Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
post COVID symptoms

কোভিড থেকে সারার পরেও সাবধানতা

করোনা সংক্রমণের পরে শরীরের মধ্যে বেশ কিছুদিন সেই প্রদাহ থেকেই যাচ্ছে। কারও কম, কারও গুরুতর। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর দীর্ঘমেয়াদি ভাবে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন অনেক রোগী। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতেও বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে অনেকের। এই সময় দরকার সবচেয়ে বেশি যত্ন, সংযম ও ধৈর্য। দু’জন অপেক্ষাকৃত তরুণের শরীরে ভাইরাল লোড বেশি হওয়ায় শরীর দ্রুত খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু অপেক্ষাকৃত প্রবীণ এক জন কোনও উপসর্গ ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠলেন। প্রথম দু’জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে অর্থাৎ তাঁরা করোনামুক্ত হওয়ার পরে তাঁদের শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। 

মেহেদি হাসান মোল্লা
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

মাসখানেক আগের কথা। কল্যাণী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের দুই ইন্টার্নের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এলো। দু’জনেরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে থাকে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থা স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে, এক চল্লিশের এক মহিলা করোনা আক্রান্ত হলেও কিছু টের পাননি।

অর্থাৎ দু’জন অপেক্ষাকৃত তরুণের শরীরে ভাইরাল লোড বেশি হওয়ায় শরীর দ্রুত খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু অপেক্ষাকৃত প্রবীণ এক জন কোনও উপসর্গ ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠলেন। প্রথম দু’জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে অর্থাৎ তাঁরা করোনামুক্ত হওয়ার পরে তাঁদের শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়।

এক জনের ছিল অস্বাভাবিক দুর্বলতা। সেই সঙ্গে কোনও স্বাদ-গন্ধ নেই। অন্য ইন্টার্নেরও তাই। সঙ্গে শরীরে গুটি গুটি র‍্যাশ। বুকে ব্যাথা আর হালকা কাশি। একটু জোরে হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, করোনাকে হারালেও তাঁদের তরতাজা শরীর ফিরে আসতে সময় লাগছে। এটাই হল ‘পোস্ট কোভিড সিম্পটম'।

করোনা–পরবর্তী কী ধরনের সমস্যা ভোগাতে পারে?

১. শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা বা সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। বিশেষ করে যাঁরা আইসিইউতে থেকেছেন তাঁদের শ্বাসক্রিয়া ভাবিক হতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে।

২. কয়েক সপ্তাহ কাশি থাকতে পারে। ফুসফুসে যে ক্ষত বা ফাইব্রোসিস হয়ে যাচ্ছে তার ফলে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। একটুতেই তাই অনেকে হাঁপিয়ে উঠছেন।

৩. অবসাদ আর ক্লান্তি। পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। হাঁটা–চলায় ও দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা দেখা দেয়। খাবার সঠিক ভাবে খেতে না পারায় ওজন কমে যায় ফলে শরীর দুর্বল হয়।

৪. খাবারে অরুচি। স্বাদ ও গন্ধ দীর্ঘ সময়ের জন্য চলে যাওয়া।

৫. মাথা ব্যথা। অনেকের মানসিক বিপর্যস্ততা দেখা দেয়। মনোযোগ ও চিন্তাশক্তির সমস্যা হয়। স্মৃতি হারানো, বিষণ্নতার মতো সমস্যা হতে পারে। অনেকে আবার ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’-এ আক্রান্ত হতে পারেন।

‘আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’- এর একটি জার্নালে ইতালির একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ১৪৩ জন রোগী করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার দু’ মাসের মধ্যে তাঁদের ভিতর ৮৫ শতাংশ কোনও একটি বা একাধিক শারীরিক বা মানসিক উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন। দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক কম হলেও সম্ভাবনা আছেই। তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরে বেশি সাবধান থাকতে হবে।

পোস্ট কোভিড সিম্পটম থেকে রেহাই কিভাবে?

১. বিশ্রাম নিন যতটা পারেন। খুব পরিশ্রমের কাজ করবেন না। সম্ভব হলে একজন পুষ্টিবিদের সাহায্যে ক্যালরি চার্ট করে সঠিক ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন। প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খান, বিশেষত যাঁদের গলায় ব্যথা, তাঁরা অল্প-অল্প করে বারবার খাবার খাবেন। প্রোটিন ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন বেশি করে। চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন খাওয়া যেতে পারে।

২. করোনা সংক্রমণ–পরবর্তী ফুসফুসে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যাকে পোস্ট কোভিড পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলা হয়। এর উপসর্গ শ্বাস নিতে কষ্ট, শ্বাস নিতে গেলে বুক ভার, বুকের হাড়ের পেছনে ব্যথা বা চাপ, ওজন হ্রাস, অক্সিজেন সেচুরেশন ৯০-এর নীচে নেমে যাওয়া ইত্যাদি। শ্বাসকষ্ট থেকে সেরে উঠতে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করতে হতে পারে। প্রয়োজন হতে পারে ইকোকার্ডিওগ্রাফির।

৩. ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্টেরয়েড ওষুধের ব্যবহার আর খাবারদাবারের পরিবর্তনের কারণে অনেকের রক্তে সুগারের মাত্রা ওঠানামা করতে পারে। রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে।

৪. শরীরে র‍্যাশ বেরোতে পারে। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. ধীরে-ধীরে কাজের পরিধি বাড়ান। বিভিন্ন কাজের মধ্যে বিরতি নিন। ফিটনেস এক্সারসাইজ করতে ধাপে ধাপে ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।

৬. রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোবেন। দিনেও একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। ঘুমের ওষুধ এড়িয়ে চলাই ভাল।

৭. মন প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করুন। গান শোনা, সিনেমা দেখা, বই পড়া যেতে পারে। বন্ধুবান্ধব ও আপনজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। ধ্যান বা হালকা যোগব্যায়াম করুন। ধূমপান ও কফি এড়িয়ে চলুন।

৮. সুস্থ হওয়ার পরেও মাস্ক, স্যানিটাইজারের ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে।

অনুলিখন: মনিরুল শেখ

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy