Advertisement
E-Paper

শ্বাসবায়ুর শত্রুরা...

দীপাবলির পরেই বাড়ে দূষণ। দেখা দেয় ধোঁয়াশার রক্তচক্ষুও। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কী ভাবে এড়াবেন? কিছু সাবধানতা মেনে চলুন।

An image of Pollution

—প্রতীকী চিত্র।

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৬
Share
Save

শীতের শুরু মানেই শিশু আর বয়স্কদের জন্য চিন্তাবৃদ্ধি। কারণ ঋতু পরিবর্তনের এই সময়েই বাতাসে ধুলোকণার পরিমাণ বাড়ে, শহরের বুকে জমে ধোঁয়াশা। তার উপরে দীপাবলি-পরবর্তী সময়ে বাতাসে বারুদের গন্ধ এখনও যায়নি। দূষণ নিয়ে সচেতনতার প্রচার সত্ত্বেও তাই বাতাসে সাসপেন্ডেড পার্টিকলসের পরিমাণ হু-হু করে বেড়েছে। যাঁদের হাঁপানি, সিওপিডি বা শ্বাসজনিত অন্যান্য অসুখ রয়েছে, তাঁদের কাছে এই সময়টা কষ্টকর হয়ে ওঠে তাই। বিশেষ করে শিশু আর বয়স্কদের অতিরিক্ত সাবধানতা মেনে চলতে হয় এ সময়ে। এ সমস্যার সমাধানে দূষণ এড়িয়ে চলা ছাড়া বিশেষ উপায় নেই। তবে কষ্ট মাত্রা ছাড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

সমস্যার উৎস

প্রত্যেক বছরই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে অনেক বাচ্চাই কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং তার সঙ্গে জ্বরের উপসর্গে কষ্ট পায়। তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য ভাইরাস তাড়াতাড়ি বংশবৃদ্ধি করতে পারে এ সময়ে। শ্বাসনালিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, এখন বহু শিশুরই অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় দূষণ, শ্বাসের সমস্যা বাড়তে বাধ্য। যথেষ্ট অক্সিজেন পৌঁছতে না পারা, কার্বনের পরিমাণ বাড়ার কারণে শিশুরা তো বটেই, কো-মরবিডিটি আছে, এমন বয়স্কদেরও সমস্যা বেড়ে যায়।

অ্যালার্জির চোখরাঙানি

কমন অ্যালার্জেন বলে যা পরিচিত, সেগুলো একটু চেষ্টা করলেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। এতে শ্বাসের কষ্ট একটু হলেও রোধ করা যায়। যেমন, বাড়ির ভিতরে ধুলোর পরিমাণ যাতে কম ঢোকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু বা বয়স্কদের সামনে ডাস্টিং করা যাবে না। বাচ্চাদের সফট টয়েজ়েও প্রচুর পরিমাণে ধুলো থাকে। পোষ্যের রোম, ফুলের রেণু, পারফিউমের কড়া গন্ধে শ্বাসের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। ঘর স্যাঁতসেঁতে থাকলে ছত্রাকের সমস্যা আসতে পারে। কাঠের কাজ, দেওয়াল রং করা... এ সবই এড়িয়ে চলতে হবে এই সময়টায়।

তাৎক্ষণিক প্রতিকার

দূষণের মাত্রা যখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তখন চেষ্টা করতে হবে যথাসম্ভব দূষিত স্থান এড়িয়ে চলার। যেমন, বাড়ির শিশুটিকে নিয়ে এই সময়টায় দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসা যায়। বাজি পোড়ানোর মরসুমে এক ধাক্কায় শহর ও শহরতলিতে যে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়, সেটা থেকে খানিকটা বাঁচানো যেতে পারে শিশুটিকে। এ ছাড়া মাস্কের ব্যবহার সব সময়েই প্রযোজ্য। শুধু দূষণ এড়াতে নয়, মাস্ক পরলে অন্যদের ভাইরাল ইনফেকশন থেকেও নিজেকে বাঁচানো সম্ভব হয়।

শিশুচিকিৎসক ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘এই সময়টায় আমাদের কাছে অনেক বাচ্চাই শ্বাসের সমস্যা নিয়ে আসে। এর সঙ্গে ভাইরাল ইনফেকশন যুক্ত হলে কাশি পাঁচ-ছ’সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে টানা। যারা অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভোগে, তাদের কষ্টটা আরও বেড়ে যায়। তাৎক্ষণিক উপশম হিসেবে ইনহেলার নিলে বেশ কাজে দেয়।’’ অনেকের ধারণা, ইনহেলার নিলে তা অভ্যেসে পরিণত হতে পারে। কিন্তু ডা. রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘ওষুধ রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ইনহেলেশন থেরাপি হল টার্গেট ওরিয়েন্টেড। অর্থাৎ শুধু ফুসফুসেই যাচ্ছে তা। তাই ওষুধ খাওয়ার চেয়ে ইনহেলার নেওয়া সব সময়েই বেশি উপকারী।’’ তবে ইনহেলার নেওয়ার পরে অবশ্যই মুখ ভাল করে কুলকুচি করে ধুয়ে ফেলা উচিত। হাঁপানি জাতীয় অসুখে অনেক সময়ে স্টেরয়েড নিতে হতে পারে। তবে সিস্টেমিক স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ইনহেলেশনাল স্টেরয়েড নিলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ন্যূনতম। অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিজ়িজ়ের ক্ষেত্রে ইনহেলার আর কাজ করে না। তখন নেবুলাইজ়ারের সাহায্য নিতে হতে পারে। এমনকি ছ’মাসের শিশুরাও ইনহেলার নিতে পারে, নির্দিষ্ট ডিভাইসের মাধ্যমে। ডা. রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘স্পেসার উইথ মাস্ক ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রে। আর নেবুলাইজ়েশন সব সময়ে হাসপাতালে এসেই নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা। বাড়িতে নিলে অনেক সময়ে অক্সিজ়েন স্যাচুরেশন কমে যেতে পারে।’’

সাধারণ সাবধানতা

কোন শিশু কতটা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, তা অনেকটাই তার জিনগত কারণের উপরে নির্ভরশীল। তবে সাধারণ অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা কিংবা মাস্ক পরে ধুলোবালি এড়ানো তো বটেই, ধূমপায়ীদের কাছ থেকেও শিশুদের দূরে রাখতে হবে। ডা. রায়চৌধুরী জানালেন, অনেকে বাড়ির বাইরে থেকে ধূমপান করে এলেও তার কাছ থেকে অন্তত এক ঘণ্টা বাচ্চাকে দূরে রাখা দরকার। ‘‘অনেকেই বলেন, ‘বাড়ির বাইরে থেকে সিগারেট খেয়ে এসেছি।’ ফিরেই হয়তো তিনি বাচ্চার সঙ্গে খেলতে লাগলেন। এতেও সেই ব্যক্তির মুখ থেকে নিঃসৃত পার্টিকলস বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে। তাই ধূমপানের পরে অন্তত এক ঘণ্টা সেই ব্যক্তির কাছে ছোট বাচ্চাদের না যাওয়াই ভাল,’’ বললেন ডা. রায়চৌধুরী।

সার্বিক সচেতনতা ছাড়া এই রোগ প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভব। তাই নিজে সাবধান হওয়াই একমাত্র উপায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pollution Season change Air pollution Asthma Respiratory problems

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}