Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Diseases

করোনার ভয়ে হাসপাতাল এড়িয়ে অন্য রোগকে আশকারা দেবেন না

এক রোগের ভয়ে অন্য রোগের চিকিৎসা না করানোটা কিন্তু অনেক বেশি আতঙ্কের... আসলে করোনার দাপটে মানুষ ভুলে যাচ্ছে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। একটি রোগ মহামারির আকার নিয়েছে বলে, বাকি রোগ যে বিদায় নিয়েছে তা কিন্তু নয়।

মডেল: মোনালিসা পাহাড়ি, তৃণা বৈদ্য, মুনমুন রায়

মডেল: মোনালিসা পাহাড়ি, তৃণা বৈদ্য, মুনমুন রায়

পারমিতা সাহা   
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০১:২১
Share: Save:

অনিন্দিতার মায়ের বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। টানা পাঁচ দিন ধরে তাঁর প্রচণ্ড বমি এবং পেটে ব্যথা। কোনও ওষুধে সে বমি কমেনি। অথচ তিনি কিছুতেই হাসপাতালে যাবেন না। তাঁর ভয়, হাসপাতালে গেলে সেখান থেকে যদি করোনা সংক্রমণ হয়! কিন্তু ক্রমশ তাঁর পটাশিয়াম লেভেল নেমে গিয়ে দাঁড়ায় ১.৮-এ। অবস্থা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তখন তিনি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হলেন। সমস্যাটা আদপে ততটাও গুরুতর ছিল না। গলব্লাডারে ইনফেকশন বা কলিসিস্টাইসিসের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ঠিক সময়ে হাসপাতালে না যাওয়ায় সমস্যা এতটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তা প্রাণঘাতী পর্যন্ত হতে পারত!

এই ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ মাত্র নয়। এক দিকে যেমন চিকিৎসা চেয়েও পাচ্ছেন না অনেকে, অন্য দিকে তেমনই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালমুখী হতে ভয় পাচ্ছেন বহু মানুষ। করোনার আতঙ্ক এতটাই চেপে বসেছে মনে। অনেকেই রোগ পুষে রাখছেন শরীরে। তার পর রোগ যখন আরও বেশি ডালপালা মেলছে এবং ক্রমশ আয়ত্তের বাইরে, তখন হয়তো হাসপাতালে যাচ্ছেন।

আসলে করোনার দাপটে মানুষ ভুলে যাচ্ছে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। একটি রোগ মহামারির আকার নিয়েছে বলে, বাকি রোগ যে বিদায় নিয়েছে তা কিন্তু নয়। হার্টের বা কিডনির অসুখ কিংবা ক্যানসারের মতো আরও অনেক রোগ আছে, যা করোনার চেয়ে বহু গুণে ভয়ঙ্কর। তা ছাড়া এর পরে আসছে বর্ষা। ফলে ডেঙ্গি এবং আরও নানা সংক্রামক রোগেরও প্রাদুর্ভাব বাড়বে।

তবে এই সমস্যা একমুখী নয়। বহু চিকিৎসকও এ সময়ে রোগী দেখা বন্ধ করেছেন, বিশেষত যাঁদের রোগীর ক্লোজ় কনট্যাক্টে আসতে হয়। যেমন, ইএনটি, আই, ডেন্টিস্ট্রি ইত্যাদি। আবার এন্ডোস্কপি বা ব্রঙ্কোস্কপির মতো পরীক্ষা করতেও ভয় পাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ভয়টা হয়তো অমূলকও নয়। দেশে-বিদেশে করোনার চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসকের মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়।

ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত এবং অনেক সময়ে তাঁরা রোগ চেপে রাখছেন। অতএব এই সমস্যার সমাধান কী? ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন এক্সপার্ট অ্যান্ড অ্যাকাডেমিশিয়ান ডা. অরিন্দম কর বললেন, ‘‘এই ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে প্রায় সব হাসপাতালই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। তার জন্য হাসপাতালের ইনফ্রাস্ট্রাকচারেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেখানে সেন্ট্রালাইজ়ড এসি রয়েছে, তা প্রত্যেকটি রুমের সঙ্গে কানেক্টেড। ফলে তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর বিরাট আশঙ্কা ছিল। প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় হাসপাতালগুলি তা ডিসকানেক্ট করেছে। যারা পারেনি, এসি বন্ধ রেখেছে। পিপিই কিটের সমস্যাও এখন অনেকটা আয়ত্তাধীন। হেলথ সার্ভিসের সঙ্গে জড়িত সকলেই এখন বুঝে গিয়েছেন, এই রোগটা নিয়ে যখন আমাদের বাঁচতে হবে, তখন লড়াইটা ঠিক মতো লড়তে হবে। তাই ইমার্জেন্সি বুঝে হাসপাতালে আসুন। রোগের যথাযথ চিকিৎসা করান। নি-রিপ্লেসমেন্ট দু’মাস পরে করালেও চলবে, কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে তা কখনওই করা যাবে না। আবার করোনা নেগেটিভ একজন পেশেন্ট হাসপাতালে গিয়ে করোনা পজ়িটিভ হয়েছেন, এমন উদাহরণ কোথায়? তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে অতিরিক্ত সাবধান হতেই হবে। যেমন ডায়ালিসিস রোগীকে হয়তো সপ্তাহে তিন-চার দিন হাসপাতালে যেতে হয়, সেটা চিন্তার তো বটেই। কিন্তু খুব প্রয়োজনে যাঁদের একবার আসতে হচ্ছে, তাঁদের ভয়ের কারণ নেই।’’ সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতালেও কোভিড পেশেন্টদের পাশাপাশি নন-কোভিড পেশেন্টদেরও চিকিৎসা চলছে। এবং করোনার চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে সেই হাসপাতালকে কিন্তু এখন আর শুধুই কোভিড হাসপাতাল রাখা হচ্ছে না।

তবে শুধু হাসপাতালের পরিকাঠামোতেই যে বদল এসেছে তা নয়, চিকিৎসকদেরও এই রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য উপযুক্ত ভাবে তৈরি হতে হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা নিজেদের মধ্যে নেটওয়র্কিং করে, নিজেকে প্রশিক্ষিত করেছেন। গাইডলাইন বার করেছেন। করোনা রোগীদের যেহেতু সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে, তাই তাঁদের বিশেষ ভাবে সাবধান হওয়া জরুরি বইকি!

হাসপাতালে আসা রোগী করোনা আক্রান্ত কি না, সেটা তাড়াতাড়ি বোঝার জন্য চিকিৎসকেরা চারটি দিকের উপরে জোর দিচ্ছেন। ‘‘আমি এই চারটি দিকের নাম দিয়েছি হিস্ট্রি, জিয়োগ্রাফি, পিকচার অ্যান্ড টেস্ট। এই কম্বিনেশন অব ফোরকে একসঙ্গে দেখে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়,’’ বললেন ডা. কর। হিস্ট্রি মানে রোগীর কিছু টিপিক্যাল উপসর্গ, অর্থাৎ জ্বর, হালকা শ্বাসকষ্ট, কাশি, গা-ব্যথা, ডায়েরিয়া বা সোর থ্রোট আছে কি না। জিয়োগ্রাফি অর্থাৎ রোগী কোন অঞ্চল থেকে আসছেন। পিকচার অর্থাৎ এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যান। ‘‘এ ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের একটা বিশেষ প্যাটার্নের ছবি আসতে দেখা গিয়েছে। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে কে করোনা আক্রান্ত,’’ বললেন তিনি। শেষ ধাপ হচ্ছে টেস্ট। তবে পরীক্ষার ফল আসতে কিছুটা সময় লাগলেও এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যান দেখে ডাক্তারেরা খুব তাড়াতাড়িই বুঝতে পারছেন, রোগী আদৌ করোনা আক্রান্ত কি না। এবং খুব তাড়াতাড়িই সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তাই শরীরে সমস্যা গুরুতর হলে তাকে অবহেলা করবেন না বা ভয় পেয়ে চেপে রাখবেন না। তাতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Diseases Coronavirus Pandemic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy