Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
diabetic foot

ডায়াবিটিস রয়েছে? এ ভাবে পায়ের যত্ন না নিলে ফল হতে পারে বিপজ্জনক

অগ্ন্যাশয়ের বিটা সেল থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন হরমোন ঠিক মতো কাজ করতে না পারলে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়তে থাকে। এদিকে বাড়তি শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ না করলেই বিপদ।

ডায়াবিটিস থাকলে পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। ফাইল ছবি।

ডায়াবিটিস থাকলে পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:০৫
Share: Save:

নভেল করোনা ভাইরাসের দাপটে কো-মর্বিডিটি শব্দটা এখন সকলেরই চেনা। এই কো-মর্বিডিটির মধ্যে আবার সব থেকে গা ছমছমে সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ২০৩০ সালে বিশ্বে ডায়াবিটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩৬৬ মিলিয়নে।

অগ্ন্যাশয়ের বিটা সেল থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন হরমোন ঠিক মতো কাজ করতে না পারলে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়তে থাকে। এদিকে বাড়তি শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ না করলেই বিপদ। একে একে বিকল হতে শুরু করে নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। বিশেষ করে বিভিন্ন রক্তবাহী শিরা উপশিরার মধ্যে চর্বির আস্তরণ জমে যায়। ফলে ধমনিতে রক্ত চলাচলের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যায়, বলছিলেন ডায়াবিটিস ও এন্ডোক্রিনোলজি চিকিত্সক সাগরিকা মুখোপাধ্যায়। আসলে ডায়াবিটিস হলে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের কার্যক্ষমতা কমে গেলে বা ইনসুলিন নিঃসরণ বজায় থাকলেও ঠিক মত কাজ করতে না পারলে রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।

মুশকিল হল ডায়াবিটিসের এমন কোনও নির্দিষ্ট উপসর্গ নেই যে লক্ষণ দেখলেই রোগী ডাক্তার দেখাবে। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়েই চলে আর একে একে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে হার্ট, চোখ, নার্ভ, সহ নানা অঙ্গ বললেন সাগরিকা মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি নেই মানেই কি করোনা, কী বলছেন চিকিৎসকরা

ডায়াবিটিস থাকলে পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। কিন্তু পায়ের যত্নের ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষই খুব একটা সচেতন নন। শীতের সময় পা ফাটলে বড়জোর ভেসলিন বা ক্রিম লাগান। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ডায়াবিটিসে ভুগছেন তাঁদের পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। বিশেষ করে এদের পায়ে ছোট কোনও কাটা বা ক্ষত থেকেও পরে বড় সমস্যা শুরু হতে পারে বললেন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সেমন্তী চক্রবর্তী। ডায়াবিটিস থাকলে পায়ের নখ বড় হতে দেবেন না। কেটে ছোট করে রাখতে হবে, প্রতিদিন বাড়ি ফিরে অল্প গরম জলে পা ডুবিয়ে রেখে মৃদু সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নারকেল তেল বা ক্রিম লাগিয়ে নরম করে রাখতে হবে। অনেক সময় পায়ের ক্ষত অবহেলা করলে বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে অ্যাম্পুটেশন পর্যন্ত করতে হতে পারে। তাই ডায়াবিটিসের রোগীদের নিয়মিত পায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার বললেন সেমন্তী চক্রবর্তী।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী ভারতবর্ষে ডায়াবিটিস রোগীর সংখ্যা ৭৭ মিলিয়ন। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৮.৯% মানুষ ডায়াবিটিসে ভুগছেন। ডায়াবিটিক ফুট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার হিসেবে ডায়াবিটিসের রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ জনেরও বেশি মানুষের পায়ের সমস্যার ঝুঁকি থাকে। এঁদের পায়ে আলসার হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।

আমাদের দেশে তো বটেই ইউরোপ আমেরিকার মত দেশেও প্রতি বছর ডায়াবিটিসের রোগীদের ১০ – ১৫ শতাংশের পায়ে আলসার হয়। এদের মধ্যে অনেকেরই পা অ্যাম্পুট করা ছাড়া উপায় থাকে না। এই কারণেই পায়ের বিশেষ যত্নের দরকার বলে মনে করেন দুই চিকিৎসকই। দীর্ঘদিন রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে নার্ভ কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে নিউরোপ্যাথি।

আরও পড়ুন: রাতে জেগে, দিনে ঘুম? কোভিড আবহে কতটা ক্ষতি করছেন জানেন

৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে পায়ের আলসারের পেছনে আছে ডায়াবিটিক নিউরোপ্যাথি। হাইপারগ্লাইসিমিয়া অর্থাৎ রক্তের বাড়তি শর্করা এবং মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে নার্ভ কোষের প্রোটিন ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদান গ্লাইকোজেনকে অস্বাভাবিক ভাবে ভেঙে দেয়। এর ফলে নার্ভকোষের প্রোটিন কাইনেজ-সি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারে না।

ডায়াবিটিসের রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ জনেরও বেশি মানুষের পায়ের সমস্যার ঝুঁকি থাকে। ফাইল চিত্র।

নার্ভ কোষ এলোমেলো ভাবে কাজ করতে করতে ক্রমশ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। স্নায়ু তন্ত্রের মোটর, সেনসরি ও অটোনমিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে সংবেদনশীলতা ও স্পর্শ কমতে কমতে প্রায় শূন্যে এসে ঠেকে। এখানেই শেষ নয়। ক্রনিক ডায়াবিটিসের রোগীদের পায়ের স্নায়ুর কাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পায়ের পেশি, হাড়, ত্বক একে একে সবই ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।

পেশি দুর্বল হয়ে পড়ায় পায়ের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। পায়ের ত্বকের ঘর্ম গ্রন্থি ও স্বাভাবিক তেল নিঃসরণ গ্রন্থিগুলিও অকেজো হয়ে পড়ে। ক্রমশ পায়ের ত্বক শুষ্ক খসখসে হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। এদিকে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চোট আঘাত বা ব্যথার বোধ থাকে না। ফলে কেটে ছড়ে গেলে বা সংক্রমণ হলে রোগী টেরই পান না। যখন বুঝতে পারেন তখন দেরি হয়ে গিয়েছে।

ডায়াবিটিসের সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলএর পরিমাণ বেশি থাকলে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ধূমপান করলেও রক্তবাহী ধমনির মধ্যে চর্বি জমার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই পায়ের বিশেষ যত্ন না নিলে পায়ের সমস্যায় গৃহবন্দী হয়ে থাকার ঝুঁকি থাকে। ডায়াবিটিসের রোগীদের পায়ে একবার আলসার হলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময়েই তা নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: কমবে খরচ, বাড়বে সঞ্চয়, মেনে চলুন এই সব বিষয়গুলি​

কিছু সাবধানতা মেনে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে গেলে যথাযথ চিকিৎসা করে ৪০ শতাংশের বেশি অ্যাম্পুটেশন প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়াবিটিসের চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত পায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো ও যত্ন নিলে অনেক দুর্ভোগের হাত এড়ানো যায়। ডায়াবিটিস রোগীদের জুতোর ব্যাপারেও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত বললেন সেমন্তী চক্রবর্তী।

শক্ত সোলের জুতো পরলে পায়ের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই নরম সোলের হালকা জুতো পরা উচিত। জুতো কেনার সময় হিসেবে বিকেলের দিক বেছে নিতে বললেন সেমন্তী। সারা দিনের কাজের পর পা কিছুটা ফুলে যেতে পারে। সকালে জুতো কিনলে বিকেলে পায়ে শক্ত হয়ে চেপে বসলে সমস্যা হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ভাল থাকুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE