Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Fever

বাড়ছে জ্বরের দাপট

বর্ষাকালে রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ে। ঘরে ঘরে এখন জ্বরজারির সমস্যা দেখা যাচ্ছে। জেনে নিন কী কী সতর্কতা মানবেন?

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোয়েনা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৩
Share: Save:

হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, গা গরম... আবহাওয়া বদলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ায় এই ধরনের উপসর্গে ভুগছেন এখন আট থেকে আশি সকলেই। চার দিকে ডেঙ্গি, ইনফ্লুয়েঞ্জার দাপট বাড়ছে। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “মূলত এ সময়ে ভাইরাল জ্বরের প্রবণতা বেশি। বাড়ছে অ্যাডিনো, রাইনো, রেসপিরেটরি সিনসেশিয়াল ইত্যাদি ভাইরাসের দাপট।”

কোন কোন ভাইরাসের দাপট বাড়ছে?

ডা. মণ্ডল বলছেন, এখন ভাইরাসের দাপটে আপার রেসপিরেটরি পার্ট অর্থাৎ নাক, গলা, টনসিল, ফুসফুসের উপরের অংশ ইত্যাদি আক্রান্ত হচ্ছে। লোয়ার রেসপিরেটরি পার্ট মূলত ব্যাক্টিরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়।

  • অ্যাডিনোভাইরাস: এ ক্ষেত্রে জ্বর সাধারণত ১০০ ডিগ্রির আশপাশেই থাকে। খুব বেশি বাড়ে না। তবে জ্বর বাড়লে এই অ্যাডিনোভাইরাস থেকে ব্যাক্টিরিয়াল ইনফেকশনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। জ্বর-সহ এর উপসর্গও সাধারণ। প্রাথমিক ভাবে সর্দি, কাশি দিয়ে শুরু করে গলায় ব্যথা, হাঁচি ইত্যাদি হয়। এর সঙ্গে অল্প শ্বাসকষ্ট, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, কানে কম শোনার সমস্যাও (বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে) দেখা দিতে পারে। রোগীর জোরালো আলো, শব্দে সমস্যা হয়। গুরুতর ভাবে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে গলা ও ঘাড়ের চার দিকের গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে পারে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিশেষ প্রয়োজন হয় না।
  • রাইনোভাইরাস: এই ভাইরাস মূলত নাক দিয়ে শরীরে ঢোকে। এর উপসর্গ মৃদু। তবে নজর না দিলে নিউমোনিয়া হতে পারে।
  • ডেঙ্গি: বর্ষার হাত ধরে ডেঙ্গির সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। এর উপসর্গ এখন সাধারণ মানুষের জানা। তবে ডা. মণ্ডল বলছেন, “ডেঙ্গি কখনও কখনও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই সতর্ক থাকা এবং ঠিক সময়ে চিকিৎসা জরুরি।” ডেঙ্গির জ্বর মোটামুটি দিন তিনেক থাকে। তার পর জ্বর কমে এলেই রক্তে প্লেটলেট কমে যেতে থাকে। সে সময়েই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
  • ইনফ্লুয়েঞ্জা: বর্ষাকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা বাড়ে বেশি। সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বরের চেয়ে এ ক্ষেত্রে তীব্রতা একটু বেশি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা সারতে তুলনামূলক ভাবে বেশি সময় লাগলেও ভয়ের তেমন কিছু নেই। তবে বয়স্ক ব্যক্তি, ডায়াবেটিক, স্টেরয়েড নিচ্ছেন, কেমোথেরাপির রোগীদের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়া কঠিন। আর সে কারণেই তাঁদের আগেভাগে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “গত সপ্তাহ দু’-তিনেক ধরে বাচ্চাদের মধ্যে জ্বরও বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা থাকছে ১০২-১০৩ ডিগ্রি। ওষুধ খাওয়ালেও ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ছে না, বরং খানিক পর ফিরে আসছে।” সঙ্গে ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, টনসিল ফুলে যাওয়া, গলায় ইনফেকশন, ঢোঁক গিলতে না পারা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, দুর্বলতার মতো সমস্যাও থাকছে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষায় অধিকাংশ সময়েই ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনোভাইরাস ইত্যাদির দাপট ধরা পড়ছে। এ ছাড়াও বাচ্চাদের মধ্যে হ্যান্ড-ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজ়িজ়ও বাড়ছে।

তবে ডা. রায়চৌধুরী বলছেন, ভয়ের বিশেষ কারণ নেই। ঠিক চিকিৎসায় সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠছে বাচ্চারা। তবে সুস্থ হয়ে উঠলেও কিছু দিন এ সময়ে বাচ্চাদের স্কুল বা খেলার মাঠে না পাঠানোই ভাল। সে ক্ষেত্রে অন্য বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সম্ভব হলে বাচ্চাদের জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

বাড়ছে কোভিড

কোভিড বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে আবার। প্রায় রোজই এখন বেশ কিছু সংখ্যক করোনাভাইরাস পরীক্ষার রেজ়াল্ট পজ়িটিভ আসছে। তবে চিকিৎসকদের মতে, করোনার উপসর্গ আগের মতো তেমন জোরালো নয় এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে না। সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে এর তীব্রতা সামান্য বেশি। কখনও কখনও সামান্য শ্বাসকষ্ট থাকছে রোগীর। যে কোনও সাধারণ সর্দি-কাশি হলেও যেমন স্বাদ, গন্ধ কমে যায়, করোনার ক্ষেত্রেও এখন তেমনই হচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অ্যান্টিভাইরালও দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। বরং সাধারণ উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসাতেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হচ্ছেন।

নজরে কলেরা

ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই অল্পস্বল্প কলেরা দেখা দিচ্ছে। কলেরার ক্ষেত্রে মূল উপসর্গ ডিহাইড্রেশন, জ্বর এবং গুরুতর ডায়রিয়া। এ ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময়ে তা জলের মতো হবে। কলেরার উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি নয়, বাড়িতে থেকেও চিকিৎসা হতে পারে। সাধারণত খাবার থেকে ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা অধিকাংশ সময়েই অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার পরামর্শ দেন না। তবে কলেরা হলে তৎক্ষণাৎ অ্যান্টিবায়োটিক চালু করা হয়।

  • কোনও এলাকায় কলেরা রোগী ধরা পড়লে একবার সে এলাকার কলের জল পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি।
  • বর্ষায় পিউরিফায়ারের বদলে জল ফুটিয়ে খান।
  • ঘরের নুন চিনির জল বা প্যাকেটজাত ওআরএস নয়, সাধারণ ওআরএস পাউডার প্যাকেটের নির্দেশানুযায়ী জলে মিশিয়ে খান।
  • বছর পাঁচেকের বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে জ়িঙ্ক ট্যাবলেট দিতে পারেন।

চিকিৎসা

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন জ্বর-সর্দি-কাশিতে তেমন ভয়ের কিছু নেই। বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষা করানোরও দরকার পড়ে না। সাধারণ প্যারাসিটামলেই জ্বর কমে। সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং যথেষ্ট পরিমাণ জল খাওয়া জরুরি। প্রয়োজনে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। ডা. সুবীর মণ্ডল বলছেন, “কোভিডে এখন ভয়ের কিছু না থাকলেও আইসোলেশনে থাকা জরুরি। একের থেকে অন্যের যাতে করোনা না ছড়ায়, সে দিকে নজর রাখা দরকার।” কলেরার ক্ষেত্রেও ডায়রিয়া থেকে যাতে শরীর ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যায়, সে দিকে নজর রাখুন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, জ্বরে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, টাইফয়েড পরীক্ষা আগে করানো হয়। বাকি অন্যান্য ভাইরাসের প্রাথমিক চিকিৎসা একই ধরনের। তাই অতিরিক্ত নজর দেওয়ার দরকার পড়ে না। তবে সাধারণ উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধে সমস্যা না কমলে বা ফিরে ফিরে এলে রোগী কোন ভাইরাসে আক্রান্ত, তা পরীক্ষা করে জেনে নিন।

মডেল: সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়,সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, অলিভিয়া সরকার, দেবদীপ চট্টোপাধ্যায়;

মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত;

ছবি: জয়দীপ মণ্ডল, অমিত দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fever Season change Viral fever
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE