Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Corona

সাপ্লিমেন্টস নয়, রোজকার এই সব খাবারেই বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

রান্নার ব্যাপারে একটা কথা মাথায় রাখা উচিত, অতিরিক্ত তেল মশলা দিয়ে রান্না করলে পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়।

বাজারে যে সব সবজি পাওয়া যায়, সবগুলিই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে। ছবি: শাটারস্টক

বাজারে যে সব সবজি পাওয়া যায়, সবগুলিই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে। ছবি: শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ১৩:১৫
Share: Save:

নভেল করোনা ভাইরাস তার দাপট বজায় রেখেছে পুরোদমে। তবে আশার কথা, আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই দ্রুত সেরে উঠছেন। কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর জোর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শরীরের ইনেট ইমিউনিটির প্রসঙ্গে ইদানীং ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই সহ নানা ভিটামিনের কথা খুব শোনা যাচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে ভিটামিনের পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে বললেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুষ্টি বিজ্ঞানী দেবনাথ চৌধুরী।

বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মধ্যে ভিটামিন ছাড়াও আছে বেশ কিছু নন নিউট্রিয়েন্টস। প্রোটিন, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও মিনারেলসকে মূলত ‘নিউট্রিয়েন্টস’ বলা হয়। এগুলি ছাড়াও খাবারে বেশ কিছু উপাদান আছে, যা এদের মধ্যে না পড়লেও শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেমন খাবারে ফাইবার না থাকলে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে অসুবিধে হয়।

টোম্যাটোতে থাকা লাইকোপিন, ফ্ল্যাভনয়েড—এগুলিও অত্যন্ত শক্তিশালী নন নিউট্রিয়েন্টস। অসুখের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে নন নিউট্রিয়েন্টসেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে, বললেন দেবনাথ চৌধুরী। বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে আবার ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর। এদের মধ্যে আবার সব থেকে ক্ষমতাশালী অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হল ভিটামিন ই। এদিকে কোভিড ১৯ ভাইরাস ঠেকাতে অনেকেই ভিটামিন ট্যাবলেট ক্যাপসুল কিনে খাচ্ছেন, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ট্যাবলেট ক্যাপসুল খেলে ভালর বদলে মন্দ হওয়ার আশঙ্কা থাকে বললেন দেবনাথবাবু। আমাদের প্রতিদিনের খাবার থেকেই বেশির ভাগ নিউট্রিয়েন্টস ও নন নিউট্রিয়েন্টস পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: কম ঘুমচ্ছেন না তো? রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্ব দিতেই হবে ঘুমকে

ভিটামিন এ বা ভিটামিন ডি কেউ যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খান, তাহলে ভিটামিন টক্সিসিটির ঝুঁকি খুব বেশি। তাই কোভিড ১৯ ঠেকাতে প্রতিদিনের খাবারেই খুঁজে নিতে হবে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস সহ সব রকমের পুষ্টি। এর জন্যে যে খুব দামি খাবার খাওয়া দরকার, তা নয়। চাল, গমেও যথেষ্ট পুষ্টি আছে।

অনেকে ভাত, রুটি, মুড়িকে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁদের রোজকার খাবার তালিকা থেকে এগুলিকে বাদ দেন। প্রোটিনের প্রসঙ্গে সকলে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল বা সয়াবিন খাওয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু ভাত বা রুটিতেও যথেষ্ট প্রোটিন আছে। ১০০ গ্রাম চালে ৭ গ্রাম প্রোটিন এবং ১০০ গ্রাম গমে প্রায় ১২ গ্রাম প্রোটিন থাকে। অন্য দিকে, ১০০ গ্রাম ডিমে থাকে ১৩ গ্রাম প্রোটিন। অর্থাৎ ২০০ গ্রাম ভাত বা চারটে রুটিতে যে প্রোটিন পাওয়া যায়, সমপরিমাণ প্রোটিন পেতে গেলে অন্তত দু’টি ডিম খাওয়া দরকার। আবার ভাত-রুটিতে অন্য নিউট্রিয়েন্টসও আছে।

পেয়ারা, সব রকমের লেবু, কাঁচা লঙ্কা, শাক, সবজি— সবেতেই ভিটামিন সি সহ নানান প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস আছে। রান্না করলে শাকসবজির ভিটামিন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়, এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। নটে শাক, কলমি শাক, কুমড়ো, উচ্ছে, পটল, ঝিঙে, বরবটি— এই সময়ে বাজারে যে সব সব্জি পাওয়া যায়, সবগুলিই কিন্তু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুঠো মুঠো ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

এছাড়া পাকা পেঁপে, আনারস, আম, কলা, পেয়ারা সহ সব স্থানীয় ফলের যথেষ্ট পুষ্টিগুণ আছে। আর আজকাল বাঙালির খাবারে ডাল, মাছ, দুধ বা দই তো থাকেই। ভিটামিন ই-র ভাল উৎস তেল ও বাদাম। দেবনাথবাবুর মতে, সব কিছু খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাওয়া দরকার। তাতেই মিলবে পর্যাপ্ত পুষ্টি, যাতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হবে।

আরও পড়ুন: সারা ক্ষণ মুখে মাস্ক বাড়াচ্ছে ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা, কী করবেন​

কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় ভিটামিন ডি-র ভূমিকা নিয়ে নানান গবেষণা চলছে। ভিটামিন ডি-র সব থেকে ভাল উৎস রোদ্দুর। সকাল ১১ টা থেকে ৩ টে পর্যন্ত রোদ্দুরে মিনিট দশেক হাঁটাচলা করলেই শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-র চাহিদা মিটে যাবে। তাই খাবার নিয়ে অযথা প্যানিক না করাই বাঞ্ছনীয়। রান্নার ব্যাপারে একটা কথা মাথায় রাখা উচিত, অতিরিক্ত তেল মশলা দিয়ে রান্না করলে পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়। তাই অল্প তেলে সাঁতলে রান্না করলে ভাল। সব্জি সেদ্ধ করে জল ফেলে দিলেও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাপারটাও খেয়াল রাখা উচিত বলে জানালেন দেবনাথ চৌধুরী। তবে এই সময় রোজ বাজার গিয়ে টাটকা সবজি বা মাছ কেনার অভ্যেস ত্যাগ করুন, সপ্তাহে একদিন অথবা দু’দিনের বেশি বাজার যাবেন না। ইমিউনিটি বাড়াতে গিয়ে ভাইরাস সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরলে মুশকিল।

আরও পড়ুন:করোনা আবহে গড়ে ওঠা নতুন অভ্যাসে অজান্তেই এই সব উপকার হচ্ছে, জানতেন!​

আরও একটা কথা মাথায় রাখতে বললেন দেবনাথবাবু। খাবার খেতে গেলেই যে সারাক্ষণ ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের হিসেব কষতে হবে তা নয়। আমাদের খাওয়াদাওয়া একটা অর্কেস্ট্রার মতো হওয়া উচিত। পুষ্টির পিছনে দৌড়ে আলাদা করে খুঁজে খুঁজে ব্রকোলি, আমন্ড, অলিভ অয়েল বা কিনওয়া খাবার প্রয়োজন পড়ে না। অর্কেস্ট্রাতে যেমন একটা সুর কমজোরি হলেও অন্য বাজনা তা ঢাকা দিয়ে দেয়, খাবারের ব্যাপারটাও তাই। ভাত, ডাল, শাক, সবজি, মাছ, ডিম, রুটি— সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে খেলে এক নিউট্রিয়েন্টেসের অভাব অন্যটি পূরণ করে দেবে। তাই স্বাভাবিক খাবার খান, সুস্থ থাকুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy