ভারতবর্ষে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ রোগী প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশের ক্যানসার ধরা পড়ে চতুর্থ বা শেষ পর্যায়ে।
প্রোস্টেট গ্রন্থিটি একটি ছোট আখরোট আকৃতির অঙ্গ, যা পুরুষদের মূত্রথলির ঠিক নীচে থাকে। প্রোস্টেট থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থ আংশিকভাবে বীর্ষের এক উপাদান হিসেবে শুক্রাণুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সহায়তা করে।
যদি প্রথম পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, তবে প্রায় ১০০ শতাংশ রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। যদি রোগ শনাক্তকরণে দেরি হয় এবং প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে চতুর্থ বা শেষ পর্যায়ে, তবে নিরাময়ের সম্ভাবনা ২৮ শতাংশে নেমে আসে।
সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বা সময়মতো প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। জীবদ্দশায় প্রতি ছ’জনের মধ্যে একজনের প্রোস্টেট ক্যানসার হতে পারে। পরিবারে যদি বাবা, ভাই, কাকা বা মামা-র প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে পাঁচজনের মধ্যে একজন প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানাচ্ছেন কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনিয়েগলস হাসপাতালের চিকিৎসক, ইউরো-অনকোলজিস্ট এবং রোবোটিক সার্জন ডা. ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তকরণের একটি উপায় হল স্ক্রিনিং পরীক্ষা। সাধারণত একটি রক্ত পরীক্ষা এবং একটি মেডিক্যাল এক্সামিনেশন বা শারীরিক পরীক্ষায় তা বোঝা যায়। প্রস্রাবের কোনও লক্ষণ না থাকলেও স্ক্রিনিং পরীক্ষা করানো জরুরি, কারণ প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্রাবের লক্ষণগুলি দেখা যায় না। কিন্তু ভবিষ্যতে তা প্রাণহাণীর কারণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রোস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং সাধারণত ৫৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সী পুরুষদের যাদের প্রস্রাবের কোনও লক্ষণই নেই তাদের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। তবে পরিবারে যদি বাবা, কাকা, বা মামার প্রোস্টেট ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, সেক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫৪ বছর বয়সের পুরুষদেরও স্ক্রিনিং প্রয়োজন। ৭০ বছরের বেশি বয়স্কদের সাধারণত স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয় না, যদি না তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন বা ওনাদের সাম্ভাব্য আয়ু ১০ থেকে ১৫ বছরের বেশি হয়।’ এমনটাই জানাচ্ছেন ডা. বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য রক্ত পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে ‘প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন’ (পিএসএ) পরীক্ষা। ডা. বন্দ্যোপাধ্যায় রোগীদের একটা ভুল ধারণা নিয়ে সতর্ক করেছেন। "যদি ‘পিএসএ’র মান চারের কম হয় তবে প্রোস্টেট ক্যানসারের কোনও সম্ভাবনা নেই"- সেটা ঠিক নয় কারণ পিএসএ-র মান অনেকগুলি কারণের উপর নির্ভর করে। তাই পিএসএ পরীক্ষার সঠিক ব্যখ্যা ও সুনিশ্চিত পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইউরোলজিস্ট বা ইউরো-অনকোলজিস্টের মতামত নেওয়া উচিৎ। কোনও কোনও পিএসএ পরীক্ষার মাত্রা দেথে চিকিৎসকেরা এমআরআই বা প্রোস্টেট বায়োপসির কথা বলতে পারেন।
শুধুমাত্র সার্জারি বা শল্যচিকিৎসার দ্বারা প্রায় সম্পূর্ণভাবে (৯০%-100%) প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব যদি প্রথম বা দ্বিতীয় স্তরে রোগ শণাক্ত করা সম্ভব হয়। আর যদি তৃতীয় স্তরে রোগ ধরা পরে তা হলে মালটিমডালিটি বা বহুমুখি চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে শল্যচিকিৎসার পরে রোগীদের রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। তবে রেডিয়েশন থেরাপির তুলনায় বেশিরভাগ রোগীদের শল্য চিকিৎসার পরে হরমোন ইনজেকশন লাগে না এবং প্রোস্টেটের অপারেশনের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাবের লক্ষণগুলি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। রোবোটিক সার্জারিতে রোগীর ব্যথা কম লাগবে, রক্তক্ষরণ কম হবে এবং কম দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।
প্রোস্টেট ক্যানসার দেরিতে শনাক্ত হওয়ার পরে, অস্ত্রোপচারের পরিবর্তে বিকিরণ (Radiation) অবশ্যই একটা বিকল্প। ‘প্রোস্টেট ক্যানসারের সমস্ত পর্যায়ে রেডিয়েশনের কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে, চতুর্থ স্তর-সহ, যখন সীমিত পরিমাণে মেটাস্টেসিস থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচারের পরও রেডিয়েশন দেওয়া হয়। দেখা গিয়েছে যে, এই রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সীমিত। বিকিরণ একটি যন্ত্রণাহীন পদ্ধতি এবং ক্ষতিকারক নয়,’ বলছেন ডা. সায়ন পাল, সিনিয়র চিকিৎসক, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, অ্যাপোলো গ্লেনিয়েগলস হাসপাতাল, কলকাতা।
সার্জারি এবং রেডিয়েশন ছাড়াও তৃতীয় বিকল্প হল থেরাপির জন্য ওষুধের ব্যবহার– যেমনটা ব্যাখ্যা করেছেন চিকিৎসক ইন্দ্রনীল ঘোষ মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, অ্যাপোলো গ্লেনিয়েগলস হাসপাতাল, কলকাতা: ‘হরমোন থেরাপি সাধারণত বেশিরভাগ রোগীর ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়; এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশ কম। ক্যানসার যদি শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যথেষ্ট পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ে, তবে কেমোথেরাপি করা যেতে পারে। আজকাল আমাদের কাছে এমন থেরাপিও রয়েছে যা টিউমারের জিনগত বিশ্লেষণ করে এবং নির্ভুল ও যথাযথ চিকিৎসার জন্যই যা পরিকল্পিত।’
প্রোস্টেট ক্যানসারে বিভিন্ন চিকিৎসার বিকল্প সত্ত্বেও রোগীদের প্রশ্ন হল: প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে আমাদের কী করা উচিৎ?
‘এ বিষয়ে বিশেষ কিছু করার নেই; শুধু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন, ব্যায়াম করুন এবং সুষম আহার করুন,’ ডা. বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy