Advertisement
০২ অক্টোবর ২০২৪
dialysis procedure

ডায়ালিসিসের পর হাসপাতাল থেকে সোজা চলে যেতে পারেন অফিস

ডায়ালিসিস যন্ত্রণাদায়ক নয়। ডায়ালিসিস শুরু করলেই একজন রোগী অনেকটা সুস্থ বোধ করেন।

ডায়ালিসিসের পরেই স্বাভাবিক কাজ করা সম্ভব।

ডায়ালিসিসের পরেই স্বাভাবিক কাজ করা সম্ভব।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৫১
Share: Save:

ডায়ালিসিস নিয়ে অনেকের মনেই নানা রকমের সংশয় আছে। এতে শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়, কাজকর্ম করার ক্ষমতা চলে যায়— এমন অনেক কিছু। কিন্তু বিষয়টা সব সময় তা নয়। ৬৪ বছরের এক মহিলার ঘটনা বলা যাক। একাই সকাল সকাল মেট্রো-অটো ধরে সোজা হাসপাতালে পৌঁছে যেতেন। টানা ৪ ঘণ্টা ডায়ালিসিস নিয়ে অটো ধরে পৌঁছে যেতেন অফিসে। সেখানে যাবতীয় কাজকর্ম সেরে সোজা বাড়ি।
ক্রনিক কিডনির অসুখ থাকলে সপ্তাহে নিয়ম করে ৩ দিন ডায়ালিসিস নেওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ কিডনি আমাদের শরীরের ছাঁকনির কাজ করে। শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়ায় তৈরি হয় নানা টক্সিক ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিডনি এই দূষিত পদার্থ রক্ত থেকে ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দেয়। রক্ত পরিশোধন করার পাশাপাশি শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স ও জলের ভারসাম্য রক্ষা করা কিডনির অন্যতম কাজ। তাই কোনও ভাবে কিডনির কাজে ব্যাঘাত হলে শরীরে টক্সিন জমে, অসুস্থতা বাড়ে।
‘ক্লিনিক্যাল জার্নাল অফ অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে বলছে, ২০৩০ সালে ক্রনিক কিডনির অসুখের নিরিখে ভারতবর্ষ এক নম্বরে পৌঁছে যাবে। ক্রনিক কিডনির অসুখে কিডনির কার্যক্ষমতা ১৫ শতাংশ কমে যায়। কিডনি প্রতিস্থাপন কিংবা নিয়মিত ডায়ালিসিস করলে তবেই সুস্থ জীবন যাপন করা যাবে, বললেন কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট প্রতীক দাস।
কোভিডের সময় অনেকেই ডায়ালিসিস করানোর জন্যে হাসপাতালে যেতে পারেননি। ডায়ালিসিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রাণ হারিয়েছেনও অনেকে। সপ্তাহে ৩ দিন ডায়ালিসিস করা হলে ১৫–১৬ বছর পর্যন্ত ভাল থাকা যায়, বললেন প্রতীক দাস। কিন্তু অনেকেই সপ্তাহে ১ বা ২ দিনের বেশি ডায়ালিসিস করাতে পারেন না।
অনেক সময় সংক্রমণ বা অন্যান্য কারণে কিডনি বিকল হলে সাময়িক ভাবে ডায়ালিসিস নিতে হয়। কিডনির কাজ স্বাভাবিক হয়ে গেলে তাঁদের আর ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ক্রনিক কিডনির অসুখে কিডনি বিকল হয়ে গেলে বাঁচার জন্যে ডায়ালিসিস ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশন ছাড়া গতি নেই।
হিমোডায়ালিসিস সপ্তাহে ৩ দিন হাসপাতালে গিয়ে করাতে হয়। সময় লাগে ৪ ঘণ্টা। পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস বাড়িতেই করা যায়। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে এই ডায়ালিসিস করা দরকার। প্রতীক দাস জানালেন, হিমোডায়ালিসিস চলাকালীন প্রস্রাবের পরিমাণ অত্যন্ত কমে যায়। ফলে জল খাবার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ মেনে চলা দরকার। নইলে শরীরে জল জমে শ্বাসকষ্ট-সহ নানান সমস্যা দেখা যায়। ডায়ালিসিসসের সাহায্যে শরীরে জমা টক্সিন বের করে দেওয়া হয়।
অনেকেই পদ্ধতিটি সম্পর্কে না জেনে অহেতুক ভয় পান। জেনে রাখুন, ডায়ালিসিস যন্ত্রণাদায়ক নয়। ডায়ালিসিস শুরু করলেই একজন ক্রনিক কিডনির অসুখের রোগী অনেকটা সুস্থ বোধ করেন। ভয় কেটে যায়। ডায়ালিসিসের আগে রোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অন্য অসুস্থতা না থাকলে ডায়ালিসিস করার পর সেই দিনই অফিস বা অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করায় কোনও বাধা নেই। বললেন নেফ্রোলজিস্ট জয়ন্ত দত্ত।
ডায়ালিসিস চলাকালীন চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান ও পটাশিয়াম যুক্ত খাবার বন্ধ রাখতে হবে। ডাব ও নানা ফলে পটাশিয়াম থাকে। এগুলি খাওয়া চলবে না। ডায়ালিসিসের কারণে অনেক সময় হাত পায়ের পেশিতে টান ধরা, বমি, কোমরে ব্যথা হয়। অনেকে অবসাদে ভোগেন। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dialysis procedure Types of Dialysis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE