Advertisement
E-Paper

করোনা আবহে টিকায় গাফিলতি, মাম্পসের সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে

অনেকে এমএমআর টিকা নেওয়ার ব্যাপারে গাফিলতি করেছেন। এর ফল নতুন করে ভাইরাসের সংক্রমণ। গলায় ব্যথা, খাবার গিলতে কষ্ট হওয়ার মতো কিছু উপসর্গ নিয়ে বাচ্চাদের ভোগান্তি বেড়েছে

অনেকে এমএমআর টিকা নেওয়ার ব্যাপারে গাফিলতি করেছেন। ছবি:শাটারস্টক।

অনেকে এমএমআর টিকা নেওয়ার ব্যাপারে গাফিলতি করেছেন। ছবি:শাটারস্টক।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ১১:১৫
Share
Save

নিউ নর্মাল জীবনযাপনে বাচ্চাদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। এ দিকে পুজোর বাজার বা অন্য ব্যাপারে নিয়মের কোনও তোয়াক্কাই করছেন না অনেকে। তার সঙ্গে নানা বুস্টার ডোজের টিকায় ঘাটতি পড়ে যাচ্ছে।

অনেকে এমএমআর টিকা নেওয়ার ব্যাপারে গাফিলতি করেছেন। এর ফল নতুন করে ভাইরাসের সংক্রমণ। গলায় ব্যথা, খাবার গিলতে কষ্ট হওয়ার মতো কিছু উপসর্গ নিয়ে বাচ্চাদের ভোগান্তি বেড়েছে। অনেক বাচ্চার টনসিলাইটিস হলেও কেউ কেউ মাম্পস নামক ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র দত্ত জানান, মাম্পসের টিকা নেওয়া থাকলে রোগের প্রকোপ এড়ানো যায়। আসলে এই অসুখটা বেশ ছোঁয়াচে।

নভেল করোনা ভাইরাসের মতই ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই অসুখ। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতই মাথার যন্ত্রণা, গা-হাত-পা ব্যথা, জ্বর আর সামগ্রিক দুর্বলতা দিয়ে মাম্পসের সূত্রপাত হয়।

আরও পড়ুন:রসুন কি রোজ খাওয়া উচিত? খেলে কী পরিমাণে, কীভাবে​

পাশাপাশি গলা ব্যথা করে ও গাল ফুলে যায়। সৌমিত্র দত্ত জানালেন, মাম্পস রোগের জন্য দায়ী প্যারামিক্সো-ভাইরাস বেশিরভাগ লালা গ্রন্থিকে আক্রমণ করতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কান আর চোয়ালের সামনের দিকে থাকা প্যারোটিড গ্ল্যান্ডকে আক্রমণ করে।

মুখ যাতে শুকিয়ে না যায় সেই জন্যে আমাদের মুখে লালা গ্রন্থি থাকে। লালা গ্রন্থির অন্যতম একজোড়া প্যারোটিড গ্ল্যান্ড কান আর চোয়ালের সামনে থাকে। মাম্পসের জীবাণু এই গ্রন্থিকে আক্রমণ করে তাই গাল ফুলে যায়। চোয়ালেও ব্যথা হয়। তাই খাবার চিবিয়ে খেতে ভয়ানক কষ্ট হয়। এমন কি জল বা তরল খাবার ঢোক গিলে খাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। মূলত ৫–৬ বছরের বাচ্চা থেকে ৩৫–৪০ বছর বয়স পর্যন্ত মাম্পস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সাধারণত ৩ বছরের কম বয়সে বাচ্চাদের এই সংক্রমণ হয় না। সংক্রমিত হবার পর রোগের উপসর্গ শুরুর দিন দুয়েক আগে থেকে উপসর্গ হবার ৫ দিন পর্যন্ত মোট ৭ দিন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন:বিশ্বে আক্রান্ত ১৩৭ কোটি, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কি না কী ভাবে বুঝবেন​

নভেল করোনা ভাইরাসের মতোই অত্যন্ত সংক্রামক মাম্পস। এই বিষয়ে সচেতন থাকতে বললেন সৌমিত্র দত্ত। বিভিন্ন দেশেই মাম্পসের এপিডেমিক হয়। আর এই কারণেই বাচ্চাকে ৯ মাস ও ১৮ মাস বয়সে মাম্পসের টিকা দিয়ে নেওয়া উচিত। বেশিরভাগ ভাইরাসঘটিত অসুখের মতই মাম্পস হলে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। অসুখটা সেলফ লিমিটিং অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের পর রোগটা নিজে থেকেই নিরাময় হয় বলে জানালেন সৌমিত্র দত্ত।

৫–৬ বছরের বাচ্চা থেকে ৩৫–৪০ বছর বয়স পর্যন্ত মাম্পস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ছবি:শাটারস্টক

প্যারামিক্সো ভাইরাস অনেক সময় শরীরে ছড়িয়ে পড়ে নানা শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে মাম্পস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সেরোলজি বা এসভি অ্যান্টিজেন টেস্ট করে নেওয়া দরকার। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। যে কোনও ভাইরাল সংক্রমণ হলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। এ দিকে মাম্পস হলে চিবিয়ে খেতে অসুবিধে হয়। তাই চিকেন স্ট্যু বা স্যুপ, ডিম, গলা খিচুড়ি, ডাল-ভাত ইত্যাদি খেতে হবে।

আরও পড়ুন:গ্রিন টি খেলেই রোগা? কখন, কতটা খাবেন, সঠিক চা বাছবেন কীভাবে

মাম্পসের ব্যথা কমাতে জ্বরের ওষুধের পাশাপাশি ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। কানের পেছনে ও চোয়ালে বেশি ব্যথা করলে আইস প্যাক লাগানো যায়। ৭ থেকে ৮ দিন বিশ্রামে থাকা উচিত। মাম্পসের ভাইরাস অনেক সময় কানের ককলিয়ার অবধি পৌঁছে গিয়ে শোনার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে।

বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে মাম্পস অনেক সময় মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ১০,০০০ জন মাম্পস আক্রান্তর মধ্যে ৫ জনের শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার অনেক সময় মাম্পসের জীবাণুরা মস্তিষ্কে পৌঁছে গিয়ে মেনিনজাইটিস আর এনসেফেলাইটিস পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। যদি জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয় কিংবা রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় তখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যা? অবহেলায় ফল হতে পারে মারাত্মক

মাম্পসের ক্ষেত্রে ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর’ এই আপ্ত বাক্য মেনে চলা উচিত। মাম্পস এড়িয়ে চলার একমাত্র উপায় টিকা নেওয়া। বাচ্চাদের মাম্পসের টিকা দিতে ভুলবেন না। কোভিড ভাইরাস প্রতিরোধ করতে যেমন মাস্ককে সঙ্গী করে হাত ধোওয়ার নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে, তেমনই বাচ্চাদের টিকার অভ্যাসকে চিরসঙ্গী করতে হবে। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Virus Corona COVID-19 coronavirus Viral infection Fever

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}