Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
corona diet

করোনা আবহে 'সুপারহিট' পানীয়ের সম্ভার বাড়িতেই, কী ভাবে বানাবেন

করোনা আবহে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক পানীয়, যা বাড়িতেই বানাতে পারবেন আপনি।

দার্জিলিং চায়ের মধ্যেও আদা ব্যবহার করেছেন অনেকেই। কেউ যোগ করছেন দারুচিনির গুঁড়ো। ছবি: শাটারস্টক

দার্জিলিং চায়ের মধ্যেও আদা ব্যবহার করেছেন অনেকেই। কেউ যোগ করছেন দারুচিনির গুঁড়ো। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:৫৪
Share: Save:

এতদিন যা হয়নি, তা হয়েছে লকডাউনের দীর্ঘ সময়ে। আগে যে সব খাবার খুব একটা খাওয়া হত না, তারাই ঢুকে পড়েছে রান্নাঘরে। সচেতন হয়েছেন সবাই। নিজে হাতে কেটে-বেটে রান্না করা শুধু নয়, কোন উপাদান কতটুকু মেশালে কতটা পুষ্টি বাড়বে, সে হিসেবও এখন সবার নখদর্পণে। গৃহিনী থেকে কর্তা, বয়ঃসন্ধির ছেলে-মেয়ে থেকে বয়স্ক মানুষরাও সচেতন খাদ্য-পানীয় নিয়ে। বিশেষ করে করোনা আবহে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক পানীয়, যা বাড়িতেই বানাতে পারবেন আপনি।

ওষুধ-ভ্যাকসিনের যা পরিস্থিতি, বাঁচতে গেলে তো লড়তে হবে রোগ প্রতিরোধ শক্তি দিয়েই। তাই রসনার চেয়ে বেশি কদর পুষ্টিগুণের। বিদেশি ভাল-মন্দের বদলে গুরুত্ব পাচ্ছে বাঙালির ঘরোয়া খাবার।

সকালের মালাই চা বা সুগন্ধী দার্জিলিং চায়ের বদলে মানুষ মজে উঠেছেন উষ্ণ গরম হলুদ-দুধে। কেউ বেছেছেন ভেষজ চা, প্যাকেটজাত নয়, প্যাকেটের খাবার যে পুষ্টিতে একটু হলেও খাটো তা জানার পর সবাই ঝুঁকেছেন টাটকা উপাদানের দিকে।

আরও পড়ুন:জন্ম বধির সারা বিশ্বের ৩.৫ কোটি শিশু, আপনার বাচ্চা ঠিক ভাবে শুনতে পাচ্ছে তো?​

হলুদ-দুধ

যে উপাদানের জন্য হলুদের এত নাম-ডাক, কারকিউমিন, তাকে পুরোদস্তুর ব্যবহার করে দুধ। ডাবল টোনড নয়, সরে মাখামাখি গাঢ় দুধ। কারণ এমনিতেই হলুদে কারকিউমিন থাকে খুব কম, মোটে ৩ শতাংশ। তার উপর চিবিয়ে জল দিয়ে খেলে, বেশিরভাগ শোষিত হয় না। সে জন্যই মালাই দুধ। কারকিউমিন ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়। ফ্যাটজাতীয় খাবারের সঙ্গে খেলে উপকার বেশি।

গোলমরিচ দিয়ে বাটার সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে দুধ খান। কারণ গোলমরিচে আছে পিপারিন, যা কারমিউমিনের শোষণ প্রায় ২০০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু হঠাৎ হলুদ খাবেন কেন? এত দিন তো না খেয়ে বেশ চলছিল। তার মানে কি সে করোনা ঠেকায়? একদম না। কারকিউমিন শরীরে অহেতুক প্রদাহের প্রবণতা কমায়। এর হাত ধরে বেশ কিছু ক্রনিক অসুখ-বিসুখের প্রকোপ কমে। ক্রনিক রোগের প্রকোপ কম মানে শরীর সুস্থ থাকা। শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। বাড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা। ব্যথা-বেদনা কমে। জীবাণু নাশ করে। দুধের গুণ মিশে ভারী হয় উপকারের পাল্লা।

তবে গুঁড়ো হলুদ নয়। কারণ এতে ভেজাল হিসেবে থাকতে পারে বিষাক্ত রং, বার্লি, ময়দা ইত্যাদি। কাঁচা হলুদ খান ভাল করে ধুয়ে। শুকনো গোটা হলুদও খেতে পারেন, বাটার সুবিধা থাকলে।

আরও পড়ুন: পুজোর সময় কি 'ফ্যাশনেবল' মাস্ক পরা উচিত, কী বলছেন চিকিৎসকেরা?​

কতটা খাবেন?

দিনে ২৫০ মিলিগ্রাম খেলে সব দিক বজায় থাকে। যদিও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন প্রদাহ কমানোর উপকার পেতে গেলে দিনে ৫০০-১০০০ মিগ্রা খাওয়া দরকার। সহজ হিসেবে, সকালে-রাতে এক চা-চামচ করে খান। রান্নায় ব্যবহার করুন।

হলুদে ক্ষতি?

রক্ত পাতলা রাখে বলে গর্ভাবস্থায় খুব বেশি না খাওয়াই ভাল।যাঁদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে, তাঁরাও খাবেন রয়েসয়ে। কারণ হলুদে ২ শতাংশ অক্সালেট আছে, যার প্রভাবে কিডনিতে পাথর হতে পারে।

সকালে খালি পেটে খাবেন। এরপর আধ ঘণ্টা আর কিছু খাবেন না। রাতে শোওয়ার আগে হলুদ-দুধ খেতে পারেন। যদি দুধ-হলুদ সহ্য হয়, ঘুম ভাল হবে।

ভেষজ চা

তুলসি চা

বাড়িতে গাছ থাকলে তুলসি পাতা দিয়ে বানাতে পারেন। করোনা না হোক, সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কম থাকবে। নিয়মিত খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

কীভাবে বানাবেন?

এক বাটি জলে এক মুঠো তুলসি পাতা ফুটতে দিন। টগবগ করে ফুটলে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট ফোটান। এরপর এতে মেশান এক চামচ মধু আর দু-চামচ লেবুর রস। মধু দেবে এনার্জি, লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগবে। ইচ্ছে হলে ধনে ও আদাও মেশাতে পারেন। শুকনো কাশির প্রকোপ কম থাকবে। কমবে প্রদাহের প্রবণতা।

বানাবেন কী ভাবে

এক লিটার জলে দু-চামচ আদা কুচি, চার চামচ ধনে ও এক মুঠো তুলসি পাতা দিয়ে কম আঁচে ভাল করে ফোটান, যতক্ষণ না জল অর্ধেক হয়ে যায়। এবার ছেঁকে নিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে খান।

আরও পড়ুন: নিউ নর্মালে সম্পর্ক ভাল রাখতে কী করবেন, কী করবেন না

কারা খাবেন না

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত তুলসি চা না খাওয়াই ভাল। কারণ তুলসিতে আছে ইস্ট্রাজল যা জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে।

যাঁরা ডায়াবিটিসের ওষুধ খান বা ইনসুলিন নেন, তাঁরা নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। কারণ তুলসি রক্তে সুগারের মাত্রা কমায়।

রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেলেও সাবধান। কারণ তুলসিও রক্ত পাতলা রাখে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, যাঁদের নিয়মিত অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা তুলসি না খাওয়াই ভাল। কারণ দুইয়ের মিলিত প্রভাবে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।

সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কমবে নিয়মিত তুলসি চা পানে। ফাইল ছবি।

দারুচিনির চা

দারুচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়েও বানাতে পারেন ভেষজ চা। এক চামচ দারুচিনির গুড়ো, সিকি চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো, এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধু-র মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত জল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন। দারুচিনির কিউমারিন, গোলমরিচের পিপারিন প্রদাহের প্রবণতা কমাবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। লেবুর ভিটামিন সি-এর কাজও তাই। সঙ্গে যুক্ত হবে মধুর এনার্জি। চাঙ্গা থাকার অব্যর্থ পানীয়। কিউমারিন বেশি খাওয়া ঠিক না। লিভারের ক্ষতি হতে পারে। ডায়াবেটিকদের সাবধানে থাকতে হবে।

চায়ের সঙ্গে “টা”

সাধারণ চায়ে ক্যাফেইন, ট্যানিন ইত্যাদি থাকে বলে খালি পেটে খেলে কারও কারও অম্বল হয়। কেউ এতে যোগ করছেন আদা, কেউ বা দারুচিনির গুঁড়ো। ভেষজ চায়ে যে কোনও ভয় নেই। তার উপর সকালে হলুদ-দুধ খেয়েছেন। কাজেই “টা” না খেলে ক্ষতি নেই। বিস্কুট জাতীয় কিছু বেশি না খাওয়াই ভাল। কিন্তু অভ্যাস বলে কথা। সে ক্ষেত্রে কল বেরনো ছোলা বা মুগ খেতে হবে।

এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধু আপনার রোজকার চা-এ যোগ করবে অন্য মাত্রা। ফাইল ছবি

প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজের দৌলতে পুষ্টির পাশাপাশি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। লেবুর রস মিশিয়ে নিলে স্বাদ বাড়বে, বাড়বে পুষ্টিও। সব রকম বাদাম খেতে পারেন। চিনে বাদাম খেলেও উপকার হবে। পেট ভরা থাকবে অনেকক্ষণ।

আরও পড়ুন: একাধিক রোগ থাকবে দূরে, কোন মাছ সপ্তাহে ক’দিন খাবেন, কতটা?

ফলের সঙ্গে দইয়ের ঘোল

রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ওজন বাড়লে করোনার জটিলতা বাড়ে। অতএব ফলের রস বাদ। ফল ও দই দিয়ে স্মুদি বানিয়ে খান। দইয়ের ঘোল বানিয়ে খান। চিনির বদলে মেশান মধু। দইয়ের প্রি-বায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। ফলেরও আছে এই গুণ, সঙ্গে অঢেল পুষ্টি। এর মধ্যে যদি একটু দারুচিনির গুড়ো, গোলমরিচ ও গুড় বা মধু মেশান, জলখাবার আর খেতে হবে না। রোগ ঠেকানোর পাশাপাশি ঝড়বে মেদ, চাকচিক্য বাড়বে ত্বকের, চুলের।

রোজ রোজ স্মুদি না খেয়ে মাঝে মাঝে রায়তা খেতে পারেন। সব রকম ফল, গোলমরিচ ও রসুন মিশিয়ে। রসুনের গুণের কথা তো জানাই আছে। অ্যালিসিন নামের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের প্রভাবে সে সর্দি-কাশি ঠেকায়, প্রেশার-সুগার-হৃদরোগ ও কোলেস্টেরলকে বশে রাখে। বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে বেশি নয়, দু-তিন কোয়াই যথেষ্ট।

কী খেয়াল রাখবেন

অন্য কিছু খেতে চান? খান। তবে প্যাকেটের খাবার নয় কিন্তু। ঘরে যা বানাবেন, সেটাই খান। শাক-সব্জি তো ভাল করে ধুয়েই ঘরে তুলছেন, কাজেই কিছু সব্জির অন্তত খোসা ফেলবেন না। বেশি ফাইবার পাবেন। তাতে ওজন ঠিক থাকবে। পেট পরিষ্কার থাকবে। সাশ্রয়ও হবে। এ সবের সঙ্গে চাই একটা কি দুটো ডিম, শরীরের অবস্থা বুঝে। সুষম আহারে সুস্থ থাকুন ভাল থাকুন।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২

• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy