কথায় বলে, দুপুর কিংবা রাতের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ থাকুক বা না-ই থাকুক, প্রাতরাশে ক’টা বাদাম রাখতেই হবে। চিকিৎসকেরা প্রায়শই নিদান দেন দিনে অন্তত তিন-চারটি আমন্ড খাওয়ার। বাদাম আসলে নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। ফলে শরীরের নানা ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি সুস্থও রাখে তা। শুধু আমন্ড নয়, এই তালিকায় রয়েছে কাজু বাদাম, পেস্তা, আখরোট, ম্যাকাডেমিয়া, ব্রাজ়িল, হেজ়েল, পেকান, পিনাট... কত কী!
বাদামের নানা দিক
• বাদামে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ়, ফ্যাট, সেলেনিয়াম... নানা পুষ্টিগুণ থাকে। নানা ধরনের মেশানো বাদাম এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম খেলে তার ক্যালরির পরিমাণ হয় প্রায় ১৭৩ কিলোক্যালরি। কোনও বাদামে কার্বোহাইড্রেট বেশি, কোথাও প্রোটিন। কিন্তু সর্বোপরি কমবেশি প্রায় সব বাদামই উপকারী।
• বাদামে ফ্যাট থাকা মানেই যে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এ ধারণা ভুল। বরং বাদামে থাকা ফ্যাট আদতে শরীরের জন্য ভাল বলে তা হাই কোলেস্টেরলের মতো সমস্যারও মোকাবিলা করে। আবার অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকার দরুন হার্টের রোগের আশঙ্কা কমায়, বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতেও সাহায্য করে পেস্তা। কোলেস্টেরলের সঙ্গেই জড়িয়ে হৃৎপিণ্ডের নানা সমস্যার প্রসঙ্গ। বাড়তে থাকা কোলেস্টেরলে হার্ট ব্লক হয়, অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের আশঙ্কাও বাড়ে। কিন্তু বাদাম সেই আশঙ্কা অনেকটাই দূরে সরায়। তাই চিকিৎসকেরা সময় থাকতেই বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন।
• ফাস্ট ফুড খাওয়ার যুগে ওজন বেড়ে যাওয়া এবং ওবেসিটির সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে। তবে সচেতনতাও বাড়ছে। তাই ওজন কমাতে অনেকে খাদ্যতালিকা থেকে প্রথমে যাবতীয় তেল বাদ দিয়ে অলিভ অয়েলে রান্না শুরু করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, প্রত্যেক দিন অল্প পরিমাণে আমন্ড খেলে তা ওজন কমাতে সহায়ক হয়। তাই ওজন বাড়াতে নয়, বরং ওজন কমাতেই নিয়মিত বাদাম খাওয়া জরুরি।
• পেস্তা বাদাম টাইপ টু ডায়াবিটিস রুখতেও সাহায্য করে। নানা সমীক্ষায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় পেস্তা। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীরা বাদাম খেতেই পারেন।
• যে কোনও আঘাত বা ব্যাকটিরিয়াজনিত ইনফেকশন থেকে অনেকেরই শরীরে নানা সময়ে ইনফ্ল্যামেশন হয়। তা বাড়তে থাকলে পরে সেটাই শরীরের নানা প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে, বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। ইনফ্ল্যামেশন কমানোর সবচেয়ে ভাল প্রাকৃতিক দাওয়াই আমন্ড, ওয়ালনাট, পেস্তা ও ব্রাজ়িল নাট।
• ভাল কোলেস্টেরল ছাড়াও কাজু বাদামের কপার ও আয়রন শরীরের ব্লাড ভেসেল, নার্ভ, হাড় সুস্থ রাখে। রোজ কাজু বাদাম খেলে ভাল থাকে চোখও। বয়স বাড়ার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমার সমস্যাও মোকাবিলা করে।
মনে রাখা দরকার
• চার পাশে নাট স্প্রেড, নাট বাটারের মতো নানা জিনিস এখন বাজারে সহজলভ্য। কিন্তু গোটা বাদাম খাওয়ার বিকল্প কিছু নেই। এতে কোনও ভেজাল মেশানোর সম্ভাবনাও থাকে না। এ ছাড়া স্প্রেড বা বাটার খেলে অনেক সময়েই পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা যায় না। কিন্তু গোটা বাদামে পরিমাণ গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
• যে কোনও বাদাম খাওয়ার জন্য প্রাতরাশ বা বিকেলের জলখাবার ভাল। কাজু বাদাম, আমন্ড বা আখরোট হাতে গুনে খাওয়া সম্ভব। কিন্তু চিনে বাদাম খেলে অনেকেরই বেশি পরিমাণ নেওয়ার প্রবণতা থাকে। সে ক্ষেত্রে মুড়ি বা চিঁড়ের সঙ্গে অল্প ক’টি বাদাম নিতে পারেন। আবার খোসা সমেত কাঁচা বাদাম আগের রাতে জলে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। পরদিন সকালে খালি পেটে সেই বাদাম কয়েকটি খেতে পারেন।
• রোজকার খাবারের তালিকায় বাদাম রাখা মানে তা একেবারেই টোস্টেড বা সল্টেড নয়। মুখরোচক করে নয়, বাদাম খেতে হবে কাঁচা। তবেই তা শরীরের জন্য উপকারী।
তাই দেরি না করে চিকিৎসক ও ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে শুরু করে দিন বাদাম খাওয়া। বাদাম খেতে সুস্বাদু, স্বাস্থ্যও থাকবে ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy