সময় আবার পুরনো ছন্দে ফেরার।
শেষ হতে চলেছে উৎসবের মরসুম। এ বার সময় আবার পুরনো ছন্দে ফেরার। গত কয়েক দিনে জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার ফলে সকলেরই বেড়েছে ওজন। নিয়ম অনুযায়ী, সময় মেনে খাওয়াদাওয়া, ডায়েট মেনে চলা তো দূরের কথা, বাঙালির উৎসব মানেই ভাজাভুজি আর মিষ্টি। মন ভরে এ সব খাওয়ার পরে এ বার অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলার পালা। ডায়াটিশিয়ান রেশমি রায়চৌধুরীর মতে, “সামান্য কয়েকটা নিয়ম মেনে সারাদিন খাওয়াদাওয়া করলেই ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব অতিরিক্ত ওজন। তবে অন্তত ৭ দিন মানতেই হবে এই নিয়ম। মোটামুটি ১৪ দিন থেকেই দেখা যেতে পারে ফলাফল।”
পুষ্টিবিদ রেশমি রায়চৌধুরী বলছেন, মানতে হবে চারটি নিয়ম,
কখন খাবেন, কী খাবেন?
সারাদিনের কাজের জন্য চাই এনার্জি। আর এনার্জি আসে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে। তাই সকালের খাবারে থাকতে পারে পাঁউরুটি বা মুড়ি। সঙ্গে সিদ্ধ সবজি খাওয়া ভাল। ব্রেকফাস্টের পর থেকে দুপুরের খাবারের মধ্যে রাখতে হবে যে কোনও একটা ফল। তবে চলবে না আম, কলা, সবেদা... এই ধরনের ফল। পেয়ারা, তরমুজ, পেঁপে, শসা, আঙুর, বেদানা খেতে হবে এ সময়।
প্রথম সাত দিন লাঞ্চ এবং ডিনার দু’বেলাই খেতে হবে রুটি। দ্বিতীয় সপ্তাহে লাঞ্চে ভাত, ডিনারে রুটি। তবে ডিনারে ভাত চলবে না। সঙ্গে বেশি পরিমাণে খেতে হবে সামান্য তেলে ফোড়ন দিয়ে তৈরি ঘরোয়া সবজি। সঙ্গে থাকবে স্যালাড। এ ক্ষেত্রে শসা, পেঁয়াজ, টম্যাটো, গাজর কুরিয়ে নিয়ে ডাল, তরকারির উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাতে সাধারণ পরিমাণের চেয়ে বেশি খাওয়া যাবে স্যালাড। আবার দুপুরে খাওয়া যেতে পারে দই-ভাত। রাতের খাবারে রাখতে পারেন ডালের জল, সবজি সিদ্ধ।
সন্ধ্যার সময়ে মুড়ি, শসা। মনে রাখতে হবে একেবারেই চানাচুর জাতীয় ভাজাভুজি খাবার চলবে না। ছোলাও না খাওয়াই ভাল। দই বা লস্যি খাওয়া যেতে পারে সন্ধ্যার সময়।
সারাদিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। তবে একেবারেই চলবে না কোনও ধরনের প্রসেসড ফুড, সস, প্যাকেটজাত খাবার, কফি, চকলেট, সিগারেট, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার। পাশাপাশি দূরে থাকতে হবে সফট ড্রিঙ্কস বা অ্যালকোহল থেকে। বরং চাইলে খাওয়া যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স পানীয়।
ডিটক্স ওয়াটার
* ডিটক্স পানীয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর গরমজলে লেবু, মধু দিয়ে খাওয়া। তবে রেশমি বলছেন, “ওজন কমাতে বাদ দিতে হবে মধু। সকালে খালি পেটে গরমজলে একটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে, কমে কনস্টিপেশনের সমস্যাও।” লেবুতে থাকে ভিটামিন। সারা দিনে অল্প অল্প লেবুর জল খেলে খাওয়ার প্রবৃত্তিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে রোজ একই ধরনের ডিটক্স পানীয়ের বদলে খাওয়া যেতে পারে এক-একদিন এক একরকম পানীয়।*এক চা চামচ সাদা জিরে সারা রাত এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ফুটিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তাতে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে একটা পাতিলেবুর রসও। তবে লেবুর রসে অনেক সময়েই সম্ভাবনা থেকে যায় অ্যাসিডিটির, যা থেকে বাড়তে পারে ওজন। তাই প্রয়োজনে বাদ দিতে হবে লেবুর রস।*এক চামচ জোয়ান সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে পান করলে ওজনের সঙ্গে সঙ্গে কমবে ডায়রিয়া, বদ হজমের মতো সমস্যাও।*একইভাবে সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ফুটিয়ে খাওয়া যেতে পারে মৌরির জলও।*খিদে কমায় দারুচিনি ভিজিয়ে ফোটানো জলও। তবে এ ক্ষেত্রে জিরের সঙ্গে মৌরি বা দারুচিনির সঙ্গে জোয়ান মিশিয়ে খেলে হবে না। সবরকম খেতে চাইলে ৫ দিন সকালে আলাদা আলাদা ৫ রকম পানীয় খেতে হবে। *কেবল সকালেই নয়, উৎসবের মরসুমে নিজেকে ডিহাইড্রেটেড রাখতে, শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সারাদিন ধরেই খাওয়া যায় অনেক ধরনের ডিটক্স ওয়াটার। “সারাদিনে দুই লিটার ডিটক্স ওয়াটার পান করতে পারেন। প্রতি এক ঘণ্টায় এক গ্লাস জল পান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এই প্রসঙ্গে ডায়াটিশিয়ান রেশমি বলছেন, “সারাদিনে খাওয়ার জন্য নানারকম ডিটক্স ওয়াটার হয়। অন্তত এক ঘণ্টা উপকরণগুলিকে একসঙ্গে ভিজিয়ে রাখার পর থেকেই তা পান করা যেতে পারে। তবে একবার ভিজিয়ে রাখলে পরবর্তী অন্তত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যেই খেয়ে ফেলতে হবে জলটা। তারপর থেকে খাওয়া যেতে পারে সাদা জল, নাহলে আবার নতুন করে ভেজাতে হবে উপকরণগুলি। ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি জলে ডুবে থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে উপকরণগুলি, আর তাতে ভয় থেকে যায় ডায়রিয়া হওয়ার।”
*এক লিটার জলে ছোট ছোট টুকরো করে কাটা একটি আপেলের সঙ্গে নিন ৪ থেকে ৫টা দারুচিনির টুকরো, আর একটু আদা কুচি। এ বার অন্তত ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উপকরণগুলিকে ধীরে ধীরে পান করতে থাকুন।
*একটা তাজা গোলাপ ফুলের চার থেকে পাঁচটি পাপড়ি এক লিটার জলের মধ্যে নিয়ে তাতে এক চামচ মৌরি ও একটা গোটা মুসাম্বি লেবু বা কমলালেবুকে গোল করে কেটে ঘণ্টাখানেক ডুবিয়ে রেখে খাওয়া যেতে পারে সেই জল। ওজন কমার পাশাপাশি সুন্দর হবে ত্বকও।
*শুধু ত্বক নয়, ডিটক্স ওয়াটার যত্ন নেয় চুলেরও। ডুমো করে কাটা গাজর, কারিপাতা আর পাতলা গোল করে কাটা একটা পাতিলেবু একসঙ্গে এক লিটার জলে এক ঘণ্টা রেখে খেলে সুন্দর হবে চুলও।
*খোসাসুদ্ধ গোল করে কাটা একটা শসা, কয়েকটা তুলসী পাতা, ও এক চা চামচ তুলসী বীজ এক লিটার জলে ভিজিয়ে রেখে খেলে ওজনের সঙ্গে সঙ্গে কমে অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা, স্ট্রেসও।
*এক লিটার জলে গোল করে কেটে একটা পাতিলেবু, আদা কুচি, পুদিনা পাতা এবং এক কাপ গ্রিন টি একত্রে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে অল্প অল্প করে। তাতে শরীর ও মন সতেজ থাকবে সারাদিন। খিদে থাকবে নিয়ন্ত্রণে। ওজন কমবে চটজলদি।
ডিটক্স ফুড ডায়েট
পুষ্টিবিদ রেশমি রায়চৌধুরী বলছেন, “পাশাপাশি অনুসরণ করা যেতে পারে ডিটক্স ফুড ডায়েটও। তবে তা একটু পরিশ্রমসাধ্য। দিনভর ডিটক্স ফুড ডায়েটেও ১৪ দিনে কমবে ওজন। তবে অবশ্যই যে কোনও একটি পদ্ধতিকেই অনুসরণ করতে হবে।” ডিটক্স ফুড ডায়েট উপকরণের মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের ফল, শাক ও সবজি, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ।*এ ক্ষেত্রে সকালে যে কোনও এক ধরনের ডিটক্স ওয়াটার খাওয়ার পর ৭ দিনে ৭ রকম ফলের রস খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে একটা সিট্রাস ফলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে যে কোনও নন-সিট্রাস ফল। যেমন খাওয়া যেতে পারে আপেল ও কমলালেবুর রস বা নাসপাতি ও মুসাম্বি লেবুর রস। এ ধরনের ডায়েটের ক্ষেত্রে চলবে না দই বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার।*সকালের খাবারে খাওয়া যেতে পারে জলে ভেজানো চিঁড়ে বা মুড়ি। সঙ্গে থাকতে পারে ১/৪ চা চামচ মধু। এর কিছুক্ষণ পরে একটা গোটা ফল খেতে হবে।*দুপুরের খাবারে কোনও দিন ৪-৫ টুকরো লাউ এবং একটা গোটা শসা দিয়ে বানানো জুস খেতে পারেন। কখনও কাঁচা পেঁপে, ব্লাঞ্চ করে নেওয়া এক আঁটি পালং শাক ও এক গ্লাস জল দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন স্মুদি। আবার কখনও বিট, শসা ও ব্লাঞ্চ করা এক আঁটি পালং শাক দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন স্মুদি। কিংবা খেতে পারেন স্যালাড। অল্প করে ভাপানো পালং শাক, বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়ো, কিনোয়ার সঙ্গে ১৫ গ্রাম ঢেঁকি ছাঁটা চাল, আদা কুচি দিয়ে সাদা তেল বা অলিভ অয়েলে অল্প করে ভেজে নিন। চিয়া সিডস ছড়িয়ে খেতে পারেন। সঙ্গে রাখুন সিদ্ধ মুগ বা মুসুর ডাল।*সন্ধ্যায় সানফ্লাওয়ার, মেলন, চিয়া, ফ্লেক্স ইত্যাদি সিডস ১/৪ চা চামচ করে নিয়ে একসঙ্গে মিক্সিতে মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করে নিয়ে খেতে পারেন।*রাতের খাবারে থাকবে সবজি দিয়ে তৈরি স্টু, দই, ডাল ইত্যাদি।
রেশমির কথায়, “আঙুর, শসা, আনারস, পেয়ারা, কমলালেবু, আপেল এইসবই হল বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স ফল। ডিটক্স ফুড ডায়েট হোক কিংবা সাধারণ ঘরোয়া খাবারের ডায়েট, দিনে অন্তত একটি ফল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।”
কতটা পরিমাণে খাবেন?
এ বার আসা যাক খাবারের পরিমাণের প্রসঙ্গে। কতটা খাবেন তা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে ব্যক্তির ওজনের উপরে। সাধারণত যদি কেউ ৮ থেকে ৯ চামচ ভাত খায় তবে ৪ থেকে ৫ চামচ খেতে হবে। আর তিনটে রুটির জায়গায় দুটো। তবে যা-ই খান না কেন, খেতে হবে বারেবারে অল্প করে। তাতে মেটাবলিজ়ম বাড়বে। শরীর কোন ফ্যাট জমিয়ে রাখতে পারবে না।
স্বাস্থ্যই সম্পদ। অতিরিক্ত ওজন যেমন কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, তেমন ডেকে আনে রোগব্যাধি। তাই খেতে হবে নিয়ম মেনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy