Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
diabetes

কেন দাঁতের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন ডায়াবিটিসে?

প্রায় ৭ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ ডায়াবিটিসে ভুগছেন এ দেশে। ডায়াবিটিস রোগীদের মুখ গহ্বরের অন্যতম প্রধান সমস্যা মুখের লালা শুকিয়ে যাওয়া। তা থেকে হতে পারে দাঁতের সংক্রমণও।

সংক্রমণের ভয়ে দাঁতের চিকিৎসায় অবহেলা নয় কোনওমতেই। ফাইল ছবি।

সংক্রমণের ভয়ে দাঁতের চিকিৎসায় অবহেলা নয় কোনওমতেই। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৩৮
Share: Save:

নভেল করোনা ভাইরাসের নিজের দেশ চিন এখন এক নম্বরে। আর তার ঠিক পিছনেই আমাদের দেশ। কোভিড সংক্রমণ নয়, ডায়াবিটিস রোগীর সংখ্যার নিরিখে ভারত দ্বিতীয়। প্রায় ৭ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ ডায়াবিটিসে ভুগছেন। রক্তে চিনির বাড়তি মাত্রা নিঃশব্দে নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বিকল করে দিতে শুরু করে। বংশগত এই অসুখের কারণে হার্ট, চোখ, কিডনি, নার্ভের পাশাপাশি দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা দেখা যায়, বললেন ডেন্টাল সার্জন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ডায়াবিটিস থাকলে বছরে অন্তত দু’বার ডেন্টাল সার্জেনের কাছে গিয়ে চেক আপ করিয়ে নেওয়া উচিত।

ডায়াবিটিস রোগীদের মুখ গহ্বরের অন্যতম প্রধান সমস্যা মুখের লালা শুকিয়ে যাওয়া। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে 'জেরোস্টেমিয়া' বা 'হাইপোস্যালাইভেশন'। স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের মুখের লালা গ্রন্থি থেকে অনবরত লালা নিঃসরণ হয়। এই লালা মুখের মধ্যে জমে থাকা খাবারের টুকরো, নানা জীবাণুর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। লালা নিঃসরণ কমে গেলে জীবাণুদের পোয়া বারো। মুখের মধ্যে জীবাণুদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ফলস্বরূপ দাঁতের গোড়ায় মাড়িতে নানা সংক্রমণের ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।

মুখের লালা নিঃসরণ কমে গেলে জিভ ও মুখ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফাটে। এক্ষেত্রে বারে বারে জল পানের পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি বললেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই মাড়ি ও দাঁতের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। নইলে মুখের মধ্যে। জিভে বা মাড়িতে ছোট গোটা বা ঘা হতে পারে। এর থেকে নানা সমস্যার ঝুঁকি থাকে। তাই নিয়ম করে দু’বার সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করার পাশাপাশি ফ্লসিং করা দরকার। দাঁতের ফাঁকে যেন খাবার আটকে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: ঘরবন্দি বাচ্চা বুঁদ টিভি-মোবাইলে, সামলাতে কী কী করতেই হবে​

ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শে মাউথ ওয়াশ দিয়ে ভাল করে কুলকুচি করতে হবে। ডায়াবিটিসের রোগীদের পেরিওডন্টাল ডিজিজের ঝুঁকি খুব বেশি। দাঁতের গোড়া বা মাড়িতে নানা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রক্তে শর্করার মাত্রাধিক্য বোন লস বা হাড়ের ক্ষয়ের গতি বাড়িয়ে দেয়। ফলে মাড়ির নিচে থাকা হাড় ক্ষয়ে গিয়ে দাঁত আলগা হয়ে যায় ও দাঁত এবং মাড়ির মাঝখানে পকেট তৈরি হয়ে খাবার জমে দাঁত ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। তবে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে এ সব সমস্যার ঝুঁকি কমে। ডায়াবিটিসে স্টিকি বা মিষ্টি দেওয়া চটচটে খাবার ( যেমন কেক, জ্যাম জেলি, পেস্ট্রি, চকোলেট, ইত্যাদি) খাওয়া মানা। তবু অনেকেই এইসব নিষিদ্ধ খাবার খেয়ে ফেলেন। এই ধরনের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত।

ডায়াবিটিসের রোগীদের পেরিওডন্টাল ডিজিজের ঝুঁকি খুব বেশি। ফাইল ছবি।

এ ছাড়া দাঁতের ফাঁকে যেন খাবার আটকে না থাকে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। মুখের মধ্যে জমে থাকা খাবারে জীবাণুরা যে অ্যাসিড তৈরি করে তা দাঁতের ওপরের শক্ত আবরণ এনামেল ক্ষইয়ে দেয়। এনামেল ক্ষয়ে গেলে সেখানে গর্ত হয়ে আরও খাবার জমতে শুরু করে। ফলে শুরুতে দাঁত শিরশির ও পরের দিকে ভয়ানক যন্ত্রণা শুরু হয়, বললেন শুভঙ্করবাবু।

আরও পড়ুন: ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?​

মনে রাখা উচিত, ডায়াবিটিস থাকলে নার্ভের কার্যক্ষমতা ও সংবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে ডায়াবিটিসের রোগীদের দাঁতে অসুবিধা হলেও শিরশিরানি বা ব্যথা চট করে টের পান না। আর এই কারণেই বছরে দু’বার ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করালে ছোটখাট সমস্যা হলেই রোগ ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করালে ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এ ছাড়া ডায়াবিটিস থাকলে মুখের মধ্যে সাদাটে প্যাঁচ, ছোট খাট গোটার মতো দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসায় এসব সমস্যা দূর করতে হবে। মুখের লালা নিঃসরণ কমে গেলে কফি, অ্যালকোহল বা অতিরিক্ত চা পান করলে সমস্যা বেড়ে যায়। ধুমপান-সহ যে কোনও তামাক একেবারেই মানা। অনেক সময় 'সুগার ফ্রি চিউইংগাম' ব্যবহার করলে মুখের লালা নিঃসরণ কিছুটা বাড়ে। ডায়াবিটিসের রোগীদের ভাঙা বা ধারালো দাঁত থেকে অনেক সময় মুখে ঘা হতে পারে। এই বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE