সেরে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy