—প্রতীকী চিত্র।
কেউ চাইছেন, পুজোর আগে অন্তত দশ কেজি ওজন কমাতে। কেউ আবার চান, শরীরের পেশিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে। কারও আবার লক্ষ্য, ‘ভি’ আকৃতির শরীরে কোমরের মাপ কমিয়ে আনতেই হবে ২৮ থেকে ৩০ ইঞ্চির মধ্যে।
পুজোর সময়ে চেহারা খোলতাই করতে গত কয়েক বছরের মতো এ বারও ভিড় বাড়ছে বিভিন্ন জিমে। যাঁরা সেখানে যাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কমবয়সি। প্রশিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত জিমে সকালে ও সন্ধ্যায় ভিড় থাকে। কিন্তু পুজো এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় হচ্ছে দুপুরেও। আর প্রায় সকলেই জিমে ছোটায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা স্পষ্টই জানাচ্ছেন, পুজোর আগে এক মাস বা দু’মাস শারীরচর্চা করে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। বরং, কম সময়ে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
স্পোর্টস মেডিসিনের চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, হঠাৎ জিমে গিয়ে বেশি সময় ধরে কসরত করলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘ওজন নিয়ে টানা পেশির ব্যায়াম করলেই শুধু হয় না। পেশিকে বিশ্রামও দিতে হয়। ওজন নিয়ে দ্রুত পেশির শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করলে কার্ডিয়াক আউটপুট বেড়ে যায়। তা অতিরিক্ত মাত্রায় গেলে হৃদ্যন্ত্র বিকল হতে পারে।’’ শান্তিরঞ্জনের কথায়, ‘‘পুজোর আগে জিমে শারীরচর্চা করতে গিয়ে চোট পেয়ে অনেকেই আমাদের কাছে এসে জানতে চান, কত দিনের মধ্যে আবার জিমে ফিরতে পারবেন। এ-ও জানতে চান, শরীরের নীচের অংশের ব্যায়াম করতে না পারলেও উপরের অংশের ব্যায়াম করতে পারবেন কি না।’’ ওই চিকিৎসকের মতে, উৎসবের আগে শুধু নয়, শরীর সুস্থ রাখতে গেলে সারা বছর শারীরচর্চা করা দরকার।
যে সব জিমে পুজোর আগে ভিড় বাড়ছে, সেখানে সেই ভিড় সামলানোর পরিকাঠামো আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন চিকিৎসকদের একাংশ। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন, জিমগুলি প্রশিক্ষিত ডায়েটিশিয়ান রাখে কি না, নজর দেওয়া দরকার সে দিকেও। কারণ, অতীতে দেখা গিয়েছে, জিমে শারীরচর্চা করার পরে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
উত্তর কলকাতা এবং ভিআইপি রোড মিলিয়ে বেশ কয়েকটি জিম রয়েছে সায়ন সেনগুপ্ত নামে এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর আগে জিমে ভিড় করার প্রবণতা আগে বেশি ছিল। এখন কিছুটা কমেছে। আমাদের জিমে যাঁরা পুজোর আগে ভর্তি হতে আসেন, তাঁদের বলে দিই, ম্যাজিক করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। সারা বছর শারীরচর্চা করুন। জিমে ভর্তির পরে দরকারে ডায়েটিশিয়ানেরও পরামর্শ দেওয়া হয়।’’ সায়নের দাবি, কোভিডের পরে জিমে শারীরচর্চা করার প্রবণতা কিছুটা হলেও বেড়েছে। প্রশিক্ষকদের মতে, সাধারণত সর্বাধিক দেড় ঘণ্টা শারীরচর্চা করা উচিত। যাদবপুর এলাকার একটি জিমের মালিক দেব সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এক-দু’মাসের মধ্যে মেদ কমানোর শর্তে ভাল জিমে ভর্তি নেওয়া হয় না। এটা ঠিকই যে, পুজোয় আকর্ষণীয় প্যাকেজ থাকে, যা দেখে অনেকে ভর্তি হন। তবে আমরা সারা বছরের প্যাকেজ নিতে উৎসাহিত করি।’’
হৃদ্রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলের মতে, ‘‘ওজন কমানো অবশ্যই ভাল। কিন্তু, জিমে গিয়ে দ্রুত ওজন কমাতে গেলে তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। এর ফলে বুক ধড়ফড়ানি থেকে শুরু করে ইলেক্টোরাল ইমব্যালেন্স কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।’’
একই মত পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরীর। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর লক্ষ্য নিয়ে জিমে যান। শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত ব্যায়াম করার পাশাপাশি কেউ কেউ খাওয়াও কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ভাবে এক মাস বা কিছু দিন আগে থেকে ক্রস ডায়েটিং শুরু করলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। অবৈজ্ঞানিক ভাবে ডায়েটিং শুধু যে শরীরকে দুর্বল করে তা-ই নয়, কোনও কোনও অঙ্গেরও স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু, স্বাভাবিক মাত্রায় ওজন কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কেউ যদি জিমে গিয়ে শারীরচর্চা করেন, সেটা সব সময়েই ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy