জলপানের ব্যাপারে কোনও আপস করা ঠিক নয়। ফাইল চিত্র।
অতিমারি আটকাতে সরকারি স্কুলের বার্ষিকী পরীক্ষা স্থগিত হলেও কোভিড ভাইরাসকে উপেক্ষা করে শীত এসে গেল। কমলালেবু, নলেনগুড়ের সন্দেশ, জয়নগরের মোয়া বাজার দখল করলেও শীতের হাওয়া আটকে আছে নিম্নচাপে। কিন্তু, গরমের দাপট কমতে না কমতেই আমাদের জল তেষ্টা কমে গেছে। আর এর ফলেই অনেকেই ১২–১৪ গ্লাসের বদলে ৫–৬ গ্লাস জল পান করে দিন কাটাচ্ছেন। পৃথিবীর ৩ ভাগ জল ১ ভাগ স্থলের মতোই মানুষের শরীরের কোষের প্রধান উপাদান জল। তাই তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে শরীরের ন্যূনতম জলের চাহিদার কমে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে এটাও ঠিক, গরম কালের মতো শীতকালে বাড়তি জলের চাহিদা কিছুটা স্বাভাবিক নিয়মেই কমে যায় বললেন জেরিয়াট্রিশিয়ান কৌশিক মজুমদার। বেশি বয়সে অনেককেই প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল সহ নানান ধরনের ওষুধ খেতে হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল পান না করলে শরীরে নানান ক্ষতিকর পদার্থ জমা হতে শুরু করে। আবার উচ্চরক্তচাপ, কিডনির অসুখ, লিভারের অসুখ, হার্ট ফেলিওর ইত্যাদি কারণে অনেকের হাত, পা বা পেটে তরল জমে গিয়ে ফুলে যায় (ইডিমা হয়) বা অল্প পরিশ্রমে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। তাঁদের শরীরের বাড়তি জলীয় অংশ বের করে দেওয়ার জন্য ল্যাসিক্স জাতীয় ওষুধ খেতে হতে পারে। যাঁরা এই ওষুধ খান, তাঁদের শরীরে জলের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বেশি।
কৌশিক মজুমদারের পরামর্শ, ঠান্ডার ভয়ে স্বাভাবিক জল পান কমালে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা জল খেতে অসুবিধা হলে শীতের সকালে চায়ের আগে ঈষদুষ্ণ জল খেয়ে দিন শুরু করুন। পানীয় জলকে অনেকে ওষুধের সঙ্গেও তুলনা করেন, কেন না শরীরে জমে থাকা নানান টক্সিক প্রস্রাব ও ঘামের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তাই শীতের দিনেও ন্যূনতম ১.২–১.৫ লিটার জলপান করা দরকার বলে কৌশিক মজুমদারের পরামর্শ। যদিও শীতকালে এয়ারকন্ডিশনে থাকার ঘটনা কম, তবু যাঁদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকার অভ্যাস, তাঁদের শরীরে জলের চাহিদা বেশি। তাঁদের অবশ্যই দৈনিক ১.৫ লিটার জল পান করা উচিত।
একজন মানুষের কতটা জল পান করা দরকার— এই প্রশ্নের উত্তরে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বললেন, অসুখ বিসুখ ছাড়াও একজন মানুষের জলের চাহিদা তাঁর স্বাস্থ্য, দৈহিক ওজন, কায়িক পরিশ্রমের পরিমাণ ও স্থানীয় আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে। বিশ্বের যাবতীয় প্রাণীর মতো মানুষের শরীরের প্রধান উপাদান জল। আমাদের ওজনের প্রায় ষাট শতাংশ জলীয় উপাদান। এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি সংবেদনশীলতা রক্ষা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আবার মেটাবলিজিম বা বিপাকীয় প্রক্রিয়া এবং শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশন বা রেচন প্রক্রিয়াতেও জলের প্রয়োজন খুব বেশি। শ্বাস প্রশ্বাস থেকে শুরু করে ঘাম বা মলমূত্র ত্যাগ, সব কাজেই শরীর থেকে কিছু জল বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই দৈনিক আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে জলপান করতেই হয়। রোজকার প্রয়োজনীয় জলের কুড়ি শতাংশ পূরণ হয় খাবারের জলীয় অংশ থেকে আর বাকিটা জল ও চা, কফি, দুধ, বোতলজাত ঠান্ডা পানীয়, ফল বা ফলের রস বা হার্ড ড্রিংকসের মতো জলীয় খাবার থেকে আসে। তবে তরমুজ বা পালং শাকের মতো খাবারে নব্বই শতাংশের বেশি জল বলে, এরা পুষ্টির সঙ্গে শরীরের জলের চাহিদাও মেটায়।
ব্যায়াম বা জিম করার আগে, মাঝে বা পরে লেবুর শরবৎ বা প্লেন জল পান করলে ভাল হয়। ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: শীতে চলুন নিয়ম মেনে
‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের তথ্য অনুসারে, আমাদের দেশে একজন সুস্থ স্বাভাবিক নীরোগ পুরুষের দিনে ৩–৩.৭ লিটার ও মহিলাদের ২.৫–২.৭ লিটার জল পান করা উচিত। মাঝারি গ্লাসের হিসাবে দৈনিক ১০–১৪ গ্লাস। এর সঙ্গে প্রতি আধ ঘণ্টা কায়িক পরিশ্রমের জন্য বারো আউন্স জল পান করা দরকার। এ ছাড়া ব্যায়াম বা জিম করার আগে, মাঝে বা পরে লেবুর শরবৎ বা প্লেন জল পান করলে ভাল হয়। দেবকিশোর গুপ্ত জানালেন যে, কলেরা, বমি, জ্বর প্রভৃতি অসুখে শরীর থেকে অনেক জল বেরিয়ে যায় বলে শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। সন্তানসম্ভবা মহিলা ও যে সব মায়েরা বাচ্চাকে স্তন্যপান করান, তাঁদেরও স্বাভাবিকের থেকে বেশি জল খাওয়া উচিত। আবার উষ্ণ বা আর্দ্র আবহাওয়ায় ও অতিরিক্ত উচ্চতাতেও শরীরে জলের অভাব দেখা দিতে পারে। দেবকিশোর বললেন, ক্রনিক কিডনির অসুখে বা হার্ট ফেলিওরের মতো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে জল মেপে খেতে হয়, বাড়তি জল বা জলীয় জিনিস কিডনি ও হার্টের উপর চাপ ফেলে।
আরও পড়ুন: ঘরে তৈরি খেলায় আনন্দ শিশুদের
কোভিড আবহে পর্যাপ্ত জলপানের পরামর্শ দিলেন দেবকিশোর। যাঁদের ইতিমধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বা সেরে উঠেছেন, তাঁদের জলের প্রয়োজন বেশি। এই সময়ে নানান ওষুধ খেতে হয়, তাই কম জল পান করলে শরীর খারাপ লাগে। অনেকে অল্প জল খেতে অভ্যস্ত বলে তাঁদের চট করে জলতেষ্টা পায় না। এ দিকে শরীরে জলের ঘাটতি থাকলে ক্লান্তি বাড়ে, কাজে অনীহা দেখা দেয়, প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। যেসব বয়স্ক পুরুষ প্রস্টেটের অসুখে ভুগছেন, তাঁদের সন্ধের পর বেশি জল খেলে বার বার বাথরুমে দৌড়তে হবে। বললেন ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ। তাই প্রস্টেটের অসুখে সারা দিনে প্রয়োজনীয় জল পান করে বিকেলের পর থেকে অল্প পরিমাণে জল খাওয়া উচিত। অন্য দিকে, কিডনিতে স্টোন থাকলে বেশি জল খেলে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট স্টোন বেরিয়ে যেতে পারে, বললেন অমিত ঘোষ । তাই, জলপানের ব্যাপারে কোনও আপস করা ঠিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy