বাড়ির ছোটদের সুষম খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ছবি: শাটারস্টক
সকালে উঠে স্কুলের তাড়া নেই, সাঁতার, আঁকা, নাচ ,গান বা টেবিল টেনিস খেলাও বন্ধ, নেই টিউশন যাওয়ার জন্য রেডি হওয়া। কোভিড যুগে সকলের সঙ্গে ছোটদের জীবনও আমূল বদলে গিয়েছে। বাড়িতে থাকার জন্যে এবং হাতে আগের থেকে বেশি সময় পাওয়ায়, ছোটদের সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার এই হল ঠিক সময়, বললেন ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ।
বেশ কিছু বাচ্চার সারা বছর পেটের গোলমাল, কোষ্ঠকাঠিন্য, সর্দি, হাঁচি, স্কিন র্যাশের মত সমস্যা লেগেই থাকে। ছোট থেকে সঠিক খাবারের অভ্যাস না করলে একদিকে বেড়ে উঠতে অসুবিধা হয়, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ঘাটতি থেকে যায়। ইন্দ্রাণী জানালেন যে পাঁচ বছর বয়স থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত (১১ বছর থেকে ১৮ বছর) বাচ্চাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ক্যালোরির চাহিদাও বাড়ে। এই বয়সে রোজকার ডায়েটে পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি এবং সি থাকা দরকার। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা মেটাতে রোজকার ডায়েটে সব রকম মরসুমি ফল ও সব্জি থাকা দরকার। শাক, সব্জি ও ফলে থাকা ফাইবারও শরীরের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অনেক মা বাবা বাচ্চাদের হেলথ ড্রিঙ্ক খাওয়ান। বাজারচলতি তথাকথিত নামী দামি হেলথ ড্রিঙ্কের পরিবর্তে বিভিন্ন বাদাম, ডাল, ফল, ডিম, চিকেন থেকে অনেক বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:কলকাতায় থাকলেও ট্রাম্পকে রেমডেসিভিরই দিতেন, বলছেন চিকিৎসকরা
বাচ্চাদের ডাল ভাত মাছের ঝোলের পাশাপাশি মুখরোচক খাবার দিতে অনুরোধ করলেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী। একটু ধৈর্য নিয়ে খাবার তৈরি করে দিলে একদিকে যেমন খেতে ভাল লাগবে অন্যদিকে বাইরের খাবারের জন্যে হা-হুতাশও কমবে।
সুবর্ণা জানালেন, মাঝে মাঝে চিকেনের স্টু বা মাছের ঝোল ভাতের পরিবর্তে চিকেনের ছোট টুকরো, লেবু, নুন মাখিয়ে অল্প তেলে ভেজে ক্যাপসিকাম, গাজর, বিনস দিয়ে চিকেন রাইস বানিয়ে দিলে মনের আনন্দে খাবে। এছাড়া মাঝের ঝোলের বদলে সাধারণ রুই বা কাতলা মাছের চপ ভেজে দিলেও মাছ খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করবে না।
আরও পড়ুন:প্রতি ৪ মিনিটে ১ জন মহিলার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে এ দেশেই!
এ ছাড়া বিভিন্ন ফলের টুকরোতে মধু ও অল্প ক্রিম দিয়ে ফ্রুট স্যালাড বানিয়ে দিলে মনের আনন্দে খাবে। বাইরের খাবারের জন্য বায়না করবে না। দুধ, ঘোল বা লস্যি, বাড়িতে তৈরি সুপ, ডাবের জল, ফল বা ফলের রস, পাতিলেবু চিনির সরবত, মধুর জল ইত্যাদি শরীরের জলের চাহিদা মেটাবে। চাউমিন বা পিৎজা কিংবা বেশি তেল দিয়ে হাক্কা চাউমিনের বদলে গাজর, বিনস, বরবটি, ক্যাপসিকাম ও টোম্যাটো দিয়ে ভেজিটেবল নুডলস যথেষ্ট পুষ্টিকর।
আরও পড়ুন:কোভিডের উপসর্গে জ্বরের দোসর হাত-পা ব্যথা? কী খেয়াল রাখতেই হবে?
মায়েরা ছোটদের রান্নায় সাহায্য করতে বলতে পারেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন খাবার খেলে একদিকে যেমন পুষ্টির ঘাটতি হবে না, তেমন খাবার খেতে একঘেয়েও লাগবে না বলে সুবর্ণার পরামর্শ। মেয়েদের ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সে আর ছেলেদের ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সে বাড়তি পুষ্টি প্রয়োজন। বয়ঃসন্ধির এই সময়টায় বাড়তি আয়রন, ক্যালসিয়াম-সহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবারের অভাবে সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই এই বয়সে ডায়েটের উপর বিশেষ নজর রাখা দরকার। যথাযথ ডায়েট না করার জন্যে এই বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত সমস্যা দেখা যায়, বললেন ইন্দ্রাণী।
পরিবারের বড়দের সঙ্গে ছোটদেরও বলুন রান্নায় সাহায্য করতে, তারা উৎসাহ পাবে। ফাইল ছবি।
প্রথমত শরীর ও মনের এনার্জির জন্যে প্রয়োজন কার্বোহাইড্রেট। এই বয়সের অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভাত রুটি খাওয়া খুব কমিয়ে দেয়। কেউ বাইরের রোল চাউমিন খেয়ে পেটের ১২টা বাজায়। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে ভরপেট খেয়ে যেতে পারলে ভাল হয়। পুষ্টিবিজ্ঞানের একটা মত হল সকালের জলখাবার খেতে হয় রাজার মত, আর রাতের খাবার গরীব প্রজার মত। সকালে কোনওদিন রুটি ডাল, রাজমা, ঘুগনি, খোসা-সহ ডালের তড়কা খাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন:করোনা আবহে নখ নিয়ে এই বিষয়গুলি মানতেই হবে
বয়ঃসন্ধিতে মেয়েদের রোজকার ডায়েটে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হয়। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে কম বয়সি মেয়েদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার খুব বেশি। রক্তের প্রয়োজনীয় হিমোগ্লোবিন শরীরের বিভিন্ন কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। এই হিমোগ্লোবিনের জন্যে রোজকার খাবারে আয়রন থাকা প্রয়োজন। বয়ঃসন্ধিতে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবারই লিন বডি মাস (LBM) বাড়ে, যা পরবর্তী কালে সার্বিক ভাবে ভাল থাকতে সাহায্য করে। ছেলেদের এই এলবিএমের পরিমাণ মেয়েদের থেকে বেশি হয়। এই বয়সে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন-চিকেন, মাছ, বিনস, ঘন সবুজ শাক, ডাল , বাদাম, ছাতুর সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন লেবু, আমলকি, আনারস ইত্যাদি খাওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন:কোভিড পরিস্থিতিতে বেড়েছে ঘাটতি, রক্তদান নিয়ে এই গুলি খেয়াল রাখতেই হবে
নিরামিষাশীদের আয়রনের ঘাটতি বেশি দেখা যায়। তাই বিভিন্ন ডাল, বিনসের সঙ্গে পর্যাপ্ত ফল খেতে হবে। আর হাড়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ দুধ, ছানা, দই খাওয়াও দরকার। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীর গড়ে তোলার পাশাপাশি নিয়ম করে শরীরচর্চা ও সাইকেল চালালে শরীর মন দুইই ভাল থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy